চুলের যত্ন নিয়ে যতো কথা
Tweet
চটজলদি শ্যাম্পু, স্টাইলিংয়ের উপরেই আমরা ভরসা করি বেশি৷ ফলে দিনের পর দিন পার্লারের কেমিক্যাল আর হিটিং টুলসের ভরসায় থাকতে থাকতে কখন যে চুল শুকনো হতে শুরু করে আর কখন যে ডগা ফেটে যায়, আমরা টেরও পাই না৷ আর একবার চুলের ডগা ফেটে গেলে চুল তো বাড়েই না, বরং মাঝখান থেকে ভেঙে যায়, চুল রুক্ষ, অসুস্থ ও নিষ্প্রাণ দেখায়। কেটে ফেলা ছাড়া তখন আর কোনও উপায় থাকে না।
কেন ফেটে যায় চুলের ডগা?
এক কথায় উত্তর, আর্দ্রতার অভাব। চুল অতিরিক্ত শুষ্ক হয়ে গেলে বিবর্ণ হয়ে যায়, ডগার দিক থেকে চিরে যায়। নানা কারণে চুল আর্দ্রতাবিহীন, শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। আসুন দেখে নেওয়া যাক, কী কী কারণে চুল শুকনো হয়ে ফেটে যেতে পারে।
ঘনঘন শ্যাম্পু করা
কড়া শ্যাম্পু দিয়ে বারবার চুল ধুলে চুলের আর্দ্রতা নষ্ট হয়ে যায়। শ্যাম্পু যদি চুলের ধরনের সঙ্গে মানানসই না হয়, তা হলেও তা চুল রুক্ষ করে দিতে পারে। চুল ক্রমাগত রুক্ষ হতে হতে একসময় চুলের ডগা ফেটে যাওয়া খুব স্বাভাবিক!
অতিরিক্ত ব্লো ড্রাই
চুল সেট করে সুন্দর রাখতে সবারই ভালো লাগে। কিন্তু নিয়মিত ব্লো ড্রাই করলেও চুলের আর্দ্রতা হারিয়ে যায়। ড্রায়ারের গরম হাওয়া চুলের স্বাভাবিক আর্দ্রতা শুষে নিয়ে চুল নিষ্প্রাণ আর রুক্ষ করে তোলে।
হাইলাইট আর হেয়ার কালার
চুলে রং করা মানেই একগাদা রাসায়নিক চুলে লাগানো। ঘন ঘন চুলে রং করলে বা হাইলাইট করানোর অর্থ বারবার কেমিক্যাল লাগানো। বিশেষ করে কম দামি রং ব্যবহার করলে চুলের মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
অতিরিক্ত চুল আঁচড়ানো
খুব দ্রুত হাতে ঘনঘন চুল আঁচড়ালে বা ব্রাশ করলে ঘর্ষণজনিত কারণে চুলের ডগা ফেটে যাওয়া ফেটে যাওয়া বিচিত্র নয়।
অতিরিক্ত স্টাইলিং
চুল বারবার স্ট্রেট করা, কার্ল করা বা পার্ম করানোর কারণে প্রচণ্ড রুক্ষ হয়ে যায়। এ সব ক্ষেত্রে হিটিং টুলস দিয়ে চুলের স্বাভাবিক গঠনটা পালটে দেওয়া হয় এবং হেয়ার ফলিকলের আর্দ্রতা ক্রমশ হারিয়ে যেতে থাকে। ফল, শুষ্ক, নিষ্প্রাণ, ভঙ্গুর চুল।
জিনগত কারণ
শুধু বাহ্যিক কারণেই নয়, জিনের কারণেও অনেকের চুল জন্মগতভাবেই শুষ্ক হয়। তা ছাড়া জিনগত কারণে অনেক ক্ষেত্রে চুলের গঠন কোথাও মোটা আবার কোথাও পাতলা হতে পারে। অসমান টেক্সচারের কারণে চুলের ডগা ফেটে চুল ভেঙে যায়।
চুলের ডগা ছেঁটে রাখুন
ডগা ফাটা চুলের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি এটি। তা ছাড়া চুলের শেপ ঠিক রাখতে আর চুল দ্রুত লম্বা করতে হলেও নিয়মিত ট্রিম করে ফেলা দরকার। প্রতি দু’ তিন মাস অন্তর চুল ছেঁটে ফেলুন, সুস্থ ও সুন্দর চুল পাবেন।
চুল ধোবেন ঠান্ডা জলে
গরম জল চুলের ভীষণ ক্ষতি করে দেয়৷ এতে চুলের স্বাভাবিক তেলাভাব আর আর্দ্রতা দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়, চুল বিবর্ণ ও রুক্ষ হয়ে যায়৷ আর দিনের পর দিন চুল শুকনো হয়ে যাওয়া মানেই অবধারিত ডগা ফেটে যাওয়া৷ তাই সব সময় চুল ধোওয়ার জন্য ঠান্ডা জলই ব্যবহার করুন৷ প্রথমদিকে যদি একান্তই গরম জল ব্যবহার করতেই হয়, শেষবার ধোওয়ার সময় অবশ্যই ঠান্ডা জল দিয়ে ধোবেন৷
নারকেল তেল লাগান
যে কোনও ধরনের চুলের সমস্যাতেই নারকেল তেল খুব কাজের। বাটিতে পরিমাণমতো নারকেল তেল গরম করে চুলে ভালোভাবে মাসাজ করে লাগান। চুলের ডগার দিকটায় বেশি মনোযোগ দেবেন। ছোট তোয়ালে বা শাওয়ার ক্যাপ লাগিয়ে আধ ঘণ্টা রেখে শ্যাম্পু করে ফেলুন। নারকেল তেল চুল নরম, আর্দ্র রেখে ডগা ফাটা প্রতিরোধ করে।
প্রচুর পানি খান
আপনার শরীর ভিতর থেকে আর্দ্র থাকলে চুলও আর্দ্র থাকবে৷ আপনার চুলের গঠনের এক-চতুর্থাংশই জল৷ পর্যাপ্ত জল না খেলে স্বাভাবিকভাবেই তাই চুল রুক্ষ হতে শুরু করে। চুলের ডগা ফাটা আটকাতে চুলের আর্দ্রতা বজায় রাখা খুব দরকার। চুল আর্দ্র ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল রাখতে তাই দিনে অন্তত আট গেলাস জল খান।
ডিমের পুষ্টি
রুক্ষ, ডগা ফাটা চুলের জন্য ডিমের প্রোটিন আর ফ্যাট ভীষণ কাজের। আপনার চুলের দৈর্ঘ্য আর ঘনত্বের উপর নির্ভর করে একটা বা দুটো ডিম ভেঙে নিন। তার সঙ্গে মেশান আধ চামচ অলিভ অয়েল। ভালো করে মিশিয়ে নিন। সমস্ত চুলে ভালোভাবে মাখিয়ে মিনিট দশেক রাখুন। এরপর কুসুমগরম জল দিয়ে ধুয়ে ফেললেই চুলে আসবে নতুন সজীবতা।
মধুর ম্যাজিক
চুল আর মাথার ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে মধু দারুণ কাজ করে। পরিমাণমতো মধু আর অলিভ অয়েল একসঙ্গে মিশিয়ে চুলে লাগিয়ে 20 মিনিট রেখে শ্যাম্পু করে নিন৷