জেনে নিন ক্যাফেইন গ্রহণের সহনীয় মাত্রা
Tweet
দিনের শুরুটা প্রায় সবারই হয় এক কাপ কফি কিংবা চা দিয়ে। পরিমাণে কম বেশি দুটোতেই থাকে ‘ক্যাফেইন’।
পরবর্তী সময়ে ক্লান্তি মেটাতে, আড্ডা, সৌজন্য সাক্ষাৎ ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে একাধিক কাপ চা কিংবা কফি পান করা হয়। সেসময় কেউ হয়ত বলে এত বেশি চা-কফি পান করা ঠিক না, আপনি হয়ত তা মেনেও নেন।
তবে ঠিক কতটুকু চা বা কফি, পক্ষান্তরে ‘ক্যাফেইন’ গ্রহণ করাটা অতিরিক্ত পর্যায়ে পড়ে? আর ক্যাফেইন মেপে চা-কফি পান করা যেখানে প্রায় অসম্ভব, সেখানে বুঝবেনই বা কীভাবে যে আপনি অতিরিক্ত ‘ক্যাফেইন’ গ্রহণ করছেন?
যুক্তরাষ্ট্রের অ্যালকোহল অ্যান্ড ড্রাগ ফাউন্ডেশন বলছে, “ক্যাফেইন একটি ‘স্টিমুলেন্ট ড্রাগ’। এর প্রভাবটা হলো মস্তিষ্ক থেকে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গে সংকেতের যে আদান-প্রদান তার গতি বাড়িয়ে দেওয়া।”
‘ওয়েল অ্যান্ড গুড’ ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই সংস্থার উদ্ধৃতি দিয়ে আরও উল্লেখ করা হয়, “ক্যাফেইন সেই কাজটি সম্পাদন করে মূলত ‘সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম’ বা কেন্দ্রিয় স্নায়ুতন্ত্র এবং পেশিতে কর্মশক্তি বা ‘এনার্জি’ উৎপাদন বাড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে।”
যুক্তরাষ্ট্রের ‘ডক্টর অফ ডিজিজ প্রিভেনশন’এর ডা. এরিকা সোয়ার্জ বলেন, “কফি, চা, কোমল পানীয়, ‘এনার্জি ড্রিংকস’, চকলেট ইত্যাদিতে ‘ক্যাফেইন’য়ের দেখা মেলে। একটি নির্দিষ্ট মাত্রা পর্যন্ত এই উপাদান একজনের মনকে প্রফুল্ল করে, কর্মশক্তি বাড়ায়, শরীরের আলসেমি দূর করে। সেই মাত্রাটা হল দৈনিক ৪০০ মিলিগ্রাম।”
তিনি আরও বলেন, “কফির হিসাবে তা প্রায় পাঁচ থেকে ছয় কাপ। অথবা দুটি ‘এনার্জি ড্রিংকস’। তবে মানুষ ভেদে ‘ক্যাফেইন’ সহ্য করার ক্ষমতায় ভিন্নতা দেখা যায়।”
‘ক্যাফেইন’য়ের মাত্রা সহ্যসীমার বাইরে গেলে শরীরই জানান দেয়। সেই ইঙ্গিতগুলো জানিয়েছেন ডা. এরিকা সোয়ার্জ।
মানসিক অস্বস্তি: যখন ‘ক্যাফেইন’ শরীরে বাড়াবাড়ি মাত্রায় পৌছায়, তখন রক্তচাপ বেড়ে যায়। একারণে সৃষ্টি মানসিক অস্থিরতা, অস্বস্তি, শরীর কাঁপে, হৃদস্পন্দনের গতি অস্বাভাবিক বেড়ে যায়।
যেহেতু ‘ক্যাফেইন’ কেন্দ্রিয় স্নায়ুতন্ত্রকে গতিশীল করে, তার প্রেক্ষিতে শরীরে ‘অ্যাড্রেনালিন’ হরমোনের নিঃসরণ বেড়ে যায়। একারণে মানসিক ও শারীরিক অস্থিরতা তৈরি হয়, মনে আতঙ্কও কাজ করে।
ঘুমের সমস্যা: কেন্দ্রিয় স্নায়ুতন্ত্রের ওপর ‘ক্যাফেইন’য়ের প্রভাবের কারণে স্বাভাবিকভাবেই ঘুম কমে। অতিরিক্ত ‘ক্যাফেইন’ ঘুম আসতে বাধা দেয়, আবার ঘুমিয়ে পড়লেও তা গভীর হয় না, সামান্য কারণে ভেঙে যায়।
যতটুকু ‘ক্যাফেইন’ মানুষ গ্রহণ করে তার অর্ধেকটার প্রভাব শেষ হতে প্রায় পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা সময় লেগে যায়। আর তা পুরোপুরি শরীর থেকে বেরিয়ে যেতে প্রায় পুরো একটা দিন সময় লাগে।
তাই দিনের শুরুতে পরিমাণ মতো একবার কফি পান করলে তা সারাদিন কর্মশক্তি যোগাবে এবং রাতে ভালোভাবে ঘুমাতে পারবেন।
পেট ব্যথা: কফি এবং এতে থাকা ‘ক্যাফেইন’ অম্লীয়, আর তাতে থাকে ‘ল্যাক্সাটিভ’ বৈশিষ্ট্য। ফলে কফি অন্ত্রের ওপরেও জোরদার প্রভাব ফেলে। অতিরিক্ত কফি পানের কারণে হতে পারে বুক জ্বালাপোড়া, পেট ব্যথা, বদহজম, বমিভাব এবং ডায়রিয়া।
মুত্রত্যাগের মাত্রা বেড়ে যাওয়া: মৃদুমন্দ ‘ডাই-ইউরেটিক’ বৈশিষ্ট্য থাকার কারণে অতিরিক্ত ‘ক্যাফেইন’ পানিশূন্যতা সৃষ্টি করতে সক্ষম। তাই যখনই কফি পান করছেন, তার আগে কিংবা পান করার সময় সামান্য কিছু হালকা খাবার খাওয়া উপকারী হবে। খাবারের কারণে পানীয়টি হজমতন্ত্র দিয়ে অগ্রসর হবে ধীরে যা পানিশূন্যতার সম্ভাবনা কমাবে।
মাথা ব্যথা: পরিমাণ মতো কফি যেমন সাধারণ মাথা ব্যথা দূর করতে পারে, অতিরিক্ত কফি ঠিক সেটারই কারণ হতে পারে।
অতিরিক্ত কফি পান করাকে অভ্যাসে পরিণত করলে মাথা ব্যথাও হতে যেতে পারে নিত্যসঙ্গী।
সোয়ার্জ বলেন, “এই উপসর্গগুলো যদি দেখা দেয়, তবে দৈনিক চা-কফি কিংবা যেকোনো ক্যাফেইন’য়ের উৎসের ওপর লাগাম টানতে হবে।”