নজরদারির অভাবে বিলীন হয়ে যাচ্ছে ভীমের মায়ের আখা
Tweet
সংরক্ষণের অভাবে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার ঐতিহাসিক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ভীমের মায়ের আখা (ভীমের মায়ের চুলা)। অন্যদিকে প্রশাসনের নজরদারী না থাকায় এবং অবহেলার কারণে একটি চক্র ভীমের মায়ের চুলার শেষ চিহ্নটুকুর মাটি কেটে দেদারছে বিক্রি করছে। ফলে হারিয়ে যেতে বসেছে এ উপজেলার ঐতিহাসিক নিদর্শন। এলাকাবাসী উপজেলার এ ঐতিহাসিক স্থানটি রক্ষণাবেক্ষণসহ প্রয়োজনীয় সংস্কার করার দাবি জানিয়েছেন।
গত বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার পরিষদ থেকে উত্তর পশ্চিম দিকে ২০০ মিটার দুরে পুটিমারী ইউনিয়নের কাচারীপাড়া গ্রামে অবস্থিত ভীমের আখা (ভীমের মায়ের চুলাটি) অবস্থিত। এটি তিন দিক থেকে উঁচু মাটির প্রাচীর দ্বারা বেষ্টিত একটি স্থাপনা যার উপরের তিনটি স্থান অপেক্ষাকৃত উঁচু। এর ভিতরের অংশ গভীর ও বাইরের তিনদিক পরিখা বেষ্টিত। ইতিহাসের সাক্ষী এ জায়গাটি অযত্ন ও সংরক্ষণের অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে। ধ্বংস হতে চলেছে এর আদি রূপ।
আখাটির পূর্বদিকে গিয়ে দেখা যায় একটি ভুমিদস্যু চক্র মাহেন্দ্র ট্রাকে করে মাটি কেটে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করছে।
স্থানীয় প্রবীণদের কাছ থেকে জানা গেছে, প্রায় কয়েকশ বছর আগে মহাভারতের পঞ্চপাণ্ডব ভ্রাতাদের মধ্যে দ্বিতীয় ভীম এ জায়গাটিতে অবস্থান নিয়ে যুদ্ধ পরিচালনা করতেন। ভীমের মা কুন্তিদেবি যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী যোদ্ধাদের রান্না করে খাওয়ানোর জন্য এখানে একটি চুলা তৈরি করেছিলেন। সেই চুলায় এক সাথে দশহাজার যোদ্ধার জন্য রান্না করা যেত। পরবর্তীতে ইতিহাসের সাক্ষী স্বরূপ বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন চুলাটি দেখতে আসেন। কিন্তু একটি চক্র চুলাটির চারদিক থেকে মাটি কেটে বিক্রি করার কারণে এর অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার পথে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাকির হোসেন বাবুল বলেন, নিঃসন্দেহে এটি একটি ঐতিহাসিক স্থান। কথিত আছে মহাভারতের পঞ্চপাণ্ডবের দ্বিতীয় ভাই ভীম এখানে যুদ্ধ করার সময় তাঁর মা যুদ্ধে অংশ নেয়া সৈন্যদের জন্য চুলা তৈরি করেছিলেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার রোকসানা বেগম জানান, ভীমের মায়ের চুলাটি সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সেই সাথে যারা ওই জায়গাটির মাটি কেটে বিক্রি করছে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কালাম বারী পাইলট বলেন, ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করতে গেলে ঐতিহাসিক এ স্থানটি সংস্কারের কোন বিকল্প নেই। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।