দেড় লাখ টাকা রেখে রোগী ছাড়ল ‘কোভিড-১৯ হাসপাতাল’ মডার্ন
Tweet
অনেক দেনদরবারের পর ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা বিল দিয়ে ঢাকার আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নেওয়া সাইফুর রহমান, এমন অভিযোগ উঠেছে হাসপাতালটির বিরুদ্ধে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এখন বলছে, কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য তারা ‘ডেডিকেটেড’ ছিলেন ৩১ মে পর্যন্ত। ওই সময়ের চিকিৎসা ব্যয় সরকার দিলেও সাইফুর পরে যে দুদিন হাসপাতালে ছিলেন, সেজন্য তাকে বিল দিতে হবে। অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হয়ে থাকলে তাকে তা ফেরত দেওয়া হবে।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২৩ মার্চ আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা ৩৬ বছর বয়সী সাইফুর। সেরে ওঠার পর ২ জুন ছাড়পত্র দেওয়ার সময় ১ লাখ ৭০ হাজার ৮৭৫ টাকার বিল ধরিয়ে দেওয়া হয় তাকে।
মঙ্গলবার বিকালে চিকিৎসকের ছাড়পত্র মিললেও বিলের জন্য হাসপাতাল সাইফুরকে ছাড়ছিল না।
সাইফুরের ছোট ভাই আরিফুর রহমান বুধবার সকালে বলেন, বহু কষ্টে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা জোগাড় করে তা দিয়ে মঙ্গলবার মধ্যরাতে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন তারা।
“আমাদের কাছে তো এত টাকা নাই। আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে ধার করব সেই উপায়ও নাই। পরে অনেকের কাছে অনুরোধ করে দেড় লাখ টাকা জোগাড় করতে পেরেছি।
“বিল দেওয়ার সময় তারা বলেছে ৫ হাজার টাকা কম রাখতে পারবে। কিন্তু আমরা বলেছি, দেড় লাখের বেশি টাকা আমাদের কাছে নেই। পরে বিলিং কর্মকর্তারা তাদের ঊর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে দেড় লাখ টাকা রাখেন। রাত ১২টার পর বাসায় ফিরেছি।”
রাজধানীতে যে ১৩টি সরকারি বেসরকারি হাসপাতাল কোভিড-১৯ চিকিৎসা দিচ্ছে, তার মধ্যে ধানমণ্ডির আনোয়ার খান মডার্ন একটি।
কোভিড-১৯ সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে সরকার কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালেও রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা নেয়। এজন্য মে মাস থেকে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতাল ‘কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড’ হাসপাতাল হিসেবে কার্যক্রম শুরু করে। সেখানে ২০০ কোভিড-১৯ রোগীকে চিকিৎসা দেওয়ার সুবিধা রয়েছে।
বেসরকারি এক কোম্পানিতে কর্মরত সাইফুর মঙ্গলবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, একটি হাসপাতালে পরীক্ষায় গত ২১ মে তার করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ে। হৃদস্পন্দন বেশি থাকায় ২৩ মে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি।
‘ডেডিকেটেড’ হাসপাতালে কোভিড-১৯ চিকিৎসার খরচ সরকার দিচ্ছে, এটা জেনেই আনোয়ার খান মডার্নে ভর্তি হয়েছিলেন সাইফুর। কিন্তু মঙ্গলবার যে বিল তাকে দেওয়া হয়, তা ছিল তার সাধ্যের বাইরে।
সাইফুর জানান, ভর্তি হওয়ার পর থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত তার রক্তের দুটি পরীক্ষা এবং তিনটি এক্সরে হয়েছে। আর হাসপাতাল থেকে সরবরাহ করেছে শুধু নাপা ট্যাবলেট।
“আমার কোনো অক্সিজেনেরও প্রয়োজন হয়নি…. কিন্তু এত টাকা বিল করে দিয়েছে।”
২ জুন পর্যন্ত চিকিৎসকের বিল বাবদ ১৮ হাজার ৭০০ টাকা, হাসপাতালের বিল ১ লাখ ১৪ হাজার ৫৭০ টাকা, পরীক্ষার বিল ১৯ হাজার ৪৭৫ টাকা, ওষুধের বিল ৫ হাজার টাকা এবং ১২ হাজার ৯০৩ টাকা সার্ভিস চার্জ ধরে ওই বিল সাইফুরকে ধরিয়ে দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর রহমান খান রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কোভিড-১৯ নির্ধারিত হাসপাতালগুলোর বিল সরকার দেবে।
“এখানে রোগীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলো কমপ্লিটলি ফ্রি। আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালেও চিকিৎসা ফ্রি। যখনই হাসপাতালটা সরকার নিল, তখন তো আনোয়ার খানকে টাকাটা সরকার দেবে। রোগীর ট্রিটমেন্ট হবে ফ্রি।”
কিন্তু আনোয়ার খান মর্ডান হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক এহতেশামুল হক রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মে মাসেই সরকারের সঙ্গে তাদের চুক্তি শেষ হয়ে গেছে। তবে ওই রোগীকে কীভাবে ছাড় দেওয়া যায়, সে ব্যবস্থা তারা করবেন।
অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর পরে বলেন, “আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতাল সরকারের সঙ্গে করা চুক্তি থেকে বের হয়ে যেতে চাইছে। তারা চাইলে মিনিস্ট্রিও হয়ত ছেড়ে দেবে। কিন্তু ৩১ মে পর্যন্ত কোনো বিল নেওয়া চলবে না। বিল ধরলে ১ জুন থেকে বিল নেবে। এই কয়দিন তারা সরকারি হিসাবে চলেছে।”
পরে অধ্যাপক এহতেশামুল হক বলেন, “সরকারের সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, করোনা আক্রান্ত রোগীর ৩১ মে পর্যন্ত চিকিৎসার কোনো টাকা নেব না। যদি কারও নেওয়া হয়ে থাকে, তা ফেরত দেওয়া হবে।”
অতিরিক্ত টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য কেউ যোগাযোগ করেছিল কি না জানতে চাইলে সাইফুরের ভাই আরিফুর বুধবার সকালে বলেন, “হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ টাকা ফেরত দেবে বলে গণমাধ্যমে জেনেছি। একটু পরে আমরা সেখানে যাব।”
আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন খান বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক। তিনি লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য।