মুক্তিযোদ্ধের স্বপক্ষের সাহিত্যিক শওকত ওসমানের মৃত্যুবার্ষিকী আজ
Tweet
বাংলা সাহিত্যের খ্যাতনামা কথাশিল্পী ও শক্তিশালী লেখক শওকত ওসমানের মৃত্যুবার্ষিকী আজ ১৪ মে। সাহিত্যের বিভিন্ন ঘরানায় প্রায় ছয় দশক অত্যন্ত সাবলিলভাবে লেখালেখি করে তিনি বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেন। তিনি মূলত কথাশিল্পী। কিন্তু লিখেছেন সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায়।
উপন্যাস, গল্প, নাটক, প্রবন্ধ, রম্য, স্মৃতিকথা এবং শিশুদের জন্য লিখেছেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে লিখেছেন একটি কাব্যগ্রন্থ ‘শেখের সম্ভরা’।
বাংলা কথসাহিত্যে শওকত ওসমান বিশ শতকের শ্রেষ্ঠতম বাঙালিদের একজন। লেখালেখির মধ্যদিয়ে তিনি আজীবন সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদ বিরোধী চেতনার উন্মেষ ঘটিয়েছেন। প্রবাদ পুরুষ কথাশিল্পী শওকত ওসমান আজন্ম শোষকের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। তাঁর রচিত ‘ক্রীতদাসের হাসি’ সর্বকালে স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে গণজাগরণের দিশারী হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
শওকত ওসমান ১৯১৭ সালের ২ জানুয়ারি অবিভক্ত বাংলার পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার সবলসিংহপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রকৃত নাম শেখ আজিজুর রহমান। পিতার নাম শেখ মোহাম্দ ইয়াহিয়া। শওকত ওসমান ১৯৯৮ সালের ১৪ মে ঢাকায় ইন্তেকাল করেন।
ছাত্রজীবন থেকেই কথাশিল্পী শওকত ওসমান বৃটিশ শাসনবিরোধী ও বাঙালি জাতীয়তাবাদ, বাঙালি শিল্প, সাহিত্য-সংস্কৃতির বিভিন্ন ঘরানায় সািহত্য চর্চা ও লেখালেখি করেন। অধ্যয়ন করেন মক্তব, মাদ্রাসা ও কলেজে এবং কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪১ সালে বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন। তিনি পেশাগত জীবন শুরু করেন কলকাতা কর্পোরেশনে চাকরির মধ্যদিয়ে। পরে পশ্চিবঙ্গ সরকারের তথ্য বিভাগেও কিছুদিন চাকরি করেন। এমএ পাস করার পর কলকাতা সরকারি কমার্স কলেজে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৪৭ সালে চট্টগ্রাম কমার্স কলেজে প্রভাষক এবং পরবর্তীতে ঢাকা কলেজে শিক্ষকতা করেন । ১৯৭২ সালে ঢাকা কলেজ থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নেন। এরপর লেখালেখিই ছিলো তাঁর পেশা। ছাত্রাবস্থায় তিনি কলকতায় ‘কৃষক’ নামে একটি পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন।
১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর শওকত ওসমান ঢাকায় চলে আসেন। শুরু থেকেই তার গল্প ও উপন্যাসে সকল ধরণের অন্যায়, অবিচার, শোষণের বিরুদ্ধে গণমানুষের কথামালা এবং তাদের আশা-আকাংখা ওঠে আসে। ক্রমে পশ্চিমা শোষনের সমালোচনামূলক কথাসাহিত্যে তিনি বিপুল সৃষ্টিশীলতার স্বাক্ষর রাখেন। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী জান্তার অত্যাচার নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে তিনি লিখেন ‘জননী ’ এবং ‘জাহান্নাম থেকে বিদায়’ দুটি উপন্যাস। তিনি জীবিত থাকাকালেই ‘জননী’ উপন্যাস বিশ্বের অন্যতম সেরা প্রকাশনা সংস্থা প্যাংগুইন ইংরেজি ভাষায় প্রকাশ করে।
তার প্রকাশিত উপন্যাস ১৬, গল্পগ্রন্থ ৩, প্রবন্ধগন্থ ৩, নাটক ৪টি, রম্য ১, স্মৃতিকথা ১৫, অনুবাদ ১১, বিভিন্ন বিষয়ে সমগ্র ৭ এবং অন্যান্য বিষয়ে ৯টি গ্রন্থ রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ গল্পগ্রন্থ হচ্ছে, ঈশ্বরের প্রতিদ্বন্ধি, মনিব ও তার কুৃকুর, জন্ম যদি তব বঙ্গে, সাবেক কাহিনী, জুনু আপা ও অন্যান গল্প, উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে-জননী, ক্রীতদাসের হাসি, বনী আদম, রাজ উপাখ্যান, জাহান্নাম হতে বিদায়, পুরাতন খঞ্জর, জলাঙ্গী, দুই সৈনিক, নেকড়ে অরণ্যে, চোর সন্ধি, রাজা উপাখ্যান।
সাহিত্যে অবাদনের জন্য শওকত ওসমান আদমজী সাহিত্য পুরস্কার(১৯৬২), বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার(১৯৬৬), প্রেসিডেন্ট প্রাইড অব পাফরমেন্স পদক (১৯৭৬), একুশে পদক (১৯৮৩), স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার (১৯৯৭), ফিলিপস সাহিত্য সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৮), নাসিরউদ্দিন স্বর্ণপদক (১৯৮৬)সহ অসংখ্য পুরস্কার লাভ করেন।