সাদা পাথর পর্যটনের নতুন হাতছানি
Tweet
অপরূপ এক স্বর্গরাজ্য সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জে।
মাঝখানে স্বচ্ছ নীল জল আর পাহাড়ে মেঘের ভেলা। বিশ্বের সব চেয়ে বৃষ্টিপাত হয় চেরাপুঞ্জি শহরে, যা এখান থেকে দেখা যায়। সব মিলিয়ে অদ্ভুত এক সৌন্দর্যের ক্যানভাস। সিলেট নগরী থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরত্বে সীমান্তবর্তী উপজেলা কোম্পানীগঞ্জ। নতুন পর্যটন স্পট হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছে ‘সাদা পাথর’ নামক স্থানটি। এখানে বর্ষণস্নাত প্রকৃতি যেন সেজে ওঠে সবুজের আচ্ছাদনে। রাস্তার বেহাল অবস্থার মধ্যেও সাপ্তাহিক ছুটির দিনে পর্যটকদের পদভারে মুখরিত হয়ে ওঠে সাদা পাথর পর্যটন কেন্দ্র।
ভোলাগঞ্জ কোয়ারির জিরো পয়েন্টের ওপারে উঁচু পাহাড়ে ঘেরা সবুজের মায়াজাল। সেখান থেকে নেমে আসা ঝরনার শীতল পানির অস্থির বেগে বয়ে চলে যায় ধলাই নদীর বুকে। স্বচ্ছ নীল জল আর পাহাড়ের সবুজ মিলেমিশে একাকার। নদীর বুকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা পাথরের বিছানা নদীটির শোভা বাড়িয়ে দিয়েছে হাজারগুণ। সাদা পাথরের ওপর দিয়ে বয়ে চলা ঝরনার পানির তীব্র স্রোতে নয়ন জুড়ায় আর শীতল জলের স্পর্শে প্রাণ জুড়িয়ে যায় নিমিষেই।
শহুরে যান্ত্রিকতা থেকে মুক্তি পেতে সারা দেশ থেকেই ছুটে আসেন পর্যটকরা।
সাদা পাথর পর্যটন স্পট ছবিতে অনেকটা বিছনাকান্দির মতো দেখতে মনে হলেও সামনাসামনি দেখলে পার্থক্যটা ধরা পড়বে। পাথর উত্তোলন নিষিদ্ধ হওয়ায় এখনো পুরোটাই প্রাকৃতিক এই স্থানটি।
সিলেট থেকে সাদা পাথর পর্যন্ত পুরোটা পথই প্রকৃতি তার সৌন্দর্যে বিমোহিত করবে যে কাউকে। সিলেট নগরীর সীমানা ছাড়ালেই লাক্কাতুরা চা বাগান। সারি সারি চায়ের গাছ দেখতে দেখতেই যাবেন অনেকটা পথ। বাংলাদেশের প্রথম চা বাগান এটি। চা বাগানের সীমানা পেরিয়ে আরো খানিকটা এগুলে সালুটিকর বাজার, কোম্পানীগঞ্জের সীমানা শুরু। বাজার পেরুলেই একদিকে সবুজ ধানক্ষেত আর অন্যদিকে বিশাল জলাভূমি। নীল আকাশের প্রতিচ্ছবিতে জলাভূমির পুরোটাই আকাশ মনে হয়, দেখে মনে হয় জলের বুকে ভেসে বেড়াচ্ছে মেঘ। আকাশ আর জলের খেলা দেখতে দেখতেই কোম্পানীগঞ্জের টুকের বাজার। সেখান থেকে ট্রলারে দশ মিনিটে ভোলাগঞ্জ জিরো পয়েন্ট সংলগ্ন সাদা পাথর পর্যটন স্পট।
স্থানীয় বাসিন্দাদের থেকে জানা যায়, ভারতের খাসিয়া জৈন্তিয়া পাহাড় থেকে নেমে আসা ধলাই নদীর পানির সঙ্গে প্রতিবছর বর্ষাকালে নেমে আসে প্রচুর পাথর। ধলাই নদীর তলদেশেও রয়েছে পাথরের বিপুল মজুদ।
দেশের সর্ববৃহৎ পাথর কোয়ারি ভোলাগঞ্জের উৎসমুখ সাদাপাথরে সবসময়ই চেরাপুঞ্জি থেকে স্বচ্ছ নীল ও ঠাণ্ডা পানি নেমে আসে।
উপযুক্ত সময় :
ভোলাগঞ্জ যাবার সবচেয়ে ভাল সময় হচ্ছে বর্ষাকাল ও তার পরবর্তী কিছু মাস অর্থাৎ জুন থেকে সেপ্টেম্বর এই সময় যাওয়ার জন্যে সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। অন্যসময় গেলে সেখানে পাথরের সৌন্দর্য দেখতে পেলেও নদীতে বা ছড়ায় পানির পরিমাণ কম থাকবে। আর শীতকালে সাদা পাথর এলাকায় নৌকা চলাচল করার মত পানি থাকেনা তখন পায়ে হেঁটে ঘুরে দেখতে হবে।
কীভাবে যাবেন?
সিলেট নগরীর আম্বরখানা থেকে সিএনজি চালিত অটোরিকশা চলে সিলেট কোম্পানীগঞ্জ রুটে। ১২০ টাকা জনপ্রতি ভাড়ায় কোম্পানীগঞ্জের টুকের বাজারে নামাবে। টুকের বাজার থেকেই ট্রলারে চলে যেতে পারেন সাদা পাথর। কোম্পানীগঞ্জ পৌঁছে টুকের বাজার ঘাট থেকে ট্রলারে সাদা পাথর পৌঁছাতে ৩০ মিনিটের মতো সময় লাগবে। যাওয়া-আসায় নৌকা ভাড়া পড়বে ৮০০-১০০০ টাকা। এখানে ইঞ্জিন চালিত নৌকা রিজার্ভ করে নিতে হয়, অন্যথায় ভুগতে হবে। তাই গ্রুপে ৭/৮জন মিলে গেলে খরচটা একটু কম পড়ে। সিলেট থেকে ভোলাগঞ্জ সরাসরিও চলে যাওয়া যায়। ১০ মাইল নামক স্থান থেকে নৌকা নিলে ৫০০-৬০০ টাকা ভাড়া পড়বে, তবে এ ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হবে অটোরিকশায়। তবে এখানকার মূল সৌন্দর্য্য কেবল বর্ষাকালে মিলবে। শীতকালে নদীর পানি প্রবাহ কমে যায় বলে নৌকায় চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তখন সাদা পাথর এলাকায় যেতে হবে নদীর বুক দিয়ে পায়ে হেটে।
মুহাম্মেদ রহমান হাবিব
(ট্যুর কোওর্ডিনেট – দ্যা ট্রাভেলপোকা)