বাইরে থেকে সন্তানরা এলেই এন্ড্রু কিশোরের শেষ বিদায় অনুষ্ঠান
Tweet
অস্ট্রেলিয়া থেকে দুই সন্তান দেশে এলেই ১৫ জুলাই খ্রিস্টীয় রীতিতে আনুষ্ঠানিকতা শেষে রাজশাহীর শ্রীরামপুরে মায়ের পাশে কণ্ঠশিল্পী এন্ড্রু কিশোরকে সমাহিত করা হবে বলে জানিয়েছে তার পরিবার। দশ মাস ধরে ব্লাড ক্যানসারে ভুগে সোমবার সন্ধ্যায় না ফেরার দেশে পাড়ি জমান এ শিল্পী। তার মরদেহ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়েছে। বাবাকে শেষবারের মতো দেখতে ছেলে জে এন্ড্রু সপ্তক ১০ জুলাই ও মেয়ে মিনিম এন্ড্রু সংজ্ঞা ১৪ জুলাই অস্ট্রেলিয়া থেকে ফিরছেন বলে জানিয়েছেন এন্ড্রু কিশোরের বোন শিখা বিশ্বাস।
তিনি বলেন, তারা নির্ধারিত সময়ে দেশে ফিরতে পারলে ১৫ জুলাই সকালে স্থানীয় চার্চে ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে মায়ের কবরের পাশে এন্ড্রু কিশোরকে সমাহিত করা হবে। তবে ফ্লাইট জটিলতায় সন্তানদের ফিরতে বিলম্ব হলে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার দিনও পেছানো হবে বলে জানান শিখা বিশ্বাস। গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এন্ড্রু কিশোরের লিম্ফোমা (ব্লাড ক্যান্সার) ধরা পড়ে। সেখানে নয় মাস চিকিৎসা শেষে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ১১ জুন তার দেশে ফেরার কথা থাকলেও ১০ জুন এক পরীক্ষায় তার শরীরে আবারও লিম্ফোমার অস্তিত্ব মেলে। ১১ জুন দেশে ফিরে পরদিন রাজশাহী নগরীর মহিষবাতান এলাকায় বোন শিখা বিশ্বাসের ক্লিনিকে ভগ্নিপতি ও চিকিৎসক প্যাট্রিক বিপুল বিশ্বাসের তত্ত্বাবধানে ছিলেন এন্ড্রু কিশোর।
সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে মৃত্যু হয় তার। এন্ড্রু কিশোরের জন্ম ১৯৫৫ সালের ৪ নভেম্বর রাজশাহীতে; সেখানেই কেটেছে তার শৈশব ও কৈশোর। ছোট বেলা থেকেই সঙ্গীতে অনুরক্ত ছিলেন তিনি। প্রাথমিকভাবে সংগীতের পাঠ শুরু করেন রাজশাহীর আবদুল আজিজ বাচ্চুর কাছে।রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবস্থাপনায় পড়লেও গানই ছিল তার ধ্যান-জ্ঞান। মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলসংগীত, আধুনিক গান, লোকগান ও দেশাত্মবোধক গানে রাজশাহী বেতারের তালিকাভুক্ত শিল্পী হন।
একসময় গানের নেশায় এন্ড্রু কিশোর ছুটে আসেন রাজধানী ঢাকায়। চলচ্চিত্রে গান গাওয়া শুরু হয়েছিল ১৯৭৭ সালে; ‘মেইল ট্রেন’ এ আলম খানের সুরে ‘অচিনপুরের রাজকুমারী নেই যে তার কেউ’ গানের মধ্য দিয়ে। এরপর বাদল রহমানের ‘এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী’ চলচ্চিত্রে কণ্ঠ দেন।
১৯৭৯ সালে প্রতিজ্ঞা চলচ্চিত্রের ‘এক চোর যায় চলে’ গাওয়ার পর আর পেছনে ফিরতে হয়নি তাকে। তার গাওয়া ভালবেসে গেলাম শুধু, সবাই তো ভালবাসা চায়, আমার বুকের মধ্যেখানে, আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন শুনেছিলাম গান, ভেঙেছে পিঞ্জর মেলেছে ডানা, আমি চিরকাল প্রেমেরও কাঙাল, বেদের মেয়ে জোছনা আমায় কথা দিয়েছে- এমন অনেক গান এখনও মানুষের মুখে ফেরে। গান গেয়ে আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জেতেন তিনি। গত শতকের নব্বইয়ের দশকের শেষ দিক পর্যন্ত চলচ্চিত্রের গানে একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল তার। ওই সময়েও তার গাওয়া ‘পড়ে না চোখের পলক’ গানটি ছিল তুমুল জনপ্রিয়।