সেন্ট মার্টিন দ্বীপের জানালা
Tweet
মোহাম্মদ আলী শাহঃ প্রথমবার সেন্টমার্টিন গিয়েছিলাম ২০১১ সালে। সাথে ছিল বছরখানিক আগে বিবাহের জালে আবদ্ধ হওয়া আমার একমাত্র আপন বউ। ঐ সময়টায় যা বেতন পেতাম, তাতে করে সম্ভবও ছিল না খুব ভাল মানের কোন হোটেলে উঠা। তবুও মোটামুটি মানের একটি হোটেলে উঠেছিলাম আমরা এবং আমরা সবকিছুতেই খুব খুশি ছিলাম। মোটে তিন রাত ছিলাম সেন্টমার্টিন দ্বীপে। ঐ তিনদিন আমার বউ সৈকতের যেখানেই ডাব দেখতো, সেখানেই দাড়িয়ে যেতো। প্রথমবার এসেছি কোথাও ঘুরতে, তাই না করতে পারছিলাম না। মুখে মধু অন্তরে বিষ নিয়ে ডাবের অর্ডার করতাম। মজার ব্যাপার ছিল, আমাকে জোর করে হলেও ডাবের পানি খেতে হতো যেন বউ শাঁস খেতে পারে। ঐ তিনদিন ডাবের পানি খেতে খেতে বিরক্ত হয়ে গিয়েছিলাম। আমি পানি খাই আর সে খায় শাঁস। আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না সেই পানি ফেলে দেয়া। কষ্টের টাকায় কেনা ডাব বলে কথা।
অসম্ভব চমৎকার কেটেছিল আমাদের সেই তিনটি দিন। আমাদের সাথে সফর সঙ্গী হিসেবে ছিলেন আরো একটি কাঁপল। তাদের রোমান্স দেখে এবং একজন অন্যজনকে খাইয়ে দেয়া দেখে বউয়ের জন্য অনেক মায়া হয়েছিল কিন্তু বুঝতে দেইনি। আহারে আমি কতো কাঠখোট্টা!
সমস্যা বেঁধেছিল বউ যখন বায়না ধরলো ছেড়া দ্বীপ যাবে। আমি বান্দা তো যাবোই না। কাঠের বড় নৌকা দেখার পর আমার বারবার মনে হচ্ছিলো পরিবারের সবার কথা। বউকে বললাম, তুমি গেলে যাও আমি যেতে পারবো না। মনে মনে ভাবছিলাম, বউ গেলে বউ পাবো! তাহাকে খুশি করার জন্য শেষমেষ ঠিকই গিয়েছিলাম একদম ইচ্ছের বিরুদ্ধে। পরে নৌকায় উঠে অন্য সবার সাথে কথা বলার পর বুঝতে পারলাম, আমিই ছিলাম একমাত্র সাঁতার জানা ব্যক্তি আমাদের মধ্যে! অসম্ভব আনন্দে দুই দিন চলে গেল কিছু বুঝে উঠার আগেই। একদম স্বপ্নের কাছাকাছি ছিল আমাদের সবকিছু।
যেদিন চলে আসবো ঠিক তার আগেরদিন সন্ধ্যায় আমার পুরো আনন্দে ভাটা পড়েছিল একটি দৃশ্য দেখার পর। কয়েকজন কাপলকে সেবার দেখেছিলাম তাবু টাঙিয়ে বিচে রাত কাটাতে। একজনকে দেখছিলাম গিটার হাতে টিউন করতে, একজনকে দেখলাম বার্বিকিউ করার কাজে খুবই ব্যস্ত, বেশ কয়েকজন মিলে ছোট বারে ফুটবল খেলছিল, আর তাদের গ্রুপের অন্যসব মেয়েরা বসে কেউ কেউ ছবি তুলছিলেন এবং বাকিরা গল্প করছিলেন। মোটামুটি ১৫-২০ জনের একটি গ্রুপ ছিলেন উনারা। কথার প্রসঙ্গে জেনেছিলাম, পাশেই ছিল উনাদের হোটেল। ভাল না লাগলে নাকি হোটেলে চলে যাবেন সেই প্ল্যানেই তাবু সাজিয়েছেন। উনারা পুরো রাত তাবুতে গল্প করে আর সাগর পাড়ে বসে থেকেই সেই রাতটি কাটিয়ে দিয়েছিলেন। খুব ভোরে বউ নিয়ে ছবি তুলতে গিয়ে উনাদেরকে দেখে সবকিছু দেখে বুঝতে আর বাকি রইলো না।
মাঝে মধ্যেই ভাবি, ইশ এমনভাবে যদি সাগড় পাড়ে একটি রাত কাটিয়ে দিতে পারতাম কত মজাই না হতো। করোনা পরবর্তি সময়ে বারবার মনে হয়, জীবনটা উপভোগের। কিছুদিন আগে একটি পরিসংখ্যানে উঠে এসেছিল, একজন মানুষ এক জীবনে যতটা উপার্জন করেন, তার সর্বোচ্চ ৩০ ভাগ খরচ করেন। সেই ৩০ ভাগের ৫ ভাগও নিজের জন্য খরচ করেন না। এরপর থেকে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমি যতটা উপার্জন করবো তার ৭০-৮০% খরচ করবো ইনশাআল্লাহ।
ভাবি, এমন একটি কিংবা দুটি তাবু না হয় আমি কিনলাম কিংবা ম্যানেজ করলাম, কিন্তু কোথায় পাবো বাকিদের? তাছাড়া সেন্টমার্টিন ছাড়া আর কোথাও তো এতটা নিরাপদও নয় প্রিয়জন নিয়ে তাবুতে বসে কিংবা সাগড় পাড়ে বসে সাগরের নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করার? সাগরের নৈসর্গিক মায়া আমাকে টানছে, খুব টানছে।
নোটঃ ফিচার ফটো হিসেবে ব্যবহৃত ছবিটি সংগীত।