ঘুরে আসতে পারেন ফুলের রাজ্য গদখালী
Tweet
শহিদুল ইসলাম সাগরঃ নগরজীবনে কাজ করতে করতে যাঁরা হাঁপিয়ে উঠেছেন, তাঁদের জন্য ভ্রমণ খুব প্রয়োজনীয়। ভ্রমণ মানুষের অজানাকে জানায়, দূর করে মনের ক্লান্তি। আর আপনার ভ্রমণ হয় যদি বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ফুলের হাট গদখালী, তাহলে তো আর কথাই নেই। আমাদের দেশের সর্ববৃহৎ ফুলের জোগান আসে এই গদখালী থেকে। মোট উৎপাদনের প্রায় ৮০ ভাগই আসে এখান থেকে। এখানেই বসে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ফুলের পাইকারি বাজার। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে এখানকার কৃষকরা ফুলের চাষ করে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য লড়ে যাচ্ছেন। তো, আর দেরি কেন, সময়-সুযোগ করে ঘুরে আসুন গদখালীতে।
গদখালী নামের ইতিবৃত্তঃ একসময় পর্তুগিজ ডাকাত সরদার রডারিক এ অঞ্চলে ঘাঁটি গেড়ে মানুষের ঘুম হারাম করে দিয়েছিল। একদিন সে স্থানীয় কমলেশের বাড়িতে হানা দেয়। সেখানে তার সুন্দরী মেয়ে মাদালসার সঙ্গে দেখা হয়ে যায় রডারিকের। মাদালসার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়। ক্ষমা চেয়ে প্রেম নিবেদন করে। পণ করে, আর ডাকাতি করবে না। একপর্যায়ে মাদালসাদের বাড়ির পাশেই আশ্রয় নেয় রডারিক। আর মাদালসাকে পাওয়ার জন্য বাঘের সঙ্গে লড়াইও করে। এ ঘটনার পর মা কালীর নামে রডারিককে বরণ করে নেয় মাদালসা। পরে দুজনেই সন্ন্যাসব্রত গ্রহণ করে। তৈরি হয় একটি মন্দির। রডারিকের ‘গড’ আর মাদালসার ‘কালী’ নিয়ে এই মন্দিরের নাম হয় ‘গডকালী’ মন্দির। সেই নামের সূত্র ধরে পরে এই জায়গার নাম হয় ‘গদখালী’।
যশোর-বেনাপোল রোড ছেড়ে ডানে-বাঁয়ের গ্রামগুলোর পথ ধরে এগিয়ে গেলেই দেখা মিলবে দিগন্ত জোড়া ফুলের ক্ষেত। লাল, নীল, হলুদ, বেগুনি আর সাদা রঙের এক বিস্তীর্ণ চাদর যেন বিছিয়ে রেখেছে চরাচরে। জমিতে ফুল চাষ করেন এখানকার চাষিরা। বাড়ির চারধারে শৌখিন ফুলের বাগান নয়। মাঠের পর মাঠজুড়ে ফুলের ক্ষেত। ফুলই এখানে ফসল। অনেকেই ফুলের রাজধানী বলে এই গদখালীকে। পথের দুই ধারে গোলাপ, রজনীগন্ধা, গ্ল্যাডিওলাস, গাঁদা, জারবেরা ফুলের ক্ষেত। রজনীগন্ধা, গ্ল্যাডিওলাস, গোলাপ আর গাঁদা ফুলের চাষ হয় এখানে। যেখানে গেলে চোখে পড়বে কৃষকদের ব্যস্ততা। কেউ ফুল কেটে গরুর গাড়িতে করে বাজারে নিয়ে যাচ্ছে, সেখান থেকেই বান্ডিল করে চালান হয়ে যাচ্ছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে। পুরুষদের পাশে নারী-শিশুরাও কাজ করছে ফুলের ক্ষেতে। কেউ ফুল কাটছে, কেউ নিড়ানি দিচ্ছে। আবার কেউ ফুলের বীজ বুনছে। বাতাসে ফুলের মিষ্টি সৌরভ, মৌমাছির গুঞ্জন, প্রজাপতির ডানার জৌলুস আর রঙের অফুরান সৌরভের সামনে দাঁড়িয়ে বিশ্বাসই হতে চায় না জায়গাটা আমাদের রক্ত আর কোলাহলে ভরা মাটির পৃথিবীরই একটা টুকরা।বন্ধুরা তাহলে আর দেরি কেন এখনি সিদ্ধান্ত নিন আর চলুন আমাদের সাথে ১৯ নভেম্বর রাতের বাসে রওনা দেই।