মুমূর্ষ সেন্টমার্টিন কে বাচাতে নিষিদ্ধ ছেড়া দ্বীপ
Tweet
জাহিদুল হাসান সায়েম
সেন্টমার্টিন কক্সবাজার জেলা শহর থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে সাগরবক্ষে বাংলাদেশের একটি ক্ষুদ্র দ্বীপ। প্রশাসনিকভাবে দ্বীপটি কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার একটি ইউনিয়ন।
প্রতিবছর সেপ্টেম্বর-অক্টোবর থেকে শুরু করে মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত এই দ্বীপে বেড়াতে যান পর্যটকেরা। তবে এবার আর যাওয়া হচ্ছেনা ছেড়াদ্বিপ। পরিবেশ রক্ষায় সেন্টমার্টিনে ছয় ধরনের কার্যক্রম বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়।
সেন্টমার্টিনের ছেড়াদ্বীপ অংশে সবচেয়ে বেশি জন্ম প্রবাল বা কোরাল এর। প্রবাল বা কোরাল , এক ধরনের অমেরুদণ্ডী সামুদ্রিক প্রাণী। বহিরাবরণ শক্ত হওয়ার কারণে অনেক সময় একে পাথর ভেবে ভুল করা হয়। পলিপ নামের অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রাণীর সমন্বয়ে তৈরি হয় একটি প্রবাল বা কোরাল।
গত ১২ অক্টোবর মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক পরিপত্রে এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুয়ায়ী,
এখন থেকে সেন্টমার্টিনের সৈকতে কোনো ধরনের যান্ত্রিক যানবাহন যেমন মোটরসাইকেল ও ইঞ্জিনচালিত গাড়ি চালানো যাবে না। রাতে সেখানে আলো বা আগুন জ্বালানো যাবে না। রাতের বেলা কোলাহল সৃষ্টি বা উচ্চ স্বরে গানবাজনার আয়োজন করা যাবে না। টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিনে যাতায়াতকারী জাহাজে অনুমোদিত ধারণ সংখ্যার অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করা যাবে না। অননুমোদিত এবং অনুমোদনের অতিরিক্ত নির্মাণসামগ্রীর সেন্টমার্টিনে যাতায়াত বন্ধ করা হবে। পরিবেশদূষণকারী দ্রব্য যেমন পলিথিন ও প্লাস্টিকের বোতল ইত্যাদির ব্যবহার সীমিত করা হবে।
গবেষণায় সেন্ট মার্টিনের পরিবেশদূষণ ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতির জন্য কয়েকটি মানবসৃষ্ট কারণ চিহ্নিত করা হয়। যার মধ্যে অন্যতম অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন, দুর্বল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পর্যটকদের ব্যবহৃত সামগ্রী সমুদ্রের পানিতে নিক্ষেপ, পাথর উত্তোলন, প্রবাল উত্তোলন । পর্যটকেরা যে পরিমাণ বর্জ্য ফেলে যান, তা অপসারণে সরকারি কোনো বারাদ্দ ও ব্যবস্থা নেই। এসব বর্জ্য সরাসরি সাগরে গিয়ে পড়ে।
সেন্টমার্টিনে নতুন জন্মানো প্রবালগুলো জেলেদের জালের টানে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। জেলেরা দ্বীপের উপকূলবর্তী এলাকায় জাল ফেলে মাছ ধরেন, যেখানে সবচেয়ে বেশি প্রবালের জন্ম হয়।
কোন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই বলে দ্বীপের চারদিকে ভাঙন দেখা দিয়েছে। কয়েক বছর ধরে ভাঙনের কারণে দ্বীপের আয়তনও কমেছে। পরিবেশবাদীরা বলছেন, দেশের একমাত্র ওই প্রবাল দ্বীপের জীববৈচিত্র্য এবং বনভূমি মারাত্মক দূষণের শিকার হচ্ছে। ফলে শুধু ছেঁড়া দ্বীপ না, সেন্ট মার্টিনেই পর্যটকদের যাতায়াত আপাতত নিষিদ্ধ করা উচিত। এখনই কোন পদক্ষেপ না নিলে দ্বীপটি আগামী কয়েক যুগ পর ধ্বংস হয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।