বেবিচকের আয় নয় মাসে নেমে এসেছে হাফে
Tweet
দেশে করোনার সংক্রমণ বাড়ায় গত ২৪ মার্চ সব আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। গত ১ জুন থেকে সীমিত পরিসরে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দেয় সংস্থাটি। তবে বিভিন্ন দেশের বিধিনিষেধের কারণে যাত্রী কম থাকায় আগের তুলনায় খুবই সীমিতসংখ্যক ফ্লাইট চালু করেছে এয়ারলাইনসগুলো। ফলে অ্যারোনটিক্যাল ও নন-অ্যারোনটিক্যাল দুই খাতেই আয় কমেছে বেবিচকের। চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে এ দুই খাত থেকে বেবিচকের আয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে ৫১ দশমিক ২৭ শতাংশ। এ অবস্থায় নতুন উন্নয়ন প্রকল্প হাতে না নেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে বেবিচক।
বেবিচকের অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) সংস্থাটির রাজস্ব আয় হয়েছে ৫৭৫ কোটি ৫৭ লাখ ৪৭ হাজার ৭৮২ টাকা। এর মধ্যে অ্যারোনটিক্যাল খাত থেকে ৪৭৬ কোটি ৫৩ লাখ ৬৩ হাজার ৪০৭ টাকা এবং নন-অ্যারোনটিক্যাল খাত থেকে এসেছে ৯৮ কোটি ৭৩ লাখ ৩১ হাজার ৬৯০ টাকা। অন্যদিকে গত বছর প্রথম নয় মাসে বেবিচকের রাজস্ব আয় ছিল ১ হাজার ১৮০ কোটি ৯৪ লাখ ২৩ হাজার ৫১৯ টাকা। সে হিসেবে চলতি বছর প্রথম নয় মাসে বেবিচকের রাজস্ব আয় কম হয়েছে ৬০৫ কোটি ৩৬ লাখ ৭৫ হাজার ৭২৭ টাকা।
বেবিচকের অ্যারোনটিক্যাল আয়ের মধ্যে রয়েছে আকাশপথ ব্যবহারের মাশুল (এয়ারস্পেস চার্জ), রাডারের তথ্য ব্যবহার, ওভারফ্লাইং, বিভিন্ন বিমানবন্দরে গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং মাশুল প্রমুখ। অন্যদিকে বিমানবন্দরে উড়োজাহাজের পার্কিং, টার্মিনালসহ বিমানবন্দর এলাকায় বিভিন্ন স্থাপনা ইজারা দেয়া বাবদ পাওয়া আয়গুলো যুক্ত হয় নন-অ্যারোনটিক্যাল খাতে।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, কয়েক বছর ধরেই নিয়মিত যাত্রী বাড়ছিল শাহজালাল বিমানবন্দরে। স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন গড়ে ৩০ হাজার যাত্রী চলাচল করত এ বিমানবন্দরে। বেবিচকের তথ্য বলছে, ২০১৯ সালে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ মিলে আকাশপথের যাত্রী সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৩০ লাখ ৭৭ হাজার জন। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন রুটে প্রতিদিন প্রায় ১৫০ ফ্লাইট চলাচল করেছে। ওই বছর আন্তর্জাতিক রুটের যাত্রী ছিল প্রায় ৮৫ লাখ ৯৬ হাজার এবং অভ্যন্তরীণ রুটে ৪৪ লাখ ৮২ হাজার। আগের বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালে আন্তর্জাতিক রুটে যাত্রী ছিল ৮২ লাখ ৬৪ হাজার এবং অভ্যন্তরীণ রুটে ছিল ৪১ লাখ ২৫ হাজার। তবে এ বছর মার্চে চীন ও যুক্তরাজ্য ছাড়া সব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের আকাশপথে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। মে মাস থেকে যুক্তরাজ্যের সঙ্গেও ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যায়। জুন থেকে সীমিত পরিসরে ফ্লাইট চলাচল শুরু হওয়ায় আয়ের পরিমাণ কিছুটা বাড়তে থাকে। তবে তা আগের তুলনায় অনেক কম।
এ প্রসঙ্গে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে বলেন, দেশের বিমানবন্দরগুলো ব্যবহারসহ বিভিন্ন ইস্যুতে এয়ারলাইনসগুলো থেকে চার্জ আদায় করে বেবিচক। এসব চার্জ বাবদ প্রতি মাসে ৯০-১০০ কোটি টাকা আয় হয় বেবিচকের। কিন্তু মার্চ থেকে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ হওয়ার পর বেবিচকের আয় কমতে শুরু করে। এ অবস্থায় স্বল্পমেয়াদে আয় বৃদ্ধির সঙ্গে সংশ্লেষ নেই ও অত্যাবশ্যক নয়—এমন দীর্ঘমেয়াদি নতুন উন্নয়ন প্রকল্প আপাতত হাতে না নেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে শোভাবর্ধক ও কম গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়নকাজ পরিহার এবং অতিজরুরি না হলে বিদেশে প্রশিক্ষণ পরিহারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাবে সুষ্ঠু পরিস্থিতিতে এয়ারলাইনসগুলোকে দেউলিয়াত্বের হাত থেকে বাঁচাতে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান চেয়ে গত এপ্রিলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় বেসরকারি এয়ারলাইনসগুলো। চিঠিতে বেশকিছু বিষয়ে কর মওকুফ ও প্রণোদনা চাওয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে সব উড়োজাহাজ ও হেলিকপ্টারের যাবতীয় নেভিগেশন, ল্যান্ডিং ও পার্কিং চার্জ পাঁচ বছরের জন্য মওকুফ করা; প্রণোদনাস্বরূপ এভিয়েশন শিল্পকে আগামী ১০ বছরের জন্য বিবিধ আয়কর ও ভ্যাট অব্যাহতি প্রদান; অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক উভয় ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক হারে জ্বালানি মূল্য ধার্যকরণ; যন্ত্রাংশ আমদানি পর্যায়ে আগাম কর অব্যাহতি, বকেয়া পরিশোধের ক্ষেত্রে লেট ফি অন্যান্য দেশের মতো বার্ষিক ৬-৮ শতাংশ হারে ধার্য করা এবং বাংলাদেশী এয়ারলাইনস আন্তর্জাতিক রুটে চলাচল করলেও তাদের উড়োজাহাজগুলোর ল্যান্ডিং, পার্কিং ও নেভিগেশন চার্জ অভ্যন্তরীণ রুটের হারে ধার্য করা।
এ চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে দেশীয় এয়ারলাইনসের অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের ক্ষেত্রে সব ধরনের অ্যারোনটিক্যাল চার্জ ২০২০ সালের ২৬ মার্চ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে শতভাগ মওকুফ করেছে অর্থ বিভাগ। সিভিল এভিয়েশন রুলস, ১৯৮৪-এর বিধান অনুযায়ী, ধার্য করা ল্যান্ডিং চার্জ, পার্কিং চার্জ, ব্রিজ চার্জ, সিকিউরিটি চার্জ এবং বিএনএইচও (বিয়ন্ড নোটামাইজড অপারেশনস আওয়ার) চার্জ শতভাগ মওকুফে অর্থ বিভাগের সম্মতিপত্র সম্প্রতি হাতে পেয়েছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়।
One thought on “বেবিচকের আয় নয় মাসে নেমে এসেছে হাফে”
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.
জেনে রাখুন শিশুর স্বাস্থ্য ও পুষ্টি এবং বিভিন্ন রোগ