বামবালি থেকে আনফিল্ডের রাজপুত্র
Tweet
মেহেদী শতাব্দী: নব্বই দশকের কথা।সেনেগাল তখনও আফ্রিকার অন্যসব দেশগুলোর মতই অর্থনৈতিকভাবে দারুন বিপর্যস্ত ও অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ একটি দেশ।শিক্ষার অভাব,দরিদ্রতায় সেখানকার মানুষ অন্ধকারে ডুবে ছিলো। অমন সময়ে জন্ম নিলো বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সেরা ফরোয়ার্ড,লিভারপুল ও সেনেগাল জাতীয় দলের মধ্যমনি “সাদিও মানে”।তার জন্ম তার পরিবারকে স্বস্থি দিতে পারেনি। প্রায়শই একবেলা খাবার জুটলে আর দুইবেলা খাবার জুটতো না তার।
খেয়ে না খেয়েই সে রাত পেরুলেই বেরিয়ে পড়তো রাস্তায়।সারাদিন ঘুরে ফিরে রাত্রে এসে আবার বাবার বকুনি।তার পরিবার ফুটবলের প্রতি তার ভালোবাসা কখনো মেনে নিতে পারেনি।কিনতু তার ফুটবলের জন্য ছিলো চমৎকার ফ্যান্টাসি। কাগজ দিয়ে বল বানিয়ে সে রাস্তায় খেলতো বন্ধুদের সাথে। যদিওবা বাবা মায়ের সহযোগিতা ছিলো না ফুটবলের জন্য।কিনতু তার চাচার গোপন সাপোর্টে ফুটবলের জন্য তার অনুরাগ বাড়তেই থাকে। ২০০২ সালে,মানের বয়স ১১ ছুঁই ছুঁই। নিজের দেশ সেনেগাল বিশ্বকাপের টিকেট পেয়েছে।কোয়ার্টার ফাইনালের গিয়েছে। গ্রামে শত দরিদ্রতার মাঝেও উৎসব উৎসব ভাব শুরু হতে লাগলো। শত মাইল পারি দিয়ে অন্য গ্রামে আছে টেলিভিশন। ওই টেলিভিশনে খেলা দেখে যখন বাড়িতে ফিরতেন।শুরু হতো বাবার আবার সেই বকাঝকা। ততদিনে মানের ফুটবল খ্যাতি গ্রাম পেরিয়ে অনেকদুর চলে গিয়েছে। স্থানীয় এক ফুটবল একাডেমিতে ট্রায়াল দিতে যায় মানে। কিনতু সেখানকার ফুটবলাররা মানেকে নিয়ে ঠাট্টা করতে লাগলো। এই ছেড়া সাততালি দেওয়া বুট নিয়ে খেলবে কিভাবে মানে।কিনতু মানে তাদের ভালো খেলার আশ্বাস দেন।এবং শেষমেষ হয়ও তাইও হয়। স্থানীয় একটি দল তাকে দলে ভিরায়। ২০১১ সালে ফরাসি ক্লাব “মেনজে” যোগদানের মাধ্যমে তার প্রফেশনাল ক্যারিয়ার শুরু হয়। এরপর কখনোই পিছে ফিরে তাকাইতে হয়নি তাকে।সালসবার্গ,সাউদাম্পটন ঘুরে ১৬ সালে ইংলিশ জায়ান্ট লিভারপুল তৎকালীন ক্লাব রেকর্ড ৪০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে নিজেদের ডেরায় নিয়ে আসেন।খুব অল্প সময়েই ক্লাবের মধ্যমনি হয়ে যান।এখন পর্যন্ত তিনি একটি চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ও একটি লীগ ট্রফি জয় করেছেন লিভারপুলের হয়ে।
যাদের খেলা দেখে নানা অভাবের ভিতর দিয়ে হলেও নিজেকে প্রস্তুত করেছিলেন। সেই মঞ্চের সেনাপতিই এখন মানে। খেয়ে না খেয়ে রাত পার করা ছেলেটা এখন প্রিমিয়ার লীগের সবচেয়ে বড় তারকা।আনফিল্ডের অলিখিত রাজপুত্র। তার এখন কোনো কিছুর কমতি নেই।তাও তাকে এখনো দেখা যায় পুরোনো মডেলের একাধিকবার সার্ভিসিং করা ভাঙা কাঁচওয়ালা “আইফোন ৩”।ভোগবিলাসিতা নয়,সরলতাই হয়তো একজন মানুষকে “মানে” তে রূপদান করে