ঐতিহাসিক মাস্তা মসজিদ
Tweet
প্রাচীন মাস্তা মসজিদ। মুঘল শাসনের শেষের দিকে নির্মিত এই মসজিদটি গোবিন্দগঞ্জ তথা গাইবান্ধা জেলার অন্যতম একটি প্রাচীন নির্দশন।গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা শহর থেকে প্রায় ৫ কিঃমিঃ উত্তরে মহাসড়কের পাশে মাস্তা নামক গ্রামে এই মসজিদটি অবস্থিত।
জনশ্রুতি আছে মাস্তা মসজিদটি নির্মান করেন ফকির বাদশা নামের একজন প্রভাবশালী সাধক। মসজিদ সম্মুখে তার কবর বর্তমানে মাজার হিসেবে এখনো বিদ্যমান রয়েছে।
এই ফকির বাদশাকে খুঁজতে হলে আমাদের ফিরে যেতে হবে ইংরেজদের বিরুদ্ধে ফকির সন্নাসী আন্দোলনে। তখন ফকির আন্দোলনের নেতা ছিলেন ফকির মজনু শাহ। তিনি এই অঞ্চলে আগমন করেন ১৭৬০ খ্রিস্টাব্দের পর। এই অঞ্চলে ফকির মজনু শাহের হাজার হাজার অনুসারীরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ছাড়াও তিনি অনেক অনুসারীদের নিয়ে এই অঞ্চলে এসেছিলেন। ফকির বাদশার বংশধরদের পরিচয় না পাওয়ার কারণে ধারণা করা যায় ফকির বাদশা ছিলেন মজনুর শাহ’র একান্ত অনুসারীদের একজন।
ইংরেজদের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাথে ফকিরদের সংঘর্ষের তৈরী হয় এই গোবিন্দগঞ্জে। সংঘর্ষের পর মজনু শাহ তার কিছু অনুসারীদের নিয়ে মহাস্থানগড়ের দিকে গমণ করলেও তার একান্ত অনুচারীদের অনেকেই থেকে যায় গোবিন্দগঞ্জের এই অঞ্চল গুলোতে। স্পষ্ট ভাবেই বলা যায় ফকির বাদশা ছিলেন সেই থেকে যাওয়া অনুসারীদের একজন। পরবর্তিতে তিনি নির্জনে মসজিদটিতে তার কিছু অনুসারীদের নিয়ে ধ্যান সাধনায় মগ্ন হোন।
মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৩৫ ফুট ও প্রস্থ ১৬ ফুট। চার কোণে চারটি স্তম্ভ ছাড়াও একই আকারের তিনটি গম্বুজ রয়েছে এখানে। এর প্রত্যেকটি দেয়ালের পুরুত্ব চার ফুটের উপরে। যা মুঘল শাসন আমলের অন্যান্য স্থাপনার সাথে পুরোপুরি মিলে যায়। পুরু দেয়াল আর আয়তনে ছোট হওয়ার কারণে এর ভিতরে সব সময় শীতল আবহাওয়া বিরাজ করে। এর ভিতরে প্রবেশ করার জন্য তিনটি দরজা থাকলেও মসজিদটির আলাদা কোন জানালা নেই। ভিতরে দুই সারিতে নামাজ আদায় করার মত জায়গা দেখে আন্দাজ করা যায় ফকির বাদশার অনুসারীরা ছাড়া আর কোন লোকালয়ের অস্থিত্ব ছিলো না এর আশেপাশে। পরবর্তিতে ফকির বাদশার অনুসারীদের বংশধরেরাই এই মসজিদটির খাদেম হিসেবে নিযুক্ত হয়ে আসতেছিলো। যা এখনো বর্তমান।
বর্তমানে মসজিদটি সংস্কার করা হলেও মসজিদটির প্রাচীন অবকাঠামো অনেকটাই মলিন হয়ে গিয়েছে। ফকির আন্দোলনের স্মৃতিচিহ্ন স্বরুপ এই ঐতিহাসিক নির্দশনটির পর্যাপ্ত রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারলে গোটা দেশব্যাপীই একটি দর্শনীয় স্থান হিসেবে পরিচিত লাভ করতে পারতো। যা অসম্ভব কিছু মনে হলেও ঐতিহাসিক ভিত্তি ও স্থাপনার গুরুত্ব বিবেচনা করলে মাস্তা মসজিদ গোটা বাংলাদেশের জন্যই একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা হিসেবে পরিচিত লাভ করতে পারে।
লেখকঃ মেহরাব জাহিদ