একজন সফল উদ্যোক্তা ও আলোকিত গৃহিণী কানিজ ফেরদৌসী
Tweet
কানিজ ফেরদৌসী—-
একজন সফল উদ্যোক্তা ও আলোকিত গৃহিণী। পারিবারিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি গত দুই যুগ ধরে নিজেকে গড়ে তুলেছেন একজন দক্ষ হস্তশিল্পী, রান্না বিষয়ক প্রশিক্ষক ও খ্যাতিমান রন্ধনশিল্পী হিসেবে।
দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় কানিজ ছোটবেলা থেকেই প্রখর মেধাবী। তিনি বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে ময়মনসিংহ বিদ্যাময়ী স্কুল থেকে এসএসসি ও মুমিনুননেসা সরকারী কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। পরবর্তীতে ময়মনসিংহ আনন্দমোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে পদার্থবিদ্যায় বিএসসি (অনার্স) পাশ করেন যেখানে ঐচ্ছিক বিষয় ছিল গণিত। উল্লেখ্য, তিনি একাধারে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে মেধা তালিকায় বৃত্তি অর্জন করেছিলেন।
মেধাবী ও বিজ্ঞানমনস্ক কানিজ ফেরদৌসী “শতাব্দী হ্যান্ডিক্র্যাফটস্” ও “কুকিং একাডেমী”র প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক। ময়মনসিংহের এই কীর্তিমান নারী পারিবারিক ও সামাজিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি কিছুটা শখ ও কৌতুহল বশত প্রথমে হস্তশিল্প তৈরীর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এরপর সময়ের ব্যবধানে ভালো লাগা থেকে পর্যায়ক্রমে হস্তশিল্প ও রন্ধন বিষয়ক আরও বেশকিছু প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। আজ নিজের মেধা, সৃজনশীলতা ও পরিশ্রমের বিনিময়ে তিনি একজন সফল নারী উদ্যোক্তা এবং দক্ষ প্রশিক্ষক। সংসার সামলানোর পাশাপাশি বিভিন্ন রকম প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে আবার নিজেকেই প্রশিক্ষক হিসেবে গড়ে তুলতে কানিজ যেন হয়ে ওঠেন ফুটবল মাঠের দশ নম্বর খেলোয়াড়। সারা মাঠে প্রচুর পরিশ্রম করে নিজে গোল করেন আবার সতীর্থদের দিয়েও গোল করান। নারী উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার পাশাপাশি তিনি হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান “শতাব্দী হ্যান্ডিক্র্যাফটস্ ও কুকিং একাডেমী” থেকে স্বল্প খরচে অসংখ্য মহিলাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাবলম্বী করে তুলেছেন।
বাংলাদেশ কুকিং এ্যাসোসিয়েশনের সদস্য কানিজ ফেরদৌসী নিজের গড়া একাডেমী থেকে প্রশিক্ষণ প্রদানের পাশাপাশি মাছরাঙ্গা টিভির ‘শৈলী’ ও দেশ টিভির ‘দুরপাঠ’ ও অনুষ্ঠানের মাধ্যমে হস্তশিল্প বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান করেছেন। এবং মাছরাঙ্গা টিভির ‘ড্রিংকস্ এন্ড ডেজার্ট’, এনটিভির ‘এক্সপার্ট টুডেজ কিচেন’ ও যমুনা টিভির ‘লাইভ কিচেন‘ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রান্না বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান করেছেন। এছাড়াও একজন রেসিপি রাইটার হিসেবে তার প্রস্ততকৃত উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রেসিপি দৈনিক সমকালসহ দেশের প্রথম সারির বিভিন্ন পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছে।
কানিজ ফেরদৌসী বিভিন্ন স্বাদ ও রঙের আচাড় তৈরীতেও সিদ্ধহস্ত। বিভিন্ন রকমের সুস্বাদু আচাড় তৈরি করে তিনি প্রাণ জাতীয় আচাড় প্রতিযোগীতা-২০১৬ ও ২০১৮ সালে দু’টি ক্যাটাগরীতে জাতীয় পুরস্কার অধিকার করে নেন। তিনি নিয়মিত ভাবে প্রতি বছর বিভিন্ন পিঠা মেলায় অংশ নিয়ে প্রায় প্রত্যেকটিতেই প্রথম পুরস্কার অর্জন করেছেন।
রান্না বিষয়ক উচ্চতর জ্ঞান আহরণ করে নিজেকে সমৃদ্ধ করতে কানিজ ইউসেপ, মিরপুর থেকে কুকিং লেভেল-১ ও বেকিং লেভেল-২ কোর্স সম্পন্ন করেছেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ কারিগরী শিক্ষা বোর্ডের অধীনে বাংলাদেশ-কোরিয়া টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার (BKTTC) থেকে এ্যসেসর পার্ট লেভেল-৪ সফলতার সাথে সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ কারিগরী শিক্ষা বোর্ডের একজন সার্টিফায়েড এ্যাসেসর।
ঘরে তৈরী বিভিন্ন প্রকার খাদ্যদ্রব্য, আচাড় ও হস্তশিল্পজাত পণ্যসামগ্রী প্রস্তত ও সরবরাহ করে কানিজ গ্রাহকদের বিশেষ সুনাম অর্জন করেন। এছাড়াও নিজের কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি জাতীয় পর্যায়ে অনেকগুলো সম্মাননা অর্জন করেছেন যেগুলোর অন্যতম কয়েকটি হলো হস্তশিল্পে অসামান্য অবদান রাখায় ২০১৬ সালে পিস ফর হিউম্যান’র পক্ষ থেকে “মাদার তেরেসা” সন্মাননা, ফেবিকল হবি আইডিয়াস বাংলাদেশ এর পক্ষ থেকে ২০১৮ সালে বিশেষ সন্মাননা এবং ২০১৯ সালে হস্তশিল্পে বিশেষ অবদানের জন্য স্বর্ণপদক ও “হিউম্যান রাইটস শাইনিং পারসোনালিটি” এওয়ার্ড, এবং ২০২১সালে “কীর্তিমান নারী’ সন্মাননা অর্জন করেন ইউনাইটেড মুভমেন্ট ফর হিউম্যান রাইটস এর পক্ষ থেকে। এছাড়াও ফেভিকল হবি আইডিয়াস বাংলাদেশ থেকে একজন বিশেষজ্ঞ প্রশিক্ষক হিসেবে “স্বর্ণপদক” অর্জন করেন।
বাবা বেরুতেন সকালবেলা অফিস অভিমূখে
মা’র সারাদিন গুনগুন গাওয়া
ঘরের কাজ আর শুধু পথ চাওয়া
ফিরবেন বাবা সন্ধ্যাবেলা কখন হাসিমুখে…..
কানিজ ফেরদৌসীর সংসার যেন নচিকেতার গানের মতোই সুখের সাতকাহন। সংসার জীবনের ঊষালগ্ন থেকেই নিজের কাজের প্রতি ভালবাসা আর দ্বায়িত্বশীলতায় সেই সুখে আজও ভাটা পরেনি একবিন্দুও। স্বামী ও এক পুত্র সন্তান নিয়ে তাঁর সুখী সমৃদ্ধ পরিবার। বর্তমানে হা-মীম গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে কর্মরত তার স্বামী সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত মেজর। নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ইনস্টিটিউটে প্রশিক্ষণ প্রদান, অনেকগুলো বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে হস্তশিল্প ও রান্না বিষয়ক অনুষ্ঠান করা, পত্র-পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে রেসিপি লেখা ও বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করে দশদিক সামলানোর পরে পরিবার নিয়ে দেশ-বিদেশ ভ্রমণ করতে ভালবাসেন কানিজ। স্বামী, সন্তান নিয়ে দেশের বিভিন্ন পর্যটন গন্তব্যের বাইরেও তিনি এখন পর্যন্ত ভ্রমণ করেছেন ভারত, পাকিস্তান, চীন, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া। একটু অবসর পেলেই মনের প্রশান্তি ও আত্মীক উন্নতির জন্য স্বামী-সন্তান নিয়ে ভ্রমণে বেড়িয়ে পড়েন স্বর্ণপদক জয়ী নারী উদ্যোক্তা কানিজ ফেরদৌসী।