মুঘল আমলের স্মৃতিচিহ্ন মিয়াবাড়ি মসজিদ

Share on Facebook

মাইনুল ইসলাম রিছান – বাংলাদেশে ইতিহাস ও ঐতিহ্যে পরিপূর্ণ একটি দেশ। এদেশে ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে সোমপুর মহাবিহার, সোনারগাঁও, ষাটগম্বুজ মসজিদ, আহসান মনজিল ও লালবাগ কেল্লাসহ আরও অসংখ্য দর্শনীয় স্থান রয়েছে। উপরোল্লিখিত স্থানগুলো সম্পর্কে আমরা কম-বেশী সবাই জানি। তাই আসুন এবার ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কিত অন্য একটি স্থান সম্পর্কে জানি। আপনার যদি আমার আজকের লেখার শিরোনামটি দেখে থাকেন তাহলে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন আমি কোন স্থান সম্পর্কে লিখবো বা কথা বলবো ? চলুন তাহলে জেনে নেই মুঘল আমলের স্মৃতিচিহ্ন মিয়াবাড়ি মসজিদ সম্পর্কে।

এটি বৃহত্তর বরিশাল অঞ্চলের ব্রিটিশ আমলের সূচনালগ্নে নির্মিত একটি মসজিদ। শহরের পশ্চিমদিকে বরিশাল- কড়াপুর সড়ক সংলগ্ন মিয়াবাড়িতে মসজিদটি অবস্থিত। এই মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা হায়াত মাহমুদ ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার কারণে প্রিন্স অফ ওয়েলস দ্বীপে নির্বাসিত হন এবং তার বুর্জুগ উমেদপুরের জমিদারিও কেড়ে নেয়া হয়। দীর্ঘ ষোল বছর পর দেশে ফিরে তিনি দু’টি দীঘি এবং দোতলা এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। মসজিদটির স্থাপত্যরীতিতে পুরান ঢাকায় অবস্থিত শায়েস্তা খান নির্মিত কারতলব খান মসজিদের অনুকরণ দৃশ্যমান।”-সোর্স উইকিপিডিয়া।

মসজিদ

আজ থেকে ৬০০/৫৭০ বছর আগে মিয়াদের জমিদারি ছিল তখন মিয়ারা ছিল খুবই ক্ষমতাধর। তাদের ছিল গোয়াল ভরা গরু,পুকুরভরা মাছ, ক্ষেতের পর ক্ষেত ভরা ফসলি জমি ও গোলা ভরা ধান। তাদের অধীনে ছিল প্রায় কয়েক হাজার একর জমি। যার কারণেই তারা জমিদার ছিল। স্থানীয়দের কাছে জানা যায় এইসব তথ্য। এখন সেই ক্ষমতা নেই তবে মিয়াদের বাড়ির পুরনো ইটের ফলক এখন দাঁড়িয়ে আছে ইতিহাসকে স্মরণ করিয়ে দিতে। কথা হয়েছিল মিয়াদের বংশের ১২তম মিয়ার স্ত্রীর সাথে, তিনি বললেন : “এক সময় (ভাঙা ইটের স্তুপ দেখিয়ে) এইখানে ছিল আমাদের পূর্ব পুরুষদের বাড়ি, এখন তো এখানে তেমন কিছুই নেই। তবে আমাদের এই পুরোনো মসজিদটা আজো আছে আর ওই (হাত দিয়ে কিছুদূর এর একটা পুকুর দেখিয়ে বললো) যে দেখছো পুকুরঘাট এক সময়ে এইটা ছিল মিয়াদের খাস পুকুর (শাহী পুকুর) “। এইরকম আরো বললেন যে তাদের সামনে আরো একটি পুকুর রয়েছে যেটি মসজিদের পাশে। গল্প শেষে আমি তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় নিলাম।

এবার চলুন মসজিদ সম্পর্কে জানা যাক। মসজিদটি প্রায় দেড় শতাধিক বছরের পুরানো তা মসজিদের স্থাপত্যকলা দেখলেই বোঝা যায়। মসজিদটির স্থাপত্যশৈলী সত্যি মনোমুগ্ধকর। বাহারি নকশার কারুকাজ আর লাল রং এর সমন্বয়ে মসজিদটিকে করে তুলেছে আরো আকর্ষণীয় ও নয়নাভিরাম। মসজিদটির গঠন সম্পর্কে বলতে গেলে মসজিদটি দুইতলা তবে নীচতলায় নামাজ পড়ানো হয় না দো’তলা তে নামাজ পড়ানো হয়। তাহলে, আপনি বলবেন কেন নীচতলায় নামাজ পড়ানো হয় না? আসলে নীচ তলায় মিয়াদের আদি জমিদারের কবর রয়েছে দুটি যা একদম দো’তলা উঠতে সিঁড়ির নিচে।সিঁড়ি থেকে উপরে উঠলে কিছু অংশ ছাদের মত ফাঁকা পাবেন তারপর চোখের সামনেই দেখতে পাবেন অসাধারণ কারুকাজ সম্বলিত মসজিদের দরজা ও দেয়াল। আর দেখতে পারবেন তিনটি গম্বুজ যা দেখতে সত্যি অসাধারণ। দো’তলা এই মসজিদের নিচে ছয়টি দরজা, দোতলায় তিনটি দরজা, তিনটি গম্বুজ, ৮টি বড় ও ১২টি ছোট মিনার রয়েছে।

পুকুর

এবার আসুন জেনে নেওয়া যাক, কিভাবে যাওয়া যায়! ঢাকা থেকে লঞ্চ অথবা বাস যোগে বরিশাল আসবেন। বরিশাল এসে বাস স্ট্যান্ড থেকে অটো বা মাহেন্দ্র ধরে কড়াপুর যাবেন সেখানে নেমে স্থানীয় লোকজনদের জিজ্ঞাস করলেই তারা দেখিয়ে দিবে মিয়া বাড়ি মসজিদে যাওয়ার রাস্তা। যদি একটু প্লান করে আসেন তাহলে বরিশালের আরও কিছু দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ করতে পারবেন কারণ সবগুলো স্পটই কাছাকাছি।

মিয়া বাড়ি মসজিদের বাহারি রুপ ও মুঘল আমলের নকশার কারুকাজ দেখতে চলে আসুন বরিশাল সদর এর কড়াপুর ইউনিয়নে। যদি সঙ্গে করে গামছা, লুঙ্গি অথবা গোসল করার প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে আসেন তবে বিশাল দিঘীতে সুন্দর ও মনোরম পরিবেশে গোসল করতে পারেন তবে সাতার না জানলে দিঘীতে না নামাই মঙ্গল।

মাইনুল ইসলাম রিছান
শিক্ষার্থী, ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, ড্যাফোডিল ইনিস্টিউট অব আইটি।

Leave a Reply