আপনার আমার দায়িত্ব হচ্ছে নিজ থেকেই ছেঁড়াদ্বীপে না যাওয়া

Share on Facebook

অবশেষে কর্তৃপক্ষ পর্যটকদের জন্য সেন্ট মার্টিন দ্বীপের কাছে গড়ে উঠা ছেঁড়াদ্বীপ ভ্রমনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। তাদেরকে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। একটা প্রবাল দ্বীপ গড়ে উঠতে হাজার বছর সময় লাগে।

ছেঁড়াদ্বীপ এখনো সম্পুর্ন গড়ে উঠেনি। এখানে দেখারও তেমন খুব বেশি কিছু নাই। অথচ একটা উদীয়মান দ্বীপকে আমরা অর্থাৎ পর্যটকেরা গড়ে উঠার সুযোগ দিচ্ছি না। দ্বীপটিকে বাঁচানোর জন্য বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় এই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

নিষেধাজ্ঞা দিক বা না দিক, কার্যকর হোক বা না হোক – পর্যটক হিসাবে আপনার আমার দায়িত্ব হচ্ছে নিজ থেকেই ছেঁড়াদ্বীপে না যাওয়া। দ্বীপটাকে গড়ে উঠতে দিন আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য।

আজ থেকে ৫/৬ বছর আগে আমরা সেন্ট মার্টিন দ্বীপে কতজন পর্যটক যেতে দেয়া উচিৎ – মানে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের টুরিষ্ট ক্যারিং ক্যাপাসিটি কত হওয়া উচিৎ – তার উপর একটা জরিপ করেছিলাম। তাতে আমরা দেখিয়েছিলাম সেন্ট মার্টিন দ্বীপের পরিবেশ এবং জীব বৈচিত্র্য রক্ষা করতে হলে কোন মতেই প্রতিদিন গড়ে সর্বোচ্চ দুই হাজারের বেশি পর্যটককে ভ্রমনের অনুমতি দেয়া উচিৎ নয়। এ ছাড়াও সেন্ট মার্টিন দ্বীপ থেকে বেশ কিছু সংখ্যক স্থানীয় জনসাধারনকে সরিয়ে প্রধান ভুখন্ডে নিয়ে আসা প্রয়োজন।

কিন্তু কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করতে আমরা ব্যার্থ হয়েছিলাম। পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র্য রক্ষার জন্য অনেক দেশই অনেক গন্তব্যস্থান পর্যটকদের জন্য হয় নিষিদ্ধ নয়তো সীমিত করেছে। এর একটি উদাহরন হল পেরুর মাচুপিচ্ছু। আমাদের পাশেই থাইল্যান্ড সরকার কোহখাই নক, কোহখাই নুই এবং কোহখাই নাইইন নামের তিনটি দ্বীপে পর্যটকদের জন্য ভ্রমন নিষিদ্ধ করেছিল।

করোনা ভাইরাসের পর পর্যটনের কি পরিবর্তন আসতে পারে – এখন এই বিষয় নিয়েই গবেষণা, সেমিনার ইত্যাদি কত কিছু হচ্ছে। ওদিকে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলছেন আমাদেরকে করোনা ভাইরাসের মধ্যেই লড়াই করে বেঁচে থাকার প্রস্তুতি নিতে হবে।

যেটাই হোক না কেন, আগামির পর্যটনে স্বাস্থ্য সুরক্ষার উপর অবশ্যই জোড় দিবে পর্যটকেরা। স্বাস্থ্য সুরক্ষাই হোক আর পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র্য রক্ষার জন্যই হোক, আমাদের এখন থেকেই প্রতিটি পর্যটন গন্তব্যের TCC বা টুরিস্ট ক্যারিং ক্যাপাসিটি নির্ধারণ প্রয়োজন।

কক্স বাজার সমুদ্র সৈকতে হাজার হাজার মানুষের ভিড় এড়াবার জন্য একশত বিশ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সমুদ্রতটে আরো অনেক সুন্দর সৈকত বানিয়ে কক্স বাজার সমুদ্রসৈকতের উপর চাপ কমাতে পারা যায়। প্রয়োজনে অধিক পর্যটক সমাবেশের গন্তব্য গুলোতে টুরিস্ট প্রতি কিছু পরিমানের লেভি বা কর আরোপের ব্যবস্থা করতে হবে। পৃথিবীর বহু স্থানেই এমন লেভি আরোপের ব্যবস্থা আছে যা “Polluters Pay” নামে পরিচিত। আমাদের বিপন্ন পর্যটন গন্তব্যের জন্য এ ধরনের কর আরোপ করা যায় কিনা তা ভেবে দেখার অবকাশ আছে। এই কর দিয়েই অধিক সংখ্যক পর্যটক আগমনের জন্য ঐ গন্তব্যের পরিবেশগত বা অন্যান্য যে ক্ষতি হচ্ছে তা রক্ষা করার কাজে ব্যয় করা যেতে পারে।

যাই হোক এসব বিষয় নিয়ে অনেক ভিন্নমত থাকতে পারে। আলোচনা সমালোচনায় একটা ভাল উপায় বের হয়ে আসবেই। মনে রাখতে হবে এই সুন্দর পৃথিবীর প্রকৃত মালিক এই প্রতিবেশ, পরিবেশ আর জীব জন্তু। আমরা মানুষেরা কিন্তু এদেরই অতিথি। তাই অতিথি হিসাবে কিছু বছরের জন্য এদের রাজত্বে এসে এদের ধ্বংশ করার অধিকার আমাদের নেই। একটা মূল্যবান কোটেশন আমি প্রায়ই উদ্ধৃত করে থাকি। নেটিভ আমেরিকান একটা প্রবাদ উল্লেখ করে আমার লিখা শেষ করি:
‘যখন শেষ গাছটি কেটে ফেলা হবে,শেষ মাছটি খেয়ে ফেলা হবে, শেষ জলাধারটি বিষাক্ত হবে, তখন বুঝবে টাকা খাওয়া যায় না।’

 

অধ্যাপক ড. সৈয়দ রাশিদুল হাসান

পর্যটন বিশেষজ্ঞ

Leave a Reply