মানুষখেকো পিরানহা মাছ

Share on Facebook

পিরানহা মাছ দেখতে অনেকটাই রূপচাঁদার মতো। সাধারণত আকারে ৬” ইঞ্চি থেকে ১২” ইঞ্চি বড় হয়। এ মাছ চাষ, উৎপাদন, পোনা উৎপাদন, বংশ বৃদ্ধি, বাজারে বিক্রি এবং বাজার থেকে ক্রয় সরকারীভাবে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নানা কায়দায় এর উৎপাদন, চাষ, বাজারজাতকরণ বিপণন, প্রচার-প্রসার নিষন্ত্রণে নেওয়া হয়েছে।আমাদের দেশে তো মৎস্য সংরক্ষণ আইনেই রয়েছে পিরানহা’র নিষেধাজ্ঞা। রয়েছে সংসদে বিল উত্থাপনের নথিও।

দক্ষিণ আমেরিকার ওরিনকো, আমাজান সাও ফ্রান্সিসকো নদীর অববাহিকায় রাক্ষুসে মাছ পিরানহা (Pygocentrus Nattereri) সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়। যদিও শীতল পানিতে এরা বাঁচে না, তারপরও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উইনেবাগো এবং উইসকোনসিন হ্রদেও এই মাছ দেখতে পাওয়া যায়।

মাছটিকে রাক্ষুসে বলা হয় এই কারণে যে, মাছটির ছোট চোয়াল হলেও এরা ত্রিভুজাকৃতির ক্ষুরের মতো ধারালো দুই পাটি দাঁত দিয়ে শিকার বস্তুর দেহ ফুটো বা গা থেকে মাংস ছিঁড়ে নিতে পারে। প্রজনন পরবর্তী সময়ে এরা আরো বেশি হিংস্র হয়ে উঠে।
স্বাদুপানির রাক্ষুসে মাছ পিরানহা বাংলাদেশে বাহারি মাছ হিসেবে প্রবেশ করে। পরে তা দেশের বেশ কিছু অসাধু হ্যাচারি মালিক ও মাছ চাষিদের মাধ্যমে ছড়াতে থাকে। এ সময় প্রায় সব চাষের পুকুরে ও কিছু কিছু জলাশয়ে ছড়িয়ে পড়ে পিরানহা, যা আমাদের মৎস্য জীববৈচিত্র্যের জন্য ভয়াবহ হুমকি স্বরূপ। এমন সময় সরকার এর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। কিন্তু এই নিয়ন্ত্রণ মাত্রা ময়মনসিংহে বহুলাংশেই কম। যা দেখা গেলো সরেজমিনেই।

থাইল্যান্ড বা তার আশপাশের দেশের কোনো চাষী প্রথমে এই মাছটি বাংলায় নিয়ে আসতে পারেন বলে ধারণা করা হয়। যেভাবেই আসুক না কেন, গত ৫ বছর ধরে ময়মনসিংহ জেলাসহ এর প্রতিটি উপজেলায়, বিশেষ করে ত্রিশালে পিরানহা মাছটির চাষ লালনপালন হয়েছে এবং বাজারে বিক্রি হয়েছে/হচ্ছে প্রকাশ্যে। ‘চান্দা মাছ’, ‘সামুদ্রিক চান্দা’ বা বড় রূপচাঁদা হিসেবে এটিকে চালানো হয়।

বাংলাদেশ একটি মৎস্য বৈচিত্র্যসমৃদ্ধ দেশ। এখানে ২৬০ প্রজাতির স্বাদু পানির মাছ এবং ৪৭৫ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ রয়েছে। আর পিরানহা মাছটি দেশের অধিকাংশ ছোট মাছকে প্রকৃতি থেকে বিলুপ্ত করে ফেলবে যদি এ মাছ বাস্তবেই নিষিদ্ধ না হয় তো।

পিরানহা দক্ষিণ আমেরিকার মাছ। মোটামুটি উষ্ণ আবহাওয়াই পছন্দ করে।নদীতে চড়ে বেড়ানো মাছদের মধ্যে পিরানহা আকারে তেমন বড় নয়,কিন্তু আকার দিয়ে তাদের বিচার করা ঠিক নয়।গড়পরতা তাদের আকার হয় ৬ইঞ্চি-১২ইঞ্চি, মাঝে মাঝে ব্যতিক্রম ১৮ইঞ্চিও দেখা যায়। আট থেকে দশ বছর বাঁচে অনুকুল পরিবেশে।তাদের মুখ,চোয়ালও ছোট,কিন্তু তাতে আছে ক্ষুরের মত ধারালো দুই পাটি দাঁত।ত্রিভুজাকৃতির মত ধারালো এই দাত দিয়ে সে শিকারির দেহ ফুটো ও গা থেকে মাংশ খুবলে নিতে পারে।পিরানহারা দলবদ্ব হয়ে বিচরন করে। প্রজনন পরবর্তি সময় থাকে সবচেয়ে হিংস্র।যেকোনো প্রানীর হাড় থেকে মাংস খুলে ফেলা তাদের জন্য মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যাপার ! ব্রাজিলের আদিবাসীরা পিরানহার দাত অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে।

পিরানহা মাছ খেলে মানবদেহের মারাত্মক ক্ষতি হয়। বিশেষ করে কিডনী ও অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অকেজো হয়ে পড়ে। এসব মাছ রান্না করলে অত্যধিক তাপে বিষের উপাদান এক অবস্হা থেকে অন্য অবস্হায় রূপান্তর হতে পারে। কিন্তু এতে বিষ খুব একটা তারতম্য হয় না। যারা মনে করেন রান্না করলে বিষ নষ্ট হয়ে যায় তা নিতান্ত ভুল ধারণা। খালি পেটে পিরানহা খাওয়া খুবই বিপজ্জনক এবং ঝুঁকিও বেশি। এসব মাছ খেলে সাময়িক ও দীর্ঘমেয়াদী রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা, তাই বেশি পিরানহা মাছকে রাক্ষুসে মাছ বলা হয় ।

 

Leave a Reply