বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবী পর্যটন খাত সংশ্লিষ্টদের
Tweet
৬ জুন সন্ধ্যা ৭টায় পর্যটনখাতে বাজেট বিষয়ক এক আলোচনাসভা অনলাইনে অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ সোসাইটি ফর ট্যুরিজম ইনোভেশন আয়োজিত এই আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের সিইও জনাব জাবেদ আহমেদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে আলোচনায় অংশ নেন ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর প্রেসিডেন্ট জনাব মোহাম্মদ রাফিউজ্জামান, এসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্ট অব বাংলাদেশ এর প্রেসিডেন্ট জনাব মনসুর আহমেদ কালাম, ট্যুরিজম ডেভলপারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর প্রেসিডেন্ট জনাব সৈয়দ হাবিব আলী, বিডি ইনবাউন্ড এর প্রেসিডেন্ট জনাব, রেজাউল ইকরাম, ট্যুরিজম রিসোর্ট ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর প্রেসিডেন্ট জনাব খবির উদ্দীন আহমেদ ও বাংলাদেশ ট্রাভেল রাইটার্স এসোসিয়েশন এর প্রেসিডেন্ট জনাব আশরাফুজ্জামান উজ্জল।
বাংলাদেশ সোসাইটি ফর ট্যুরিজম ইনোভেশন- এর চেয়ারম্যান জনাব মোঃ সাইফুল্লার রাব্বীর সভাপতিত্বে পর্যটন খাতে বাজেট বিষয়ে আলোচনা অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন প্রাইমেশিয়া ইউনিভার্সিটির ইন্টারন্যাশনাল ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজম্যান্ট বিভাগের চেয়ারম্যান জনাব ড. এ আর খান এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন সোসাইটির সহ-সভাপতি জনাব জাহাঙ্গীর আলম শোভন। সভায় খাতে স্টেকহোল্ডারগণ কেমন বাজেট চান এই বিষয়ে তাদের বিভিন্ন দাবী দাওয়া উঠে আসে।
বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের সিইও জনাব জাবেদ আহমেদ বলেন, শুধু যে কোভিড ১৯ এর কারণে পর্যটন সেক্টর সবার আগে এবং সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তা নয় এই সেক্টরের সমস্যা বহুদিনের। বর্তমানে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও আগে থেকে পিছিয়ে থাকায় এখনো এই সেক্টরে বহু ঘাটতি রয়েছে। বিশেষ করে আইডেন্টিটি ক্রাইসিস রয়েছে। ফলে এই সেক্টরে যেমন কাংখিত বিনিয়োগ হচ্ছেনা তেমনি ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ প্রদানের জন্যও এগিয়ে আসছেনা। অথচ এখনো এই খাত অসামান্য সম্ভাবনাময় একটি খাত। কর্মসংস্থানসৃষ্টি, অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার করা, দেশকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরা এবং সার্বিক উন্নয়নে অবদান রাখা সবই পর্যটনের মাধ্যমে সম্ভব। তিনি আরো বলেন, পর্যটনখাতের উন্নয়নের জন্য গুচ্ছ পদক্ষেপের চেয়ে বেশী প্রয়োজন মাস্টার প্লান বা সমন্বিত পরিকল্পনা। সরকার সে দিকেই অগ্রসর হচ্ছে। দেশকে যথোপযুক্তভাবে ব্রান্ডিং করা এবং পর্যটনখাতে দক্ষ জনবল তৈরী করতে প্রশিক্ষণ প্রদান করাসহ বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা শীঘ্রই বাস্তবায়িত হবে।
ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর প্রেসিডেন্ট জনাব মোহাম্মদ রাফিউজ্জামান বলেন, আমাদের জাতীয় বাজেট পর্যটন বান্ধব নয়, আমরা চাই পর্যটনবান্ধব এবং কর্মপরিকল্পনাভিত্তিক সমন্বিত বাজেট। বিশেষ করে এভিয়েশনখাতে পর্যটনের বাজেটের একটা বড় অংশ ব্যয় হয়। অন্যান্য খাত কোনো প্রাধান্য পায়না। সেসব খাতে বরাদ্ধও যথেষ্ঠ নয়। আভ্যন্তরীণ পর্যটন যেহেতু ব্যাপক সম্ভাবনাময় এবং বিগত বছরগুলোতে কয়েকগুন প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে তাই এই খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবী জানান তিনি।
ট্যুরিজম ডেভলপারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর প্রেসিডেন্ট জনাব সৈয়দ হাবিব আলী বলেন, করোনা সংক্রমণে এই খাতে ১১ হাজার কোটি টাকার বিশাল ক্ষতির মধ্যে পড়েছে। এরমধ্যে এভিয়েশন সেক্টরে ৪ হাজার কোটি টাকা বাকী ৭ হাজার কোটি টাকা অন্যান্য সেক্টরে। এই ৭ হাজার কোটি টাকার বিশাল ক্ষতির ধাক্কা সামাল দেয়ার মতো অবস্থা ইন্ডাস্ট্রির নেই। তাই এক্ষেত্রে সরকারী প্রনোদনা জরুরী হয়ে পড়েছে। সঠিক সহযোগিতা না পেলে পর্যটনখাত ঠিক সময়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেনা। এই বার্তাটি সরকারের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে বিশ্বের বিমান সংস্থাগুলোর কাছে আমাদের দেশের বিমানবন্দর নিরাপদ নয়, তাদের মতে এতে স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে। তাই জরুরী ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণের মাধ্যমে বিমানবন্দরকে ঝুঁকিমুক্ত করার দাবী জানান তিনি।
ট্যুরিজম রিসোর্ট ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর প্রেসিডেন্ট জনাব খবির উদ্দীন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে ট্যুরিজম ভিত্তিক রিসোর্টগুলো আভ্যন্তরীণ পর্যটন বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখছে। বর্তমানে এই সেক্টরের ব্যবসা শতভাগ বন্ধ থাকা সত্বেও তারা কর্মীদের বেতন-ভাতা চালু রেখেছেন। এটা তারা করছেন পুঁজি ভেঙ্গে বা সম্পদ বিক্রি করে। তাই তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে সরকারকে। এজন্য অন্তত ২ বছরের জন্য ভ্যাট কমিয়ে ৪% শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে। সম্পূরক শুল্কসমূহ মওকুপ করতে হবে। হোটেল ও রিসোর্টকে সরকার ঘোষিত নগদ প্রণোদনার আওতায় আনতে হবে। রিসোর্টগুলো তাদের নিজস্ব জমিতে প্রচুর কৃষিপণ্য উৎপাদন করে থাকে এই বিবেচনায় তাদেরকে কমসুদে ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
বিডি ইনবাউন্ড এর প্রেসিডেন্ট জনাব রেজাউল ইকরাম বলেন, আমাদের পর্যটনের উন্নয়ন হচ্ছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই কিন্তু এই উন্নয়ন যথার্থ ও যুগোপযোগী নয়। বিশেষ করে ট্যুরিজম সাইটগুলোর ব্যাপক উন্নয়ন দরকার। বর্তমান যেসব সাইট রয়েছে সেগুলোতে সৌন্দর্যবর্ধন, অবকাঠামো ও বিনোদন উপাদান যেমনি প্রয়োজন তেমনি নতুন নতুন সাইট সংযোজন করতে হবে। একটি পরিকল্পনাভিত্তিক বাজেট প্রণয়ন করতে হবে। পর্যটনখাতে যে পরিমাণ ক্ষতির মুখে পড়েছে একে বাঁচিয়ে রাখার জন্য প্রণোদনাও জরুরী হয়ে পড়েছে।
বাংলাদেশ ট্রাভেল রাইটার্স এসোসিয়েশন এর প্রেসিডেন্ট জনাব আশরাফুজ্জামান উজ্জল বলেন, পৃথিবী এগিয়ে চলেছে তার সাথে তাল মিলিয়ে পর্যটনেও আমাদের ইনোভেশন আনতে হবে। এবং সরকার বিভিন্ন নীতির মাধ্যমে এই খাতের উন্নয়নে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। যেমন আমাদের জনপ্রিয় পর্যটন স্থানগুলোতে ভ্রমণের জন্য ট্যুর অপারেটর সেবা বাধ্যতামূলক করলে যে পরিমাণ দেশীয় পর্যটক রয়েছে তাদের সেবা দিয়ে মাধ্যমে ট্যুর অপারেটরগণ ঘুরে দাঁড়াতে পারে।
টোয়াবের ডিরেক্টর লিগ্যাল ম্যাটার্স জনাব মো. জালাল উদ্দীন টিপু বলেন, সবকিছু বন্ধ রাখার মাঝে আমরা সমাধান খুজে পাচ্ছি না। তাই পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে পর্যটন স্পটগুলো খুলে দেয়া উচিত। এবং সরকার ঘোষিত প্রনোদনা দ্রুত ক্ষতিগ্রস্থদের কাছে পৌঁছে দেয়া উচিত। তা না হলে প্রতিষ্ঠানগুলো টিকে থাকতে পারবেনা।
সীমিত পর্যায়ে পর্যটন স্পট খুলে দেয়ার দাবী জানান টোয়াবের প্রথম সহসভাপতি জনাব শিবলুল আজম কোরেশি। তিনি বলেন, ট্যুরিজমকে স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় দেয়া হোক। তারমতে, জিডিপিতে এ ট্যুরিজম এর কন্ট্রিবিউশন এর জন্য আলাদা গণ্য করা উচিত।
টোয়াবের ফিন্যান্স ডিরেক্টর জনাব মনিরুজ্জামান মাসুম এই সময়ে পর্যটন উদ্যোক্তাদের জন্য ডিজিটাল প্রশিক্ষণ এবং কর্মীদের জন্য দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণের উপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি জাতীয় বাজেটে পর্যটন খাতের বরাদ্দের ক্ষেত্রে সমন্বয় বিধাদের আবেদন জানান।
টোয়াবের ডিরেক্টর মিডিয়া এন্ড পাবলিকেশন্স জনাব মোঃ শহীদ উল্যাহ পর্যটন খাতে ১১,৮০০ টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে উল্লেখ করে বলেন এখাতে অন্তত ৬,৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হলে অন্তত কোনোরকম টিকে থাকতে পারবে।
ট্যাক্স মওকুফ করা। দক্ষ জনশক্তিকে ধরে রাখার জন্য প্রণোদনার দাবী জানান টোয়াবের ডিরেক্টর ট্রেড এন্ড ফেয়ার জনাব জনাব আনোয়ার হোসাইন। এছাড়া বক্তারা সরকার ও অর্থমন্ত্রণালয়ের কাছে পর্যটনখাতের অবদান এই খাতে ক্ষতি এবং এই মুহুর্তে এই খাতের চাহিদার বিস্তারিত বিবরণ জানিয়ে সম্মিলিত প্রতিবেদন পেশ করারও দাবী জানান।
বাংলাদেশ সোসাইটি ফর ট্যুরিজম ইনোভেশনের সহ-সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম শোভন বলেন, আমরা ইন্ডাস্ট্রির সকল পক্ষকে নিয়ে একসাথে কাজ করতে চাই এবং দেশের জন্য একসাথে অবদান রাখতে চাই। প্রয়োজনীয় গবেষনা ও কনটেন্ট তৈরী ছাড়াও পর্যটন পেশাজীবিদের উন্নয়নে আমাদের পথচলা অব্যাহত থাকবে। বাজেট আলোচনার সমন্বিত প্রতিবেদন সরকারের কাছে পেশ করা হবে বলে জানান তিনি। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধি ও পর্যটনখাত সংশ্লিষ্ঠ ব্যক্তিবর্গ সংযুক্ত ছিলেন।
বাংলাদেশ সোসাইটি ফর ট্যুরিজম ইনোভেশনের চেয়ারম্যান জনাব মোঃ সাইফুল্লার রাব্বী বলেন,
পর্যটন শিল্পকে টিকিয়ে রাখার জন্য পর্যটন খাতের সাথে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডার ও পেশাজীবীদের প্রতি আরো যত্নশীল হতে হবে।পর্যটন খাতের সমস্যা ও কিভাবে সেগুলো থেকে নিজেদের উত্তরণ করা যায় তার জন্য পর্যটন গবেষণার প্রতি গুরুত্ব দিতে বলেন।
গতকাল ৬ জুন সন্ধ্যা ৭টায় পর্যটনখাতে বাজেট বিষয়ক এক আলোচনাসভা অনলাইনে অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ সোসাইটি ফর ট্যুরিজম ইনোভেশন আয়োজিত এই আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের সিইও জনাব জাবেদ আহমেদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে আলোচনায় অংশ নেন ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর প্রেসিডেন্ট জনাব মোহাম্মদ রাফিউজ্জামান, এসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্ট অব বাংলাদেশ এর প্রেসিডেন্ট জনাব মনসুর আহমেদ কালাম, ট্যুরিজম ডেভলপারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর প্রেসিডেন্ট জনাব সৈয়দ হাবিব আলী, বিডি ইনবাউন্ড এর প্রেসিডেন্ট জনাব, রেজাউল ইকরাম, ট্যুরিজম রিসোর্ট ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর প্রেসিডেন্ট জনাব খবির উদ্দীন আহমেদ ও বাংলাদেশ ট্রাভেল রাইটার্স এসোসিয়েশন এর প্রেসিডেন্ট জনাব আশরাফুজ্জামান উজ্জল।
বাংলাদেশ সোসাইটি ফর ট্যুরিজম ইনোভেশন- এর চেয়ারম্যান জনাব মোঃ সাইফুল্লার রাব্বীর সভাপতিত্বে পর্যটন খাতে বাজেট বিষয়ে আলোচনা অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন প্রাইমেশিয়া ইউনিভার্সিটির ইন্টারন্যাশনাল ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজম্যান্ট বিভাগের চেয়ারম্যান জনাব ড. এ আর খান এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন সোসাইটির সহ-সভাপতি জনাব জাহাঙ্গীর আলম শোভন। সভায় খাতে স্টেকহোল্ডারগণ কেমন বাজেট চান এই বিষয়ে তাদের বিভিন্ন দাবী দাওয়া উঠে আসে।
বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের সিইও জনাব জাবেদ আহমেদ বলেন, শুধু যে কোভিড ১৯ এর কারণে পর্যটন সেক্টর সবার আগে এবং সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তা নয় এই সেক্টরের সমস্যা বহুদিনের। বর্তমানে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও আগে থেকে পিছিয়ে থাকায় এখনো এই সেক্টরে বহু ঘাটতি রয়েছে। বিশেষ করে আইডেন্টিটি ক্রাইসিস রয়েছে। ফলে এই সেক্টরে যেমন কাংখিত বিনিয়োগ হচ্ছেনা তেমনি ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ প্রদানের জন্যও এগিয়ে আসছেনা। অথচ এখনো এই খাত অসামান্য সম্ভাবনাময় একটি খাত। কর্মসংস্থানসৃষ্টি, অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার করা, দেশকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরা এবং সার্বিক উন্নয়নে অবদান রাখা সবই পর্যটনের মাধ্যমে সম্ভব। তিনি আরো বলেন, পর্যটনখাতের উন্নয়নের জন্য গুচ্ছ পদক্ষেপের চেয়ে বেশী প্রয়োজন মাস্টার প্লান বা সমন্বিত পরিকল্পনা। সরকার সে দিকেই অগ্রসর হচ্ছে। দেশকে যথোপযুক্তভাবে ব্রান্ডিং করা এবং পর্যটনখাতে দক্ষ জনবল তৈরী করতে প্রশিক্ষণ প্রদান করাসহ বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা শীঘ্রই বাস্তবায়িত হবে।
ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর প্রেসিডেন্ট জনাব মোহাম্মদ রাফিউজ্জামান বলেন, আমাদের জাতীয় বাজেট পর্যটন বান্ধব নয়, আমরা চাই পর্যটনবান্ধব এবং কর্মপরিকল্পনাভিত্তিক সমন্বিত বাজেট। বিশেষ করে এভিয়েশনখাতে পর্যটনের বাজেটের একটা বড় অংশ ব্যয় হয়। অন্যান্য খাত কোনো প্রাধান্য পায়না। সেসব খাতে বরাদ্ধও যথেষ্ঠ নয়। আভ্যন্তরীণ পর্যটন যেহেতু ব্যাপক সম্ভাবনাময় এবং বিগত বছরগুলোতে কয়েকগুন প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে তাই এই খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবী জানান তিনি।
ট্যুরিজম ডেভলপারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর প্রেসিডেন্ট জনাব সৈয়দ হাবিব আলী বলেন, করোনা সংক্রমণে এই খাতে ১১ হাজার কোটি টাকার বিশাল ক্ষতির মধ্যে পড়েছে। এরমধ্যে এভিয়েশন সেক্টরে ৪ হাজার কোটি টাকা বাকী ৭ হাজার কোটি টাকা অন্যান্য সেক্টরে। এই ৭ হাজার কোটি টাকার বিশাল ক্ষতির ধাক্কা সামাল দেয়ার মতো অবস্থা ইন্ডাস্ট্রির নেই। তাই এক্ষেত্রে সরকারী প্রনোদনা জরুরী হয়ে পড়েছে। সঠিক সহযোগিতা না পেলে পর্যটনখাত ঠিক সময়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেনা। এই বার্তাটি সরকারের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে বিশ্বের বিমান সংস্থাগুলোর কাছে আমাদের দেশের বিমানবন্দর নিরাপদ নয়, তাদের মতে এতে স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে। তাই জরুরী ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণের মাধ্যমে বিমানবন্দরকে ঝুঁকিমুক্ত করার দাবী জানান তিনি।
ট্যুরিজম রিসোর্ট ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর প্রেসিডেন্ট জনাব খবির উদ্দীন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে ট্যুরিজম ভিত্তিক রিসোর্টগুলো আভ্যন্তরীণ পর্যটন বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখছে। বর্তমানে এই সেক্টরের ব্যবসা শতভাগ বন্ধ থাকা সত্বেও তারা কর্মীদের বেতন-ভাতা চালু রেখেছেন। এটা তারা করছেন পুঁজি ভেঙ্গে বা সম্পদ বিক্রি করে। তাই তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে সরকারকে। এজন্য অন্তত ২ বছরের জন্য ভ্যাট কমিয়ে ৪% শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে। সম্পূরক শুল্কসমূহ মওকুপ করতে হবে। হোটেল ও রিসোর্টকে সরকার ঘোষিত নগদ প্রণোদনার আওতায় আনতে হবে। রিসোর্টগুলো তাদের নিজস্ব জমিতে প্রচুর কৃষিপণ্য উৎপাদন করে থাকে এই বিবেচনায় তাদেরকে কমসুদে ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
বিডি ইনবাউন্ড এর প্রেসিডেন্ট জনাব রেজাউল ইকরাম বলেন, আমাদের পর্যটনের উন্নয়ন হচ্ছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই কিন্তু এই উন্নয়ন যথার্থ ও যুগোপযোগী নয়। বিশেষ করে ট্যুরিজম সাইটগুলোর ব্যাপক উন্নয়ন দরকার। বর্তমান যেসব সাইট রয়েছে সেগুলোতে সৌন্দর্যবর্ধন, অবকাঠামো ও বিনোদন উপাদান যেমনি প্রয়োজন তেমনি নতুন নতুন সাইট সংযোজন করতে হবে। একটি পরিকল্পনাভিত্তিক বাজেট প্রণয়ন করতে হবে। পর্যটনখাতে যে পরিমাণ ক্ষতির মুখে পড়েছে একে বাঁচিয়ে রাখার জন্য প্রণোদনাও জরুরী হয়ে পড়েছে।
বাংলাদেশ ট্রাভেল রাইটার্স এসোসিয়েশন এর প্রেসিডেন্ট জনাব আশরাফুজ্জামান উজ্জল বলেন, পৃথিবী এগিয়ে চলেছে তার সাথে তাল মিলিয়ে পর্যটনেও আমাদের ইনোভেশন আনতে হবে। এবং সরকার বিভিন্ন নীতির মাধ্যমে এই খাতের উন্নয়নে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। যেমন আমাদের জনপ্রিয় পর্যটন স্থানগুলোতে ভ্রমণের জন্য ট্যুর অপারেটর সেবা বাধ্যতামূলক করলে যে পরিমাণ দেশীয় পর্যটক রয়েছে তাদের সেবা দিয়ে মাধ্যমে ট্যুর অপারেটরগণ ঘুরে দাঁড়াতে পারে।
টোয়াবের ডিরেক্টর লিগ্যাল ম্যাটার্স জনাব মো. জালাল উদ্দীন টিপু বলেন, সবকিছু বন্ধ রাখার মাঝে আমরা সমাধান খুজে পাচ্ছি না। তাই পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে পর্যটন স্পটগুলো খুলে দেয়া উচিত। এবং সরকার ঘোষিত প্রনোদনা দ্রুত ক্ষতিগ্রস্থদের কাছে পৌঁছে দেয়া উচিত। তা না হলে প্রতিষ্ঠানগুলো টিকে থাকতে পারবেনা।
সীমিত পর্যায়ে পর্যটন স্পট খুলে দেয়ার দাবী জানান টোয়াবের প্রথম সহসভাপতি জনাব শিবলুল আজম কোরেশি। তিনি বলেন, ট্যুরিজমকে স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় দেয়া হোক। তারমতে, জিডিপিতে এ ট্যুরিজম এর কন্ট্রিবিউশন এর জন্য আলাদা গণ্য করা উচিত।
টোয়াবের ফিন্যান্স ডিরেক্টর জনাব মনিরুজ্জামান মাসুম এই সময়ে পর্যটন উদ্যোক্তাদের জন্য ডিজিটাল প্রশিক্ষণ এবং কর্মীদের জন্য দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণের উপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি জাতীয় বাজেটে পর্যটন খাতের বরাদ্দের ক্ষেত্রে সমন্বয় বিধাদের আবেদন জানান।
টোয়াবের ডিরেক্টর মিডিয়া এন্ড পাবলিকেশন্স জনাব মোঃ শহীদ উল্যাহ পর্যটন খাতে ১১,৮০০ টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে উল্লেখ করে বলেন এখাতে অন্তত ৬,৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হলে অন্তত কোনোরকম টিকে থাকতে পারবে।
ট্যাক্স মওকুফ করা। দক্ষ জনশক্তিকে ধরে রাখার জন্য প্রণোদনার দাবী জানান টোয়াবের ডিরেক্টর ট্রেড এন্ড ফেয়ার জনাব জনাব আনোয়ার হোসাইন। এছাড়া বক্তারা সরকার ও অর্থমন্ত্রণালয়ের কাছে পর্যটনখাতের অবদান এই খাতে ক্ষতি এবং এই মুহুর্তে এই খাতের চাহিদার বিস্তারিত বিবরণ জানিয়ে সম্মিলিত প্রতিবেদন পেশ করারও দাবী জানান।
বাংলাদেশ সোসাইটি ফর ট্যুরিজম ইনোভেশনের সহ-সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম শোভন বলেন, আমরা ইন্ডাস্ট্রির সকল পক্ষকে নিয়ে একসাথে কাজ করতে চাই এবং দেশের জন্য একসাথে অবদান রাখতে চাই। প্রয়োজনীয় গবেষনা ও কনটেন্ট তৈরী ছাড়াও পর্যটন পেশাজীবিদের উন্নয়নে আমাদের পথচলা অব্যাহত থাকবে। বাজেট আলোচনার সমন্বিত প্রতিবেদন সরকারের কাছে পেশ করা হবে বলে জানান তিনি। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধি ও পর্যটনখাত সংশ্লিষ্ঠ ব্যক্তিবর্গ সংযুক্ত ছিলেন।
বাংলাদেশ সোসাইটি ফর ট্যুরিজম ইনোভেশনের চেয়ারম্যান জনাব মোঃ সাইফুল্লার রাব্বী বলেন,
পর্যটন শিল্পকে টিকিয়ে রাখার জন্য পর্যটন খাতের সাথে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডার ও পেশাজীবীদের প্রতি আরো যত্নশীল হতে হবে।পর্যটন খাতের সমস্যা ও কিভাবে সেগুলো থেকে নিজেদের উত্তরণ করা যায় তার জন্য পর্যটন গবেষণার প্রতি গুরুত্ব দিতে বলেন।