পর্যটন পুনরুদ্ধারে জরুরি সম্পদ সংহতকরণ
Tweet
বিশ্ব জুড়ে করোনা ভাইরাস তাণ্ডব থামার নয়। কোথাও কিছুটা স্তিমিত হচ্ছে আবার কোথাও দ্বিতীয় প্রবাহ চলছে। এই অনিশ্চয়তার মধ্যেই অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কাজে পর্যটন রয়েছে পুরোভাগে। যেজন্য বিশ্বের বেশ কিছু দেশ ইতোমধ্যে অভ্যন্তরীণ পর্যটন কার্যক্রম শুরু করেছে। এতে শতভাগ বন্ধ হয়ে যাওয়া বিশ্ব পর্যটন যেন প্রাণ ফিরে পাচ্ছে।
এদিক থেকে ভিয়েতনাম অনেক এগিয়ে গেছে এবং এই দুর্যোগের মধ্যেও বিশ্ব রেকর্ড গড়েছে। কেনো না সে দেশে মাত্র ৩৫০ জন মানুষ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে বটে কিন্তু একজনও মারা যায়নি। তাছাড়া দেশটি বিশ্বের প্রথম স্বর্ণ খচিত পাঁচ তারকা মানের একটি বিলাসবহুল হোটেল তৈরী করে এটি খুলেও দিয়েছে এবং অভ্যন্তরীণ পর্যটনও পুরোদমে চালু করেছে।
আবার অনেক দেশ এই চলিত জুলাই মাস কিংবা আগষ্ট মাসেই তাদের পর্যটন কার্যক্রম শুরুর ঘোষণা দিয়েছে। কিছু কিছু দেশ আন্তর্জাতিক পর্যটনও শুরুর চেষ্টা চালাচ্ছে। সব মিলিয়ে বলাই যায় বিশ্ব জুড়ে করোনা তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে যাওয়া পর্যটন আবার ঘুরে দাঁড়ানোর পথ ধরেছে। অবশ্য ইতিহাস বলে পর্যটনের প্রকৃতিটাই এমন যে, সে যেকোন দুর্যোগ-দুর্বিপাকে স্তব্দ হয় আগে আবার গতিও পায় আগে।
এই যখন বিশ্ব পরিস্থিতি তখন বাংলাদেশ এখনো করোনা ভাইরাসে কাবু এবং পর্যটন পুনরুদ্ধার একেবারে বেহাল দশায়। তবে, সময়ের ব্যবধানে তাকে ফিরতেই হবে এবং এজন্য যা যা করণীয় তা করতে হবে। এক্ষেত্রে পর্যটনের অভিবাবক হিসেবে সরকারের উপর পড়েছে গুরু দায়িত্ব। তার সাথে নিজের অস্তিত্বের লড়াইয়ে সংগ্রামরত বেসরকারী খাতের দায়িত্বও কম নয়। তবে সরকারকে অনেক কিছুই করতে হবে যা ইতোমধ্যেই আলোচিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে এই পর্যটন পুনরুদ্ধার কাজে অতিব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হচ্ছে “রিসোর্স মোবিলাইজেশন” বা সম্পদ সংহতকরণ তথা ব্যবহার উপযোগী করা।
অর্থনীতির দৃষ্টিকোণ থেকে সম্পদ সাধারণত চার ধরণের হয়ে থাকে। যেমন ভুমি, শ্রম, পুঁজি এবং শিল্পদ্যোগ। এখানে ভুমি বলতে সেই ভুমিকেই বুঝায় যা পণ্য ও সেবা উৎপাদনে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে পর্যটনের ক্ষেত্রে সম্পদ হচ্ছে প্রকৃতি প্রদত্ত ও মানব সৃষ্ট আকর্ষণ এবং অবকাঠামো, সেবা ও অন্যান্য যা কিছু পর্যটকদের আকৃষ্ট করে তথা যা ব্যবহার্য তার সমষ্টি। যা কিনা দুই ভাগে বিভক্ত; একঃ প্রাথমিক বা মুখ্য এবং দুইঃ মাধ্যমিক বা অমুখ্য।
প্রাথমিক বা মুখ্য পর্যটন সম্পদ হচ্ছে যা পর্যটনের ব্যবহারের জন্য না হলেও বিদ্যমান আছে বা আদি থেকেই বিদ্যমান ছিল। এগুলো গ্রামীণ এবং শহর উভয় এলাকাতেই রয়েছে। যেমন সুন্দরবন বনাঞ্চল, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত, শুভলং, রাতারগুল, বিছানাকান্দি, মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত, পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার, ষাটগম্বুজ মসজিদ, লালাবাগ কেল্লা, জাতীয় সংসদ ভবন ইত্যাদি পর্যটক আকর্ষণ।
মাধ্যমিক বা অমুখ্য পর্যটন সম্পদগুলো হচ্ছে যা পর্যটকদের প্রয়োজন মেটানোর জন্য তৈরী করা হয়। এগুলোও গ্রাম এবং শহর উভয় এলাকাতেই রয়েছে। যেমন পর্যটকের থাকার জন্য তৈরী সব হোটেল, রিসোর্ট, গেষ্ট হাউজ ইত্যাদি; খাবার জন্য রেষ্টুরেন্ট, ফাষ্টফুড সোপ, ফুডকোর্ট ইত্যাদি; বিনোদনের জন্য তৈরী পার্ক, থিম পার্ক এবং ইনডোর এমিউজমেন্ট ফ্যাসিলিটিজ ইত্যাদি।
অন্যদিকে অভিধানিক অর্থে মোবিলাইজেশন বা সংহতকরণ হচ্ছে, “কোন কিছু সংগঠিত বা প্রস্তুত করার কাজ”। অথবা “এমন পদ্ধতি যা দ্বারা কোন কিছুকে সচল অথবা মানুষ ও সম্পদকে সচল অথবা কর্ম উপযোগী করা”। তাই ব্যবহারিক অর্থে সম্পদ সংহতকরণ হচ্ছে, সর্বোত্তম ব্যবহারের জন্য বিদ্যমান সম্পদের সাথে নতুন এবং অতিরিক্ত সম্পদ সুসংহত বা নিশ্চিত করা। এজন্য ব্যবসায়ীক দৃষ্টিকোণ থেকে এটিকে নতুন একটি অগ্রগতি হিসেবেও বিবেচনা করা হয়ে থাকে।
তাই, এই পর্যটন সম্পদ সংহতকরণ কৌশলকে এমনভাবে কাজে লাগানো হয় যাতে ট্যুরিজম স্টেকহোল্ডার বা পর্যটন দায়কগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা যায়, স্থানীয় নের্তৃত্বের উন্নয়ন হয় এবং সম্পদ সংহতকরণ আরো বেগবান করা যায়। আমাদেরকেও আমাদের পর্যটন সম্পদগুলোর সংহতকরণ বা ব্যবহার উপযোগী করার কাজটি করতে হবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে, অত্যন্ত সতর্কতার সাথে এবং যত্ন সহকারে। যাতেকরে, পর্যটন পুনরুদ্ধার কাজে আমাদের পর্যটক আকর্ষণ ও সেবাগুলো এবং পর্যটন প্রতিষ্ঠান ও কর্মীদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়। নাহয় অন্য সব চেষ্টাই শেষ পর্যন্ত বিফলে যাবে।
লেখকঃ
জামিউল আহমেদ
পর্যটন বিশেষজ্ঞ