সুন্দর ত্বকের জন্য পুষ্টি উপাদান ও ভিটামিন
Tweet
যুক্তরাষ্ট্রের ‘দিস্পাডক্টর ডটকম’র প্রতিষ্ঠাতা, নিউরোপ্যাথিক চিকিৎসক ট্রেভর কেইটস বলেন, “ত্বকের যত্নে যাই মাখা হোক না কোনো, আমরা দেহের ভেতরে যা দেই সেটার ছাপ ফুটে ওঠে ত্বকে।”
ত্বক ভালো রাখতে খাবার তালিকায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন ও খনিজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বলেন জানান এই চিকিৎসক।
স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট ‘ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে ফিলাডেলফিয়ার পুষ্টিবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ‘দি চার্জ গ্রুপ’য়ের নিবন্ধিত পুষ্টিবিদ ভেরোনিকা ক্যাম্পবেল নিশ্চিত করে বলেন যে, “আমরা যে খাবারগুলো খাই তা ত্বকের স্বাস্থ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আর পুষ্টি যুগিয়ে ত্বকের গঠন এবং আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।”
পুষ্টির অভাবে ত্বকে ব্রণ, খসখসেভাব ও সূর্যালোকে যাওয়ার ফলে কোলাজেন নষ্ট হয়ে বলিরেখা দেখা দিতে পারে।
ক্যাম্পবেল আরও লেন, “আমরা যা খাই তার প্রভাব আমাদের ওপরে পড়ে। খাবারে বিদ্যমান পুষ্টির প্রভাব পড়ে দেহে। তাই খাবার তালিকায় স্বাস্থ্যকর খাবার যোগ করা প্রয়োজন।”
ক্যাম্পবলের মতানুসারে ত্বক ভালো রাখতে উপকারী এমন কয়েকটি খাবার উপাদান সম্পর্কে জানানো হল।
প্রোটিন: পেশি গঠনের মূল উপাদান হল প্রোটিন। ত্বক ভালো রাখতেও এর প্রয়োজনিয়তা রয়েছে।
দৈনিক প্রোটিনের চাহিদা পূরণ না হলে পেশি ভাঙা শুরু করে এবং চুল ও নখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
তাই প্রতিবেলার খাবারে প্রোটিন রাখার চেষ্টা করতে হবে। নিরামিষভোজী হয়ে থাকলে বাদাম, মটর ও অন্যান্য বীজ ধরনের খাবার বেশি করে গ্রহণ করা প্রয়োজন।
ভিটামিন ই: ভিটামিন ই চর্বি-জাতীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ত্বকের যত্নে, ক্ষত সারাতে খুব ভালো কাজ করে।
প্রাপ্ত বয়স্কদের দৈনিক ১৫ মি.গ্রা. ভিটামিন ই প্রয়োজন। তাই স্বাস্থ্যকর চর্বি যেমন-জলপাইয়ের তেল ও অ্যাভাকাডো খাওয়া যেতে পারে।
তিনি বলেন, “যদিও ভিটামিন ই’য়ের ৯০ শতাংশ খাবার থেকে গ্রহণ করা যায়, কিন্তু আমেরিকানরা তা পূরণ করেন না।”
বায়োটিন: চুল, ত্বক ও নখ মজবুত রাখতে বায়োটিন ‘বিউটি ভিটামিন’ হিসেবে কাজ করে।
এর ব্যাখ্যা দিয়ে ক্যাম্পবল বলেন, “বায়োটিন খাবার থেকে শক্তি উৎপাদনে সহায়তা করে। এবং এর অভাবে চুল ফাটা ও নখ ভাঙার সমস্যা দেখা দেয়।”
বায়োটিনের প্রাকৃতিক উৎস হিসেবে খাবার তালিকায় ডিম, মিষ্টি আলু ও কলা যোগ করুন। অথবা সম্পূরক হিসেবে বায়োটিন-জাতীয় খাবার খেতে পারে।
ভিটামিন সি: ত্বকের যত্নে ভিটামিন সি’র শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সিরাম বা লোশন যে কোনো ভাবেই ভালো কাজ করে এবং ভিটামিন সি খাওয়াও শরীরের জন্য উপকারী।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট জারণের চাপ কমিয়ে উন্মুক্ত রেডিকেল জনিত ক্ষয় কমায় ও কোলাজেন বাড়ায়। ভিটামিন সি পেতে টক-জাতীয় ফলের পাশাপাশি লাল মরিচ, ও টমেটো খাওয়া যায়।
এই ভিটামিন পানিতে দ্রবীভূত। তাই রান্না না করে বরং কাঁচা অবস্থায় খাওয়া হলে উপকার পাওয়া যাবে।
কোলাজেন: কোলাজেন প্রোটিনের একটা ধরণ যা ত্বক, চুল, হাড় ও কোষের জন্য উপকারী।
ক্যাম্পবল বলেন, “যদিও বয়সের সঙ্গে সঙ্গে কোলাজেন দুর্বল হয়ে পড়ে এবং বলিরেখা ও তরুণাস্থির সমস্যা দেখা দেয়। তাছাড়া, সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মিও কোলেজেন ভেঙে দিয়ে পারে।”
আমিষভোজীরা মাছ, মাংস, হাড় ইত্যাদির মাধ্যমে কোলাজেন গ্রহণ করতে পারেন।
এখন পর্যন্ত কোলাজেনের বিকল্প কোনো উদ্ভিজ্জ উপদান সম্পর্কে জানা যায়নি। তবে যারা নিরামিষভোজী তারা গাঢ় রঙিন শাক সবজি যেমন- পালংশাক, কপি, ভিটামিন সি-জাতীয় খাবার, ফলমূল ও সবজি ইত্যাদি বিকল্প হিসেবে খেতে পারেন।
ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড: ক্যাম্পবলের মতে, আনস্যচুরেইটেড চর্বি ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড কেবল কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় না বরং ত্বক আর্দ্র রাখতে, লালচেভাব কমাতে ও ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে।
তার মতে, ভূমধ্যঅঞ্চলীয় খাদ্যাভ্যাস ত্বকে আমূল পরিবর্তন আনতে পারে। লাল মাংসের বদলে মাছ খাওয়া বা পাম তেলের বদলে জলপাইয়ের তেল খাওয়া উপকারী। এছাড়াও, অ্যাভাকাডো, বাদাম ও বীজ খাওয়া যায়।
পানি: পানিকে পুষ্টিকর হিসেবে ধরা না হলেও দেহ ও ত্বকের ওপর এর ব্যাপক প্রভাব রয়েছে।
ক্যাম্পবল বলেন, “নিয়মিত পর্যাপ্ত পানি পান দেহের বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয় ও ত্বকের উন্নত ঘটায়।”
নিয়মিত পানি পান ত্বকের ফোলাভাব, দুর্বলতা ও ব্রণ কমিয়ে মসৃণ করে। দৈনিক কমপক্ষে দুই লিটার পানি পান করা আদর্শ।