অর্থমন্ত্রী বললেন পেঁয়াজের আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার বিবেচনা করা হবে
Tweet
ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করার পর এই নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে লাগাম টানতে পেঁয়াজ আমদানিতে বিদ্যমান ৫ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহারের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে বলে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন।
বুধবার সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভা শেষে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।
আগামী মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজে ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে এনবিআরকে চিঠি পাঠিয়েছে।
এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, “আমাদের জনগণের দুর্দশা বাড়ুক এটা আমরা চাই না। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে আমরা কেউ এই প্রত্যাশা করি না। আমাদের হাতে যেটা আছে যদি রাজস্ব খাতে কোনো কিছু করার থাকে অবশ্যই কনসিডার করা হবে। অতীতেও বিবেচনা করা হয়েছে, এখনও বিবেচনা করা হবে।”
গত সোমবার ভারত আকস্মিকভাবে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পর গতবছরের মতো লাগামহীন হয়ে উঠতে শুরু করেছে বাংলাদেশে পেঁয়াজের দাম। রাতারাতি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। দাম আরও বাড়ার শঙ্কায় মানুষও প্রয়োজনের অতিরিক্ত পেঁয়াজ কিনতে শুরু করেছেন।
সোমবার প্রতিবেশী দেশটির পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের খবর প্রকাশিত হলে রাত থেকেই রাজধানীর কোথাও কোথাও এই প্রয়োজনীয় পণ্যটির দাম বাড়িয়ে দেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।
একদিনের ব্যবধানেই প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম ৬০ টাকা থেকে বেড়ে ৯০ থেকে ১০০ টাকা হয়েছে। আর ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি।
ব্যবসায়ীদের ‘অসৎ উদ্দেশ্যকে’ ব্যবসায়ী হিসেবে কীভাবে দেখছেন একজন সাংবাদিকের এই প্রশ্নে মুস্তফা কামাল বলেন, “আমি ব্যবসায়ী ছিলাম? এখনও ব্যবসায় থাকতে পারি? আমি এখন মন্ত্রী, মন্ত্রী হলে ব্যবসা করতে পারে না। এটা ইলিগ্যাল। আমি ব্যবসা করিও না, ভালোভাবে আপনারা সবাই জানেন। আমি সব কিছু বিক্রি করে বহু আগেই পরিষ্কার।”
অসাধু ব্যবসায়ীদের জন্য কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, “যদি কোনো কারণে রাজস্ব বাড়িয়ে দেই, সে কারণে যদি দাম বাড়ে সেটার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় দায়ী। আর বাকি অংশ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ। আমার মনে হয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে দেখাশোনা করছে। অতীতেও সমস্যা হয়েছিল, পরে তা সমাধান হয়েছে।”
সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নাসিমা বেগম জানান, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের ১ লাখ ২ হাজার ৭২০টি এসপিসি পোল ১৬৪ কোটি ৮৭ লাখ ৯৮ হাজার ৪০ টাকায় বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি থেকে কেনায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন খাদ্য অধিদপ্তরের ২ লাখ টন গম ৪৩৭ কোটি ৫৬ লাখ ৮০ হাজার টাকায় রাশিয়া থেকে আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড নারায়ণগঞ্জ জেলার জালকুড়ি এলাকায় ৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বর্জ্য হতে বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের জন্য কনসোর্টিয়াম অফ এনভায়রনমেন্ট টেকনোলজি, এভারব্রাইট এনভায়রনমেন্ট প্রোটেকশন টেকনোলজি ইকুইপমেন্ট এবং এসএবিএস সিন্ডেকেটের সাথে ২০ বছর মেয়াদের চুক্তি সম্পাদনের অনুমোদন দেওয়া হয়।
এতে ২০ বছর মেয়াদে চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানকে আনুমানিক ১ হাজার ৬৬৫ কোটি ৪৮ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে।
সভায় বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) কাফকো থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার ৬৬ কোটি ৯২ লাখ ৯৯ হাজার ৮১২ টাকায় কেনায় অনুমোদন দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের অধীন ডিএপি ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (ডিএপিএফসিএল)-এর জন্য ৩০ হাজার মেট্রিক টন ফসফরিক এসিড আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ৮৭ কোটি ৫৯ লাখ ১৯ হাজার ৪৫০ টাকা।
এছাড়াও জনপথ অধিদপ্তরের ‘কুড়িগ্রাম (দাসেরহাট)-নাগেশ্বরী-ভুরুঙ্গামারী-সোনাহাট স্থল বন্দর সড়ককে জাতীয় মহাসড়কে উন্নীতকরণ’ প্রকল্পে পূর্ত কাজ সম্পাদনে সর্বোচ্চ স্কোর অর্জনকারী দরদাতা প্রতিষ্ঠান স্পেকট্রা ইঞ্জিনিয়ারিং এবং রানা বিল্ডার্সের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। এতে ব্যয় হবে ১৪৫ কোটি ৬৩ লাখ ৫৭ হাজার ৪৪১ টাকা।
এছাড়া অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) জন্য ২০২১ সালে জ্বালানি তেল আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়।
এতে বিভিন্ন বিভাজনে সর্ব মোট ৪৯ লাখ ৮০ হাজার টন জ্বালানি তেল আমদানি করা হবে। বিভাজনগুলো হল- গ্যাস অয়েল ৩৯ লাখ ৬০ হাজার টন, জেট এ-১ ৪ লাখ ৮০ হাজার টন, মোগ্যাস ১ লাখ ৮০ হাজার টন, ফার্নেস অয়েল ৮০ হাজার টন এবং মেরিন ফুয়েল ২ লাখ ৮০ হাজার টন।