কেমন হতে পারে সর্বাত্মক লকডাউন
Tweet
সারা দেশে ৫ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে চলাচল ও কাজে কঠোর নিষেধাজ্ঞা। চলবে ১১ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত। এক সপ্তাহের এই নিষেধাজ্ঞাকে শুরু থেকেই সরকার লকডাউন বলে আসছে। যদিও এই সময়ে প্রায় সব কিছুই খোলা ছিল।
তবে করোনা পরিস্থিতিতে গত বছরের মার্চ মাস থেকেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ আছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, ঢিলেঢালা লকডাউনে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। আর বর্তমান করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি আরও কয়েক সপ্তাহ অব্যাহত থাকলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে। তখন করোনায় আক্রান্ত বহু লোককেই ন্যূনতম চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হবে না।
সূত্রটি জানায়, এখন যে ধরনের লকডাউন চলছে, তাতে সাধারণভাবে দেখলে দেখা যাচ্ছে সংক্রমণ কমেনি। তবে এটাও ঠিক সংক্রমণ ব্যাপকভাবে বাড়েওনি। এখন কঠোর লকডাউন দেওয়া গেলে হয়তো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে বলেই তারা মনে করছে।
দেশে প্রতিদিন সাত হাজারের বেশি মানুষ নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। মৃত্যুও বেড়েছে। করোনার প্রথম ঢেউয়ে সর্বোচ্চ মৃত্যু যেখানে ছিল ৬৪, দ্বিতীয় ঢেউয়ে এক দিনে মৃত্যুর সর্বোচ্চ সংখ্যা ৭৪ জনে এসে দাঁড়িয়েছে।
আশঙ্কা, ভয়, জনস্বাস্থ্যবিদদের নানা পূর্বাভাসের মধ্যে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সরকারের জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আজ শুক্রবার দুপুরে বলেছেন, ১৪ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের জন্য সর্বাত্মক লকডাউনের বিষয়ে সক্রিয় চিন্তাভাবনা করছে সরকার। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী কাদের বলেন, দেশে করোনার সংক্রমণ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে, লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার। সঙ্গে বাড়ছে জনগণের অবহেলা ও উদাসীনতা। এমতাবস্থায় সরকার জনস্বার্থে ১৪ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের জন্য সর্বাত্মক লকডাউনের বিষয়ে সক্রিয় চিন্তাভাবনা করছে।
চলমান এক সপ্তাহের লকডাউনে জনগণের উদাসীন মানসিকতার কোনো পরিবর্তন হয়েছে বলে মনে হয় না বলেও জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
তবে বর্তমানে চলমান ‘লকডাউন’ আর ‘সর্বাত্মক লকডাউনের’ মধ্যে পার্থক্য কী হবে? এখন যেভাবে লকডাউন চলছে, সর্বাত্মক লকডাউনের সময়ও কি একই পরিস্থিতি থাকবে? নাকি নিষেধাজ্ঞার আওতা বাড়বে?
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ বলতে যে চিন্তাটি করা হয়েছে সেটা হলো শুধু জরুরি সেবা ছাড়া আর কোনো কিছুই চলবে না। এখন যেমন কিছু কিছু বিষয়ে নমনীয়তা দেখানো হচ্ছে, সেটি হয়তো তখন আর করা হবে না।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশের জনস্বাস্থ্যবিদেরাও এই পরামর্শ দিয়েছেন।
বর্তমানে যে ‘লকডাউন’ চলছে সেখানে সব ধরনের গণপরিবহন চলছে। বাজার, শপিং মল খোলা হয়েছে। অফিস–আদালত, ব্যাংক, বিমা সবকিছুই খোলা। বেসরকারি খাতের সবকিছুই খোলা। খোলা রয়েছে শিল্পকলকারখানা।
তবে ওষুধের দোকান, নিত্যপণ্যের দোকান জরুরি সেবার মধ্যেই পড়ে। তাই এগুলো সর্বাত্মক লকডাউনেও খোলা রাখা হবে। তবে নিত্যপণ্যের দোকান খোলা রাখার জন্য নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া হতে পারে। আর সরকারের অন্যান্য জরুরি সেবা হলো বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, ফায়ার সার্ভিস, টেলিফোন, স্বাস্থ্য, ত্রাণ বিতরণ, স্থলবন্দর, ইন্টারনেট, অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আনা–নেওয়া ও এর সঙ্গে জড়িত অফিসগুলো।
এখন যে বিধিনিষেধ বলবৎ:
৫ এপ্রিল থেকে সড়ক, রেল, নৌ, অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট বন্ধ রয়েছে। তবে গণপরিবহন উৎপাদন, সেবার ক্ষেত্রে এই নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হচ্ছে না। বিদেশি ও বিদেশফেরত যাত্রীদের ক্ষেত্রেও এটা প্রযোজ্য হচ্ছে না।
অবশ্য এই বিধিনিষেধ দেওয়া হলেও গত বুধবার থেকে মহানগরগুলোকে গণপরিবহন চলাচল করতে দেওয়া হয়।
আইনশৃঙ্খলা ও জরুরি সেবা (গ্যাস, বিদ্যুৎ, ফায়ার সার্ভিস, টেলিফোন, ইন্টারনেট) কাজে নিয়োজিতরা কাজ করবেন, তাঁদের পরিবহন চলছে।
সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত অফিস, আদালত, বেসরকারি অফিস কেবল জরুরি কাজ করছে। এদের নিজস্ব পরিবহন চলছে। শিল্পকারখানা, নির্মাণকাজ চলছে।
শিল্পকারখানা শ্রমিকদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় আনা–নেওয়া করা হচ্ছে। বিজিএমইএ, বিকেএমইকে শ্রমিকদের জন্য ফিল্ড হাসপাতাল করতে হবে বলেও বলা হয়েছে।
সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত অতি জরুরি (ওষুধ কেনা, দাফন, সৎকার, নিত্যপণ্য কেনা) ছাড়া কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে যাওয়া যাচ্ছে না।
খাবারের দোকান থেকে খাবার কিনে আনা যাবে। দোকানে বসে খাওয়ার ব্যবস্থা রাখা যাবে না। শপিং মল বন্ধ, তবে অনলাইনে কেনাকাটা করা যায়। কাঁচাবাজার সকাল ৮টা থেকে ৪টা পর্যন্ত খোলা থাকছে। ব্যাংকিং ব্যবস্থা সীমিত পরিসরে চালু রয়েছে।
তবে আজ শুক্রবার থেকে শপিং মল, মার্কেট খুলে দেওয়া হয়েছে।
সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ ঢাকায় সীমিত পরিসরে ফিল্ড হাসপাতাল করবে বলে বলা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যদিও বিধিনিষেধ পালনে সব ক্ষেত্রেই শিথিলতা দেখা গেছে।