অজানা বনভূমি হরিণবাড়িয়া
Tweet
বাংলাদেশ অপরূপ ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি। এদেশে রয়েছে অনেক সমৃদ্ধ ইতিহাস ও ঐতিহ্য, বহুপুরোনো সংস্কৃতি, চির পরিচিত নদ-নদী আর নানারকম বনভূমি। বনভূমিগুলোর মধ্যে ‘সুন্দরবন’ অন্যতম, যাকে ম্যানগ্রোভ বনভূমি বা লবণাক্ত জলাভূমিও বলে। এটি বাংলাদেশের দক্ষিণের বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে বিস্তৃত। বাংলাদেশের দুটি বিভাগ খুলনা ও বরিশালের কিছু অংশ জুড়ে এই বন বিস্তৃত। সুন্দরবন সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি তাই আজকে বরং আমরা জানবো সুন্দরবনের খুব কাছের একটি ছোট বন সম্পর্কে। এই বনের নাম “হরিণবাড়িয়া”। কী, হরিণবাড়িয়া নাম শুনেই প্রথমে আমাদের কার কথা মনে পড়ে? হ্যাঁ, আপনি ঠিকই ধরেছেন হরিণ মানে হরিণের আবাসস্থল হরিণবাড়িয়া। তবে বনের নাম হরিণবাড়িয়া হলেও হরিণের দেখা পাওয়া ভাগ্যের সহায়তা ছাড়া সম্ভব হবে না।
চলুন এবার বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক হরিণবাড়িয়া কোথায়? কী রয়েছে এখানে? এবং কিভাবে যাওয়া যায়?
বাংলাদেশের দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে এই বনভূমির বিস্তৃতি। হরিণবাড়িয়া বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার হরিণঘাটা ইউনিয়নে অবস্থিত। আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে এর নাম তো হরিণবাড়িয়া তবে হরিণঘাটা ইউনিয়ন কেনো? আসলে স্থানীয় লোকজন হরিণবাড়িয়াকে হরিণঘাটা নামে চিনে।
হরিণবাড়িয়ার বিশেষত্বঃ এই বনভূমিটি মোটামুটি সুন্দরবনের মতো অনেক গহীন আর ঘন অরণ্য বিশিষ্ট। সুন্দরবনের বিভিন্ন গাছ ও লতাপাতা এখানে দেখতে পাবেন এছাড়াও বনটিতে লবণাক্ত জলাভূমি রয়েছে এবং বর্ষাকালে বনভূমির অনেকাংশ ডুবে যায়। এই বনে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী রয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো : বুনো শূকর, মেছো বাঘ, সাপ ও লাল কাঁকড়া ইত্যাদি। এছাড়াও রয়েছে হাজার হাজর প্রজাতির পাখি এবং লবনাক্ত পানির মাছ। তবে সুন্দরবনের মতো এখানে কোনো বাঘ নাই।
এবার আসুন বনের ভিতরে যাওয়া যাকঃ বনের ভিতরে ঢুকতেই প্রথমে আপনাকে স্বাগতম জানাবে হরিণবাড়িয়া পর্যটন কেন্দ্র ফটক। এরপর একটি লম্বা ব্রিজ দেখতে পারবেন যা বনের ভিতর চলে গিয়েছে। এই ব্রিজটি মাটি থেকে তিন চারফুট উপরে। লম্বা সরু ব্রিজটি ধরে এগোতেই দেখবেন ইট, পাথর, কাঠ আর তারের সমন্বয়ে একটি বড় ব্রিজ যার নীচ দিয়ে বয়ে চলেছে ছোট খাল, এই খালটি গিয়ে মিশেছে সমুদ্রের সাথে। ব্রিজের দুপাশে পাবেন সারিসারি ছোট-বড় ইঞ্জিন চালিত নৌকা যা দিয়ে আপনি দিব্যি বনটা ঘুরে দেখতে পারবেন ও সমুদ্রের পাড়ে যেতে পারবেন।
আবার ব্রিজে চলে আসিঃ এই বড় ব্রিজ থেকে নেমে সামনে দুটো পথ দেখবেন। একটি পথ সোজা গিয়েছে ছোট ব্রিজে হয়ে বনের ভিতর, ইটের তৈরি অন্য পথটিও চলে গেছে বনের ভিতর। এবার আপনি কোন রাস্তায় যাবেন? আমি বলবো, আপনি ইটের রাস্তা ধরে যাবেন। কেনো? কারন ইটের তৈরি রাস্তাটির চেয়ে ছোট ব্রিজের রাস্তাটির বেহাল দশা। অনেকটা ছোটোদের টেম্পল রান গেইমস্ এর রাস্তার মত সরু আর চিকন। জায়গায় জায়গায় পিলার ছাড়া ব্রিজের আর তেমন কিছু নাই। তাই এই রাস্তাটি তুলনামূলক বিপদজনক। রাস্তাটা বনের ভিতর প্রায় তিন কিলোমিটার গভীর হলেও বেশিভাগ রাস্তাটাই খারাপ। অভিজ্ঞতা ছাড়া পুরো বন হেঁটে ঘুরে দেখা মোটামুটি অসম্ভব তাই মনের ভুলেও বনের ভিতর দিয়ে সাগর তীরবর্তী স্থানে না যাওয়াই ভালো। এছাড়াও গহীন বনে মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার ঝুঁকিও আছে।
এবার আসুন ইটের রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাই, কিছুদূর যাওয়ার পর একটা সুউচ্চ টাওয়ার দেখতে পাবেন যাকে আমরা “ওয়াচ টাওয়ার” বলি। এই টাওয়ার থেকে পুরো বনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।
ঢাকা থেকে কিভাবে যাবেন –
ঢাকা থেকে লঞ্চে বা বাসে পাথরঘাটা আসতে পারেন তবে লঞ্চ ভ্রমণ তুলনামূলক আরামদায়ক হবে। ঢাকা সদরঘাট থেকে ঢাকা-বরগুনাগামী লঞ্চে উঠতে হবে তবে মনে রাখবেন বরগুনার লঞ্চ সন্ধ্যা ছয়টায় ঘাট ছেড়ে যায়। এরপর কাঁকচিড়া ঘাটে নেমে সেখান থেকে সিএনজি বা মটরগাড়ি করে পাথরঘাটা আসতে পারেন কিংবা সরাসরি হরিণঘাটাও যেতে পারেন। যারা লঞ্চ জার্নি ভয় পান তারা সায়েদাবাদ বা গাবতলি থেকে পাথরঘাটাগামী বাসে উঠে চলে আসতে পারেন।
এমন সুন্দর বন ভ্রমণ না করলে বনের প্রকৃত সৌন্দর্য্য ও গভীরতা হয়তো আপনার অজানাই থেকে যাবে। এমন সুন্দর বন ভ্রমণে ভাগ্য ভাল থাকলে হরিণের সাথেও দেখা হয়ে যেতে পারে। সবাইকে হরিণ দেখার আমন্ত্রণ রইলো।
মাইনুল ইসলাম রিছান
শিক্ষার্থী, ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, ড্যাফোডিল ইনিস্টিউট অব আইটি।
৫ thoughts on “অজানা বনভূমি হরিণবাড়িয়া”
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.
Like!! Really appreciate you sharing this blog post.Really thank you! Keep writing.
I learn something new and challenging on blogs I stumbleupon everyday.
These are actually great ideas in concerning blogging.
I am regular visitor, how are you everybody? This article posted at this web site is in fact pleasant.
Thanks so much for the blog post.