বাংলাদেশের খবরের মিডিয়া লিস্ট বাতিলের দাবিতে ডিএফপি ঘেরাওয়ের কর্মসুচী
Tweet
দৈনিক বাংলাদেশের খবরের মিডিয়া লিস্ট বাতিলের দাবিতে রাজধানীর কাকরাইলে চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর ঘেরাওয়ের ঘোষণা দিয়েছেন পত্রিকাটির চাকরিচ্যুত সাংবাদিক-কর্মচারীরা।
একই সঙ্গে বাংলাদেশের খবরের যাবতীয় দুর্নীতি চিত্র তুলে ধরে ডিএফপি কর্তৃপক্ষ বরাবর স্মারকলিপিও দেবেন তারা। আগামী ২১ জুলাই মঙ্গলবার বেলা ১১টায় এ কর্মসূচি পালন করা হবে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর মতিঝিলে বাংলাদেশের খবরের চাকরিচ্যুত সাংবাদিক-কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদ ব্যানারে আয়োজিত মাগুরা গ্রুপের অফিস ঘেরাও কর্মসূচি থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
বাংলাদেশের খবরের চাকরিচ্যুত জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবারের ঘেরাও কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু।
কুদ্দুস আফ্রাদ বলেন, সংগ্রাম ছাড়া দাবি আদায় হয় না। আন্দোলন ছাড়া দাবি আদায় হয় না। আন্দোলন ছাড়া কোনো ফলাফল আসে না। আন্দোলনে আমরা নেমেছি, আমরা খালি হাতে ফিরব না।
এসময় সংবাদপত্রের নীতিমালা অনুযায়ী আসছে ঈদুল আজহার আগে সাংবাদিক-কর্মচারীদের বকেয়া পরিশোধের জন্য মালিকপক্ষের প্রতি দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, অন্যথায় মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীনের বাড়ি ঘেরাওসহ আরো কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
একই সঙ্গে ঈদের আগে সমস্ত দেনা-পাওনা বুঝিয়ে দিতে মাগুরা গ্রুপের প্রতি দাবি জানিয়ে সাংবাদিক-কর্মচারীদের আন্দোলনের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশের খবর পত্রিকার মালিকের উদ্দেশে ডিইউজে সভাপতি বলেন, পত্রিকা বের করেন আর না করেন সাংবাদিক-কর্মচারীদের পাওনা আপনাকে পাই পাই করে বুঝিয়ে দিতে হবে। আজ যেমন আমরা এখানে দাঁড়িয়েছি তেমনি পাওনা বুঝিয়ে না দিলে আপনার সব প্রতিষ্ঠানে যাব, সেখানে কর্মসূচি দেব।
এসময় তিনি মাগুরা গ্রুপের প্রতি হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, আমাদের রাজপথে ঠেলে দেবেন না, এর পরিণতি ভালো হবে না।
তিনি বাংলাদেশের খবরের সম্পাদক ও উপদেষ্টা সম্পাদককে চাকরিচ্যুত সাংবাদিক-কর্মচারীদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে তাদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। অন্যথায় তাদের মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীনের কুচক্রী ও সহযোগী হিসেবে চিহ্নিত করা হবে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশের খবরের যাবতীয় দুর্নীতি তুলে ধরে চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর ঘেরাওসহ সেখানে স্মারকলিপি দেওয়ার জন্য চাকরিচ্যুত সাংবাদিকদের পরামর্শ দেন তিনি। এ সময় দাবি আদায়ে ভবিষ্যতে তথ্যমন্ত্রণালয় ঘেরাওয়েরও ঘোষণাও দেন তিনি।
সাজ্জাদ আলম খান তপু বাংলাদেশের খবরের মালিকের উদ্দেশে বলেন, কোম্পানি আইনে নয়, সংবাদপত্রের নীতিমালা অনুযায়ী সাংবাদিক-কর্মচারীদের পাওনা পরিশোধ করতে হবে।
বাংলাদেশের খবরের চাকরিচ্যুত সিনিয়র সাব-এডিটর আবুল কালাম আজাদের সঞ্চালনায় ঘেরাও কর্মসূচিতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ডিইউজের যুগ্ম সম্পাদক খায়রুল আলম, ডিইউজের সাংগঠনিক সম্পদক এম জিহাদুর রহমান জিহাদ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল বারী, ডিইউজের দফতর সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস, ডিইউহের নির্বাহী সদস্য জুবায়ের চৌধুরী, দৈনিক নওরোজের বার্তা সম্পাদক মাশাররফ হোসেন, প্রতিদিনের সংবাদের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ইমাম গাজ্জালী, আমাদের নতুন সময়ের সিনিয়র রিপোর্টার সমীরণ রায়, বাংলাদেশ অনলাইন সাংবাদিক পরিষদের সোহেল রানা, স্বদেশ প্রতিদিনের সাব-এডিটর আবু জাফর প্রমুখ।
একনজরে সাংবাদিকদের সঙ্গে মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীনের প্রতারণা
১. বাংলাদেশের খবর-এর নামে একটি সরকারি ব্যাংক থেকে এ বছরের শুরুর দিকে ২৪ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে পত্রিকাটির সার্বিক উন্নয়নের জন্য। অথচ পত্রিকার কোনো উন্নতি হয়নি এবং সাংবাদিক-কর্মচারীরাও এর কোনো সুবিধা পাননি।
২. সাংবাদিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ ও ঈদ বোনাস দেওয়ার জন্য সরকারের কাছ থেকে প্রণোদনাও পেয়েছেন প্রায় ৪ কোটি টাকা অথচ কর্মীদের ঈদ বোনাস তো দূরের কথা ঈদে এক টাকা বকেয়া বেতন দেয়নি প্রতিষ্ঠাননি।
৩. ব্যাংক থেকে ঋণ করার সময় বাংলাদেশের খবর-এ কর্মরত সাংবাদিক-কর্মচারী সংখ্যা দেখানো হয়েছে ২৬৫ জন। অথচ এখন কর্মী ৩৬ জন (গত ১৬ মে অফিসের গেটে ঝুলিয়ে দেওয়া নোটিশে কর্মী দেখানো ৫৭ জন। সেখান থেকে ইতোমধ্যে ২১ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে)। সম্প্রতি শোনা যাচ্ছে, ওই ৩৬ থেকে আরো ২০-২৫ জনকে ছাঁটাই করে সে তথ্য গোপন রাখা হয়েছে।
৪. পত্রিকা ছাপা হয় মাত্র ৭০০ কপি। আর ডিএফপিতে তালিকায় ১ লাখ ৬১ হাজার কপি।
৫. প্রায় ৮০% সাংবাদিককে ওয়েজ বোর্ড দেওয়া হয়নি। অথচ পত্রিকাটি সমস্ত সরকারি সুবিধা নিচ্ছে অষ্টম ওয়েজ বোর্ড অনুযায়ী।
৬. গত তিন বছরে সাংবাদিক-কর্মচারীদের এক টাকাও বেতন বাড়ানো হয়নি এবং ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হয়নি।
৭. মতিঝিল থেকে পত্রিকার অফিস বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় আনার সময় যাতায়াত ভাতা বাড়ানো প্রতিশ্রæতি দিলেও তা বাড়ায়নি।
৮. করোনার অজুহাতে গত ৭ এপ্রিল পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়। অথচ রাজধানীর ফকিরাপুল থেকে ‘আন্ডার গ্রাউন্ড’ পত্রিকা হিসেবে নিয়মিত পত্রিকা বের করা হচ্ছে। ছাপা হচ্ছে মাত্র ৭০০ কপি।
৯. এর মাসখানেক পর গত ১৬ মে অন্যায়ভাবে চার মাসের (এপ্রিল-জুলাই) ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
১০. কোনো আগাম নোটিশ না দিয়ে ছুটির মধ্যেই গত ৩১ মে ২১ জন কর্মীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
১১. চাকরিচ্যুত করা হলেও সাংবাদিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও অন্যান্য ন্যায্য পাওনা পরিশোধ করছে না।