অনন্ত-অমর-অবিনাশী-নিরবধি কিংবা শাশ্বত প্রেমের ছবি রানঝানা
Tweet
মোহাম্মদ আলী শাহঃ শুরুতেই আপনাদেরকে একটি প্রশ্ন করছি। শেষ কবে আপনি কোন একটি হিন্দী মুভি দেখে পুরোপুরি বাকরুদ্ধ হয়েছিলেন?
আমি কখনোই মুভি রিলেটেড রিভিউ পোস্ট করি নাই, কিংবা আমি জানিও না কিভাবে করতে হয়? তাছাড়া আমি মুভি পাগল মানুষও নই। বছরে হয়ত সর্বোচ্চ ৫/৬টা মুভি দেখি এবং সেটাও আচমকা। অতএব এটি কোন রিভিউ পোস্ট নয়। এই পোস্টটি আমার ভোতা অনুভূতির মুগ্ধতার প্রয়াস, এরবেশি কিছু নয়।
যখনই কোন মুভির ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক আমার হৃদয়কে স্পর্শ করে, এবং আমি সেটিকে হৃদয়ে পুরোপুরি ধারন করার আগেই আবারো অন্য কোন ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকে হারিয়ে যাই, তখনই আমার সিরিয়াসলি স্বন্দেহ হয়, এটি সম্ভবত এ আর রেহমানের সৃষ্টি। ট্রাস্ট মি, আমি জানতাম না রানঝানা মুভির মিউজিক ডিরেক্টর ছিলেন এ আর রেহমান!? কিন্তু আমি ঠিকই তেমন কিছু অনুভব করেছিলাম।
সত্যিই আমার ধারনা ছিল না, সোনম এত অসাধারন একজন অভিনেত্রী! ধানুশ কে এতদিন ভাবতাম ওভাররেটেড, কারন করোনার এই বন্দিদশায় আমি উনার অভিনীত বেশ কিছু মুভি দেখেছিলাম! মুভির গল্প, পরিচালক এবং রাইটারকে নিয়ে একটি শব্দও বলবো না। আমি মন থেকেই চাই না, এখনো যারা রানঝানা দেখেন নি এমন একজন মানুষও এই মুভিটির একটি দৃশ্য সম্পর্কে অন্তত: আমার মাধ্যমে অবগত হউন। তবে হ্যা, কয়েকটি ডায়লগ যদি এই পোস্টে না মেনশন করি, কিছুটা অন্যায় করা হবে।
“Tumhe kya lagta hai Zoya, tum bohot hoor ki pari ho,
Tumse pyaar karna mera talent hai Zoya, Isme tumhara koi haath nahi.
Tumhare jagah koi bhi hoti to main usse bhi itna hi toot ke pyaar karta.” – Kundan
মুভিটি সম্পর্কে বলতে গিয়েও আমাকে ধার করতে হচ্ছে Kate Angell এর বিখ্যাত একটি কৌট, “OUTER BEAUTY ATTRACTS, BUT INNER BEAUTY CAPTIVATES.”
টাইটানিক মুভিতে দুইশ’ মিলিয়ন ডলার খরচ করে যে পরিমাণ ঝড় এবং শ্বাসরুদ্ধকর দৃশ্য জেমস ক্যামেরুন দেখিয়েছেন, ঠিক তেমনটাই ধানুশের চোখে-মুখে এবং ভেতরে দেখিয়েছেন পরিচালক আনন্দ এল. রাই সেটাও মাত্র ৪ মিলিয়ন ডলারে। টাইটানিকের IMDb রেটিং 7.8 দেখে যেমনটা অবাক হয়েছিলাম, তেমনি অবাক হয়েছি রানঝানার হিন্দী IMDb 7.6 রেটিং দেখে! 7.9 IMDb রেটিংয়ের Jab We Met এর গল্প শুনেছি দিনের পর দিন এবং তারপর সেটি দেখতে বাধ্য হয়েছিলাম! অথচ এই মুভিটি নিয়ে খুব একটা আলোচনা শুনিনাই। এই একটি কারনে Raanjhanaa কে কিছুটা আন্ডাররেটেড বলতে বাধ্য হচ্ছি। নইলে ২০১৩ সালে রিলিজ পাওয়া মুভিটি কেনই বা আমি দেখবো ২০২০ সালে। রানঝানার ধানুশ কে ঘিরে একটি বাক্যই মনে পড়ছে, “কেউ সেরাটা দেয় না- সেরাটা বের করে নিয়ে আসতে হয়। “ঠিক এই কাজটিই করেছেন পরিচালক।
একসময় আমিও স্লাইটলি ধানুশের মতই ছিলাম, এবং আমার সেই ভোতা অনুভূতিতে প্রচন্ড একটি ঝাঁকুনি দিয়েছে ধানুশ। যারা মুভি পাগল, আমি নিশ্চিত আপনাদের সবাই এই মুভিটি দেখেছেন, এমনকি হয়ত কেউ কেউ দেখেছেন অগণিতবার। তবে যারা এখনো দেখেন নি, অনন্ত-অমর-অবিনাশী-নিরবধি কিংবা শাশ্বত প্রেমের অন্যতম একটি মাস্টারপিস উপভোগ করতে চাইলে রানঝানা দেখুন। এমনভাবে দেখুন যেন রানঝানার একটি শব্দ কিংবা একটি দৃশ্যও মিস না হয়ে যায়।
পারস্যের কবি মওলানা জালালউদ্দিন মুহাম্মদ রুমির একটি জনপ্রিয় বাণীর মাধ্যমে পোস্টটি শেষ করছি—
আমি অতীতে হয়তো প্রেমের বর্ণনা করেছি, কিন্তু সত্যিকারের প্রেমকে যখন অনুভব করেছি তখন বাকরুদ্ধ হয়েছিলাম।
ব্যক্তিগত রেটিং ৮.৫/১০ 💥🙌!