সেনজেন ভিসা বিস্তারিত
Tweet
ইউরোপের কয়েকটি দেশ তাদের অভ্যন্তরীণ যাতায়াতকে সহজ করার উদ্দেশ্যে ১৯৮৫ সালে লুক্সেমবার্গের সেনজেন শহরে একটি চুক্তি সাক্ষর করে। এই চুক্তির আওতাভুক্ত দেশগুলোকে সেনজেন এলাকা এবং প্রদানকৃত ভিসাকে সেনজেন ভিসা (Schengen Visa) বলা হয়ে থাকে। বর্তমানে ইউরোপের ২৬টি দেশ সেনজেন অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। সেনজেন ভিসা নিয়ে কোনো ঝামেলা ছাড়াই ইউরোপের ২৬ টি দেশে ভ্রমণে যাওয়া যায়।
বাংলাদেশ থেকে সেনজেন ভিসা নিয়ে সর্বোচ্চ ৯০ দিন ইউরোপে অবস্থান করতে পারবেন এক্ষেত্রে ভিসার মেয়াদ হবে ৬ মাস। নির্দিষ্ট মেয়াদে সেনজেন ভিসা ব্যবহার করে একাধিকবার সেনজেন এলাকায় প্রবেশ করা গেলেও কোন অবস্থাতেই সর্বমোট ৯০ দিনের বেশি সেখানে অবস্থান করা যাবে না। সেনজেন ভিসা নেয়ার ক্ষেত্রে গন্তব্য উল্লেখ করতে হবে। আর যে দেশে যাবেন সেই দেশের দূতাবাস থেকে ভিসা সংগ্রহ করতে হয়।
ভিসা আবেদন করবেন যেভাবে
মনে রাখবেন, ভিসা আবেদন ফরমের প্রতিটি তথ্যের ঘর নির্ভুলভাবে পূরণ করতে হবে। কোন তথ্যের ঘর খালি কিংবা অসম্পূর্ণ থাকলে অথবা ভুল তথ্য দিলে ভিসা আবেদন গ্রহনযোগ্য হবে না। ১ কপি আবেদন ফরম অবশ্যই তারিখ ও সাক্ষর সহযোগে জমা করতে হবে।
ভিসা আবেদনের সাথে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র-
ভ্রমণ শেষ হওয়ার পরও অন্তত ছয় মাস মেয়াদ থাকবে এমন পাসপোর্ট জমা দিতে হবে।
সাদা পটভূমিতে সদ্য তোলা দুই কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি। ছবিতে অবশ্যই পুরো মুখমণ্ডল আসতে হবে। (এক্ষেত্রে অভিজ্ঞ স্টুডিওর সাহায্য নিলে ভালো)।
পাসপোর্টের ব্যক্তিগত তথ্যের পৃষ্ঠাগুলোর পরিষ্কার ফটোকপি সংযুক্ত করতে হবে।
প্রতিটি কাগজের মূল কপির সাথে একটি করে ফটোকপিও জমা দিতে হবে।
কোন ডকুমেন্ট বাংলায় থাকলে বাংলার সাথে সাথে সেই ডকুমেন্টের ইংরেজি অনুবাদও যুক্ত করতে হবে।
স্বাস্থ্য বীমা করতে হবে (নূন্যতম ৩০ হাজার ইউরো মূল্যমানের)।
ভ্রমণ ভিসার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র-
কোন কোন জায়গায় ভ্রমণ করবেন সেগুলোর বিস্তারিত তথ্য তথা ট্রাভেল আইটিনিরারি।
বিগত তিন মাসের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাব বিবরণ। এবং ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেট।
প্রযোজ্য ক্ষেত্রে হোটেল বুকিং তথ্য (হোটেল বুকিং কনফার্মেশনের ই-মেইল প্রিন্ট আউট গৃহীত হয় না।)
প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ম্যারেজ সার্টিফিকেট, বার্থ সার্টিফিকেট এবং সন্তান সন্ততির তথ্য।
বিজনেস ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র-
বাংলাদেশের যে প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির পক্ষ থেকে ভ্রমণে যাচ্ছেন সেই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ভ্রমণের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করে লিখা চিঠি জমা দিতে হবে। প্রতিষ্ঠানের মালিকের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে।
কোম্পানির পাঠানো আমন্ত্রণপত্রের মূলকপি এবং আমন্ত্রণপত্র অবশ্যই ইংরেজি বা সেদেশের ভাষায় হতে হবে।
ট্রেড লাইসেন্স এবং কোম্পানির বিগত তিন মাসের ব্যাংক হিসাব বিবরণী।
কোম্পানির সার্টিফিকেট অব ইনকর্পোরেশন অথবা মেমোরেন্ডাম এন্ড আর্টিকেলস অব এসোসিয়েশন (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)।
বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের বাইরে লেনদেনের তথ্য (যদি প্রযোজ্য হয়)।
ম্যারেজ সার্টিফিকেট, বার্থ সার্টিফিকেট এবং সন্তান সন্ততির তথ্য (যদি প্রযোজ্য হয়)।
সেনজেন দেশগুলো আয়োজিত বাণিজ্য মেলায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে আরও কিছু অতিরিক্ত কাগজপত্র প্রয়োজন হয়ে। যেমন: হোটেলের ঠিকানাসহ হোটেল রিজার্ভেশনের তথ্য এবং স্টল বরাদ্দ হয়ে থাকলে তার এক্সিবিটর পাস।
কারও সাথে দেখা করতে হলে যেসব কাগজপত্র প্রয়োজন-
যার সাথে দেখা করতে যাওয়া হবে তার স্বাক্ষরিত গ্যারান্টর ফরম।
অন্তত বিগত তিন মাসের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাব বিবরণ।
যার সাথে দেখা করতে যাবেন তার সাথে সম্পর্কের প্রমাণপত্র।
ফ্লাইট রিজার্ভেশন কপি।
প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ম্যারেজ সার্টিফিকেট, বার্থ সার্টিফিকেট এবং সন্তান সন্ততির তথ্য।
প্রযোজ্য ক্ষেত্রে হোটেল বুকিং তথ্য (হোটেল বুকিং কনফার্মেশনের ই-মেইল প্রিন্ট আউট গৃহীত হয় না।)
শিশুদের ক্ষেত্রে
বাবা-মা বা বৈধ অভিভাবকের অনুমতিপত্র এবং শিশুদের ভিসা আবেদনের সময় অভিভাবকে অবশ্যই দূতাবাসে উপস্থিত হতে হবে।
এয়ারপোর্ট ট্রানজিট ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র-
সেনজেন এলাকা থেকে যে দেশে যাবেন সে দেশের ভিসা, ফ্লাইট রিজার্ভেশন।
বি: দ্র: ট্রানজিট ভিসার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবীমা প্রয়োজন হয় না।
আরও কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য
সেনজেন ভিসা ইস্যু হতে সাধারণত ৭ কর্মদিবস লাগে। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে কাগজপত্র যাচাইজনিত কারণে ৩ থেকে ৪ সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। তাই চেষ্টা করুন ভ্রমণের নির্ধারিত তারিখের অন্তত ৪ থেকে ৬ সপ্তাহ আগে ভিসা আবেদনপত্র জমা দেয়ার।
প্রতিটি ভিসার জন্য সাক্ষাৎকারের পরপরই এডমিনিস্ট্রেশন ফি জমা দিতে হয়।
ভিসা ইস্যু হওয়ার পর পাসপোর্ট সংগ্রহের সময় ভিসার তথ্যগুলো দেখে নিন।