রন্ধনশালার আলোকিত শিল্পী টুসি
Tweet
ফারহানা ইয়াসমিন টুসির জন্ম ঢাকায় গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জে। এসএসসি এবং এইচএসসি পাশ করে ইলেকট্রিক্যাল ইন্জিনিয়ারিং এ ডিপ্লোমা করেন ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে। ১৯৯৩ সালে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে বিয়ের কিছুদিন পরে মাল্টিনাশনাল কোম্পানিতে চাকরি নেন। ইঞ্জিনিয়ার শফিকুল ইসলামের সাথে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন তিনি। সময়ের সাথে সংসার আর চাকরি সমন্বয় করেই এগিয়ে যাচ্ছে সুখী সমৃদ্ধ দাম্পত্য জীবন। সুখের তরীতে আরও সুবাতাস বয়ে আনে এই দম্পতির প্রথম সন্তান। প্রথম সন্তানের যত্ন ও দেখভালের যেন কোনো ত্রুটি না হয় সেজন্য শাশুড়ীর পরামর্শ দিয়েছেন চাকরি ছাড়তে। একদিকে ফুটফুটে সন্তান অন্যদিকে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির লোভনীয় করপোরেট জীবন। কোনরকম চিন্তাভাবনা ছাড়াই চাকরি ছেড়ে দিয়ে সন্তানের সেবাযত্নে নিজেকে মগ্ন করলেন মা ফারহানা ইয়াসমিন টুসি।
ছোট্ট সন্তান নিজের চোখের সামনে ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে ফারহানা টুসির বড়ই অদ্ভুত লাগে। বিছানায় গড়াগড়ি করে, হাত-পা শূণ্যে ছড়িয়ে দিয়ে অদ্ভুত রকমের খেলা করে একা একা। হাতের কাছে যা কিছু পায় নিয়ে মুখে দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু ছোট্ট সোনা তো জানে না কিভাবে জিনিস ধরতে হয়। মুষ্টি বন্ধ করে ধরতে যায় কিছুই ধরতে পারে না। দুই ঠোঁট একটা বিশেষ ভঙ্গি করে শব্দ করে মনে হয় মোটরসাইকেল চালাচ্ছে। সারাদিন এরকম হাজার টুকরো টুকরো সুন্দর দৃশ্য দেখে টুসি বুঝতে পারেন শাশুড়ী তাকে কতো ভালো একটি পরামর্শ দিয়েছেন। বিছানায় শুয়ে চার হাত-পা ছড়িয়ে খেলা করে, দেখে টুসি তৃপ্তিতে পূর্ণ হয়।
সন্তান ধীরে ধীরে বড় হলে নিজের জন্য আবার কিছুটা সময় বের করে নিতে পারে টুসি। নিয়মিত চাকরি করার চেয়ে এবার পরিকল্পনা করে অন্যভাবে নিজেকে গুছিয়ে নিতে। ঘরে বসে কিছু করার আধুনিক চিন্তায় উজ্জীবিত হয়ে ১৯৯৯ সালেই বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন থেকে বেকিং এবং কুকিং এর উপর কোর্স করেন। এরপর আপনঘর, বিশাল একাডেমি আরও কিছু প্রতিষ্ঠান থেকে রান্না বিষয়ক কোর্স সম্পন্ন করে নিজেকে সমৃদ্ধ করে নেন। পরিচিত মহলে টুসির রান্নার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে অল্পদিনেই। পরিবার থেকে শুরু করে আত্মীয় স্বজন পর্যন্ত টুসির রান্না করা খাবার খেয়ে প্রশংসা করেছে যা তাকে আত্মবিশ্বাসী হতে সাহায্য করেছে। এরপর পরিচিতদের মধ্যে অনেকেই এবং অপরিচিতদের মধ্যে কেউ কেউ টুসির কাছে রান্না শেখার আগ্রহ পোষণ করেন। অনেকের আগ্রহেই তিনি ২০০০ সালেই ঘরে বসে কুকিং ও বেকিং এর উপর প্রশিক্ষণ প্রদান শুরু করেন।
খৃষ্টীয় ২০০০ সাল। সাল গণনায় এক শতাব্দীর শেষ আরেক শতাব্দীর শুরু। ফারহানা ইয়াসমিন টুসির দৃপ্ত পথচলা এখান থেকেই শুরু। টুসির হাতে রান্না করা খাবার সবাই খুব পছন্দ করতো। ফলে প্রশিক্ষণ নিতে আসাদের মধ্যে কেউ কেউ জন্মদিন, গায়ে হলুদ বা বিবাহ বার্ষিকী উপলক্ষে খাবারের অর্ডারও দিতো। বাসায় বসে মহিলাদের কুকিং, বেকিং এবং হাতের কাজ শেখাতে শুরু করেন তিনি। রান্নার পাশাপাশি ভিন্ন ধরনের ব্লক- বাটিক, সেলাই এবং শো পিস তৈরির প্রশিক্ষণ দেন। মাঝখানে দু’বছর Tupperware কম্পানিতে ম্যানেজার পদে কাজ করেন। এই দু’বছর কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ এমপ্লয়ি অব দ্যা ইয়ার পুরস্কার পান। রন্ধন শিল্পে বিশেষ অবদান রাখার কারণে সাম্প্রতিক সময়ে তিনি বিটিআরআই কালিনারী এক্সিলেন্স এওয়ার্ড-২০২১ অর্জন করেন।