ফারজানা বাতেন একজন দৃঢ় ও সম্ভানাময়ী নারী উদ্যোক্তার নাম
Tweet
ফারজানা বাতেন একজন দৃঢ় ও সম্ভানাময়ী নারী উদ্যোক্তার নাম। শৈশব ও কৈশোর কেটেছে রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকায়। পড়াশোনার প্রতি তুমুল আগ্রহ আর নিজেকে হালফ্যাশনের পোশাকে পরিপাটি করে রাখার পাশাপাশি রান্না শেখার প্রতিও ছিল বিশেষ আকর্ষণ। ফারাজানা যেন মনের অজান্তেই হয়ে উঠতে চান সেই বাঙালী নারী যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে।
ডাক্তার অথবা শিক্ষক হওয়ার স্বপ্নে বিভোর মেধাবী ফারজানার বিয়ে হয়ে যায় অল্প বয়সেই ১৯৯২ সালে। এরপর সাংসারিক ব্যতিব্যস্ততায় ডাক্তার কিম্বা শিক্ষক হতে না পারলেও পড়াশুনার প্রতি প্রবল আকর্ষণ থেকেই গ্রাজুয়েশনের পরে এমবিএ করেছেন। এমবিএ পাশ করে তিনি চাকরি করতে পারতেন কিন্তু আত্মপ্রত্যয়ী ফারজানার মনে সুপ্ত বাসনা চাকরি দেওয়া। চাকরি করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার সহজ পথ ছেড়ে তিনি বেছে নিলেন তুলনামূলক ঝুঁকিপূর্ণ পথ। ফারজানা চাকরি নিবেন না, চাকরি দিবেন। ফলে তিনি নতুন স্বপ্নের জাল বুনতে শুরু করলেন নতুন করে।
ফারজানা শুরু থেকেই জানতেন উদ্যোক্তা হওয়ার পথে চলা এত সহজ হবে না। প্রত্যাশাও করেন নাই। তবে একটা আশা ছিল মানুষ তার কাজকে সাদরে গ্রহণ করবেন। শুধুমাত্র এতটুকু আশার উপর ভরসা করেই নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে শুরু করলেন বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ। দুই মেয়েকে স্কুলে দিয়ে মাঝের অবসর সময়টুকু কাজে লাগান রান্না বিষয়ক বিভিন্ন কোর্সে প্রশিক্ষণ নিয়ে। ফুড ক্যাডেট থেকে শেফ কোর্স সম্পন্ন করে যোগ্যতা ও মেধার বলে একই প্রতিষ্ঠানে করেন শিক্ষকতা।
২০১৭ সালে জয়িতার একটা প্রজেক্টে জাতীয় সংসদ ভবনে একটা ক্যাফেটেরিয়ার উদ্বোধন করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই ক্যাফেতে যেসব মেয়েরা কর্মরত আছেন তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন ফারজানা বাতেন। ফুড ক্যাডেট’র কর্ণধার নাফিজ ইসলাম লিপির সরাসরি তত্ত্বাবধান ও যৌথ উদ্যোগে প্রশিক্ষণের কাজটি সফল করেছেন তিনি। লক্ষ্য পৌঁছাতে দৃঢ় মানসিক প্রস্তুতি শুরু থেকেই ছিল। কেবল নিজের গতিতে এগিয়ে চলেই আজ ফারজানা হতে পেরেছেন একজন সফল নারী উদ্যোক্তা।
রান্না বিষয়ক বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ ও প্রদান করে নিজেকে সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠিত করেছেন একটি বুটিক শপ। ফারজানা বাতেনের নিজস্ব বুটিক শপের তত্বাবধানে ২০১৯ সালে রাওয়া ক্লাবে দেশীয় পণ্য নিয়ে একটি মেলার চমৎকার আয়োজন করেন। মেলায় নিজের তৈরি বিভিন্ন ধরনের সুস্বাদু খাবার, অনেক ধরনের নতুন নকশা ও রঙের সমারোহে নান্দনিক শাড়ি, জামা ইত্যাদি ক্রেতা সাধারণের কাছে প্রশংসিত হয়। নিজের কাজের প্রতি একনিষ্ঠতা ও কাজের অগ্রগতির জন্য বাংলাদেশ এসএমই ফোরাম থেকে ‘সম্ভানাময়ী উদ্যোক্তা’ হিসেবে সম্মাননা পেয়েছেন। WEO এর সদস্য হিসেবে এ বছর নারী দিবসে “সফল নারী উদ্যোক্তা এওয়ার্ড পান।
উইমেন্স এম্পাওয়ারমেন্ট অর্গানাইজেশনের একজন সদস্য হিসেবে ফারজানা বাতেন নারীদের স্বাবলম্বী হওয়ার পথে সহায়ক হতে চান। তার সর্ব মহলে প্রশংসিত রেসিপিগুলো নিয়ে একটা বই প্রকাশ করতে চান শীঘ্রই। যেন নতুন রাঁধুনিদের রান্না বিষয়ক আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তুলতে সাহায্য করে বইটি। বর্তমানে “রেসিপি বুক বাই ফারজানা” ও “অপরাজিতা বাই ফারজানা” ফেসবুক পেইজ দুটি নিয়ে কাজ করছেন। আরও বেশি করে দেশীয় পণ্য ও খাদ্যসামগ্রী নিয়ে কাজ করে সমাজের নারীদেরকে স্বাবলম্বী হওয়ার পথে আহ্বান করতে চান। তিনি একজন সফল স্ত্রী, মা ও বৌমা। অনলাইনে ও অফলাইনে একজন আরও সফল উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবেন বলে স্বপ্ন দেখেন লড়াকু ফারজানা বাতেন।