মুক্তি পেলো কাজী মোহিনী ইসলামের দেশাত্মবোধক গান ‘তোমায় দেখে দেখে’
Tweet
‘কিছু মৌনতা কিংবদন্তী হয়ে ওঠে’ কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশের পর বেশ আলোচনায় আসেন এ সময়ের জনপ্রিয় কবি, কথাসাহিত্যিক ও গীতিকার কাজী মোহিনী ইসলাম। এরপর আরও কয়েকটি বই প্রকাশিত হয় তাঁর। স্বতন্ত্র কাব্য ভাষার কারণে সাহিত্যাঙ্গণে ইতিমধ্যেই তাঁর আলাদা গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়েছে। গান লেখার পাশাপাশি বেশ কিছু গানে সুর করেও তিনি আলোচিত হয়েছেন। কাজী মোহিনী ইসলাম এবার নতুন একটি গান নিয়ে শ্রোতাদের সামনে হাজির হয়েছেন। ‘তোমায় দেখে দেখে’ শিরোনামের নিজের লেখা এ গানটিতে কণ্ঠদান ও সুরারোপ করেছেন কাজী মোহিনী ইসলাম নিজেই। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, দেশপ্রেম আর পর্যটনের অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটেছে পুরো গানটিতে।
গানটির স্থায়ী’র কথাগুলো এ রকম :
‘‘তোমায় দেখে দেখে
ঠাকুর বাড়ির ওই ছেলেটি হয়েছে বিশ্বকবি;
কত শিল্পী যুগে যুগে
মনের মাধুরী ঢেলে এঁকেছে তোমার ছবি;
তবু তোমার রূপের বর্ণনা যে হয়নি কভু শেষ
তুমি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নে দেখা সোনার বাংলাদেশ
আ. আ. আ…তুমি মায়ের ভাষার দেশ।
বাংলাদেশ, বাংলাদেশ, বাংলাদেশ!’’…
‘তোমায় দেখে দেখে’ গানটির তৈরির পেছনে দু’টি ভাবনা কাজ করেছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, গানটিতে দেশাত্ববোধের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং পর্যটনের একটা সমন্বয় করার চেষ্টা করেছি। বাংলাদেশের ভ্রমণ ও পর্যটন বিষয়ক গান ও কবিতা নিয়ে কাজ করার স্বপ্ন আমার অনেক দিনের।
‘তোমায় দেখে দেখে ঠাকুর বাড়ির ঐ ছেলেটি হয়েছে বিশ্বকবি’ কথাটি দিয়ে আপনি কী বোঝাতে চেয়েছেন-এ প্রশ্নের জবাবে কাজী মোহিনী ইসলাম বলেন, জীবনে যতোবার আমাদের জাতীয় সঙ্গীত শুনেছি-বাংলা মায়ের প্রতি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নিগুঢ় প্রেম ও সুগভীর মমত্ববোধ গভীরভাবে উপলব্দি করেছি । তাই কেবলই মনে হয়েছে, জন্মভূমির রূপ-লাবন্যের ঐশর্য দেখে দেখেই তিনি কবি হয়ে উঠেছেন।
গানটি রচনার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার লেখালেখির শুরুটা শৈশব থেকেই কিন্তু দূর্গম পাহাড়ি জনপদে বেড়ে ওঠা মন, সৃজনশীলতা বিকাশের তেমন কোনো উপায় খুঁজে পায়নি। যখন যে কথা মনে আসতো তাই সুর হয়ে ঠোঁটে বেজে উঠতো, আর বৃষ্টির মতো ঝরে যেতো। তবে তারুণ্যে এসে জীবনে প্রথম প্রেমের কবিতা হিসেবে যে কথাগুলো লিখেছিলাম, সেই কবিতাটি আজও আমার প্রথম দিনের মতোই ভালো লাগে। তাই কবিতাটিকে নিজের মতো করে সুর দিয়েছি। এই কবিতাটি লেখার সময় নতুন করে অনুভব করেছিলাম, জন্মভূমির প্রতি মানুষের ভালোবাসাটাও জন্মদায়িনী মায়ের মতো-জন্ম থেকেই তৈরি হয়। মায়ের শরীরের হিমোগ্লোবিন শুষে নিয়ে, যেভাবে তাঁর কোলে বেড়ে উঠি।
মায়ের ঠোঁট ছুঁয়ে যেভাবে কথা বলতে শিখি, তেমনি জন্মভূমির প্রকৃতি, মাটির মায়াবী কোল; যেখানে রোদ-বৃষ্টি-আলো-হাওয়া-জল-কাদাময় মাখামাখি করে চলতে শিখি, বুঝতে শিখি মানব জীবন। ‘তোমায় দেখে দেখে’ শিরোনামের এই কবিতাটি লিখতে গিয়ে অনুধাবন করেছি, সেই সব মহৎপ্রাণ মানুষদের আত্মত্যাগের কথা, যাঁদের জীবনের প্রথম প্রেমটাও হয়েছিলো জন্মভুমির সাথেই। যাঁরা সত্যি করে জন্মভূমিকে ভালোবেসেছেন, যুগে-যুগে তাঁরা জন্মভূমির প্রয়োজনে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে পৃথিবীকে জানিয়ে গেছেন, প্রকৃত দেশপ্রেমিকদের কখনো মৃত্যু হয়না। মা,মাটি, মানুষের প্রতি তাঁদের কর্তব্য ও মনুষ্যত্ববোধের অনন্য উদাহরণ, সভ্যতার ইতিহাস হাজার-হাজার বছর যত্ন করে ধরে আছে, ধরে রাখবে পৃথিবীর অন্ত পর্যন্ত। কারণ এই অনন্য মানুষগুলো ধ্রুব তারা হয়ে আজীবন বাঙালি জাতিকে সঠিক পথ দেখিয়ে চলেছেন। আমি মনে করি, দেশপ্রেম মানে, শুধুই দেশের নান্দনিক সৌন্দর্যের বর্ণনা করাই নয়, বরং দেশ বিনির্মাণের অগ্রপথিকদের দৃষ্টি ও দর্শনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁদের জীবন থেকে দেশপ্রেমের দীক্ষা নিয়ে তাঁদের অসমাপ্ত পথ, অপূর্ণ স্বপ্নের সাথে নিজের স্বপ্ন মিশিয়ে এগিয়ে যেতে পারাটাও দেশপ্রেমের অন্যতম অংশ। ‘তোমায় দেখে দেখে’ শিরোনামের গানটিতে আমি সে সকল গুনীজনদের স্মরণ করার চেষ্টা করেছি-যাঁরা যুগে যুগে জাগরণের ঢেউ তুলে দেশাত্ববোধের চেতনা নির্মাণ করে গেছেন। আমি বিশ্বাস করি, এই গানের পঙক্তিগুলো দেশপ্রেমিক প্রতিটি মানুষের মনের কথা হয়ে উঠবে।
১৩ জুলাই ইউটিউব চ্যানেল ‘ট্যুরিজম টিভি বাংলাদেশ’-এ গানটি মুক্তি পেয়েছে। এই গানটির সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন দীপঙ্কর দীপু। ভিডিও সম্পাদনা করেছেন কাজী ফয়সাল মাহমুদ।