নারীর ক্ষমতায়নে পর্যটন শিল্প : প্রসঙ্গ বিটিইএ’র উইমেন স্ট্যান্ডিং কমিটির অভিষেক-২০২০
Tweet
নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের অগ্রগতির সূচক এখন বেশ সন্তোষজনক। আমাদের দেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নারী, মহান জাতীয় সংসদের স্পিকার নারী, জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেতাও নারী। এছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রধান পদেও রয়েছেন নারী।
শিক্ষা ক্ষেত্রে নারীর যে হার তা উল্লেখযোগ্য। সাহিত্য-সংস্কৃতিতেও পিছিয়ে নেই নারী। চাকুরী, ব্যবসা-বাণিজ্য সহ সব পেশায় নারীর অংশগ্রহণ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি। ব্যবসা-বাণিজ্যে নারী উদ্যোক্তা এখন কোনো অংশেই কম নয়। এক কথায়, দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে নারীর অবদানকে খাটো করে দেখার কোনো অবকাশ নেই। পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী এবং নৌ বাহিনীতে পুরুষের পাশাপাশি নারীর ভূমিকা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি। এমনকি বিমানের পাইলট হিসেবেও নারীরা সাফল্যের সাক্ষর রেখে চলেছেন।
আমার আজকের আলোচ্য বিষয়, ‘নারীর ক্ষমতায়নে পর্যটন শিল্প ; প্রসঙ্গ বিটিইএ’র উইমেন স্ট্যান্ডিং কমিটির অভিষেক-২০২০’। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীর ক্ষমতায়নে সারা বিশ্বের রোল মডেল। তিনি প্রমাণ করেছেন, অন্যান্য খাতের মতো পর্যটনের মাধ্যমেও নারীর ক্ষমতায়ন সম্ভব। আর তাই তিনি পর্যটন খাতে নারী উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছেন। যার ফলে বহু নারী এখন পর্যটন শিল্পে উদ্যোক্তা হিসেবে অসামান্য অবদান রেখে চলেছেন। আমাদের দেশের হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট, পার্ক, পিকনিক স্পট, ট্যুর অপারেটর কোম্পানী, ট্রাভেল এজেন্সী ছাড়াও পর্যটনের উপখাত গুলোতে নারীরা উদ্যোক্তা হিসেবে প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখে চলেছেন।
বাংলাদেশের অনেকগুলো কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্যুরিজম এ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ রয়েছে। সেখানেও নারীর উপস্থিতি একেবারে কম নয়। ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরাও পর্যটন শিল্প বিষয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছে ব্যাপক হারে।
আমাদের দেশে নারী পর্যটকের সংখ্যা মোটেও কম নয়। বিশ্বপর্যটক হিসেবেও নারীরা এখন বহুদূর এগিয়ে গেছেন। নাজমুন নাহার, এলিজা বিনতে এলাহী, কাজী আসমা আজমেরী সহ অনেক নারী বিশ্বপর্যটক হিসেবে দেশের সীমানা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বেশ সুনাম কুড়িয়েছেন, সাফল্যের স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। অর্থাৎ পর্যটন আর নারী এখন আর বিপরীত মেরুর কোনো বিষয় নয়। পর্যটন শিল্প এখন নারীর ক্ষমতায়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির অন্যতম মাধ্যম।
পর্যটন শিল্পের বিকাশ ও উন্নয়নে যে সকল নারী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন, তাদের এক প্লাটফর্মে নিয়ে আসতে একটি ঐতিহাসিক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ ট্যুরিজম এক্সপ্লোরারস এসোসিয়েশন-(বিটিইএ)। সম্প্রতি এ সংগঠনটি ‘বিটিইএ ন্যাশনাল উইমেন স্ট্যান্ডিং কমিটি’ গঠন করেছে। যে সকল নারী আমাদের দেশে পর্যটন শিল্পে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলেছেন, তারাই রয়েছেন এ কমিটিতে। আগামী ১১ সেপ্টেম্বর-২০২০ এ কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠিত হবে। উক্ত অনুষ্ঠানে একই সাথে দেশের পর্যটন খাতে বিশেষ অবদানের জন্য বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সংবর্ধনা প্রদান করা হবে। এ অনুষ্ঠানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী কে. এম. খালিদ, এমপি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। ‘বিটিইএ ন্যাশনাল উইমেন স্ট্যান্ডিং কমিটি’ বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে সক্ষম হবে বলে আশা করছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।
আমি মনে করি, পর্যটনের সাথে বিপুল সংখ্যক নারীকে সম্পৃক্ত করা না গেলে পর্যটনের প্রকৃত বিকাশ ও উন্নয়ন সম্ভব নয়। কেননা, আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। তাই পর্যটনের সাথে নারীরা ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত হলেই পর্যটনের প্রকৃত উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক নারীকে পর্যটন সম্পর্কে ব্যাপকভাবে সচেতন ও উদ্বুদ্ধ করার জন্য কার্যকর উদ্যোগের অংশ হিসেবেই ‘বিটিইএ ন্যাশনাল উইমেন স্ট্যান্ডিং কমিটি’ গঠন করেছে। এ কমিটি পর্যটনের উন্নয়ন ও বিকাশে ব্যাপকভাবে নারীদের সম্পৃক্তকরণ ও পর্যটন সম্পর্কে সচেতনতা তৈরিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। এ কমিটিকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা আমাদের সকলের দায়িত্ব। দায়িত্ব সরকারেরও। পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে নারীদের সম্পৃক্ত করতে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। অবশ্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট মাহবুব আলী, এমপি গত ১৯ আগস্ট স্থানীয় উন্নয়ন পরিকল্পনায় পর্যটনকে সম্পৃক্তকরণ ও পর্যটন সম্পর্কে সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড কর্তৃক পিরোজপুর জেলার সাথে আয়োজিত অনলাইন কর্মশালায় বক্তৃতাকালে বলেছেন, পর্যটনের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন সম্ভব। পর্যটন নারীকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করে তুলবে। পর্যটনের সাথে জড়িত সকল নারী উদ্যোক্তাদের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সকল প্রকার সহযোগিতা প্রদান করবে। তিনি পর্যটনের সাথে জড়িত নারী উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা করার বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডকে নির্দেশনা দিয়েছেন, যা পর্যটনে নারী উদ্যোক্তা সহ সংশ্লিষ্টদের আশান্বিত করবে। আশান্বিত করবে ‘বিটিইএ ন্যাশনাল উইমেন স্ট্যান্ডিং কমিটি’র ভবিষ্যৎ কার্যক্রমগুলোও।
কাজী রহিম শাহরিয়ার : প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ ট্যুরিজম এ্যান্ড এভিয়েশন মিডিয়া ফোরাম এবং পরিচালক (রিসার্চ এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট), বাংলাদেশ ট্যুরিজম এক্সপ্লোরারস এসোসিয়েশন-(বিটিইএ)।