সৌন্দর্য চর্চায় সবুজ চা
Tweet
চায়ের সঙ্গে আমাদের রয়েছে আত্মিক সম্পর্ক। বাঙালির কাছে চা কোনো নিছক পানীয় নয়। এটি একটি আবেগ। এমন বাঙালি খুব কম আছে, যিনি দিনে অন্তত একবার চা পান করেন না। পুষ্টিগুণের বিচারে চায়ের অবস্থান এখন সুপারফুডের পর্যায়ে। আর রূপচর্চার উপাদান হিসেবেও কিন্তু এটি কম যায় না। এ ক্ষেত্রে অবশ্য দৌড়ে এগিয়ে আছে সবুজ চা। সুন্দর স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ত্বক আর চুলের জন্য চা পান করার পাশাপাশি বিউটি রুটিনেও যোগ করা যেতে পারে।
অ্যান্টি–এজিং হিসেবে
ত্বকের অকাল বার্ধক্য রোধে সবুজ চা অনেক বেশি কার্যকর। ২০০৩ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, এতে থাকা অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট এপিগ্যালোক্যাটাকিন গ্যালেট বা ইজিসিজির আছে মৃত কোষকে পুনরুজ্জীবিত করার ক্ষমতা। ত্বকের কোষগুলো মেরামত এবং সুরক্ষিত করে এই অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ত্বকের বার্ধক্যজনিত লক্ষণগুলোর বিরুদ্ধের লড়াই করে। এ ছাড়া এটি নিস্তেজ ত্বককে সতেজ, স্বাস্থ্যকর করে। এ ছাড়া সবুজ চায়ে বিদ্যমান ভিটামিন বি২ ত্বকের কোলাজেন লেভেল বজায় রাখতে সাহায্য করে। এ কোলাজেনের জন্যই ত্বক তরুণ দেখায়।
ত্বকের লালচে ভাব ও জ্বলুনি কমায়
সবুজ চায়ে আছে উচ্চমানের পলিফেনল। এটি একটি অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান। এর জন্য সবুজ চা ত্বকে ব্যবহার করলে লালচে ভাব আর জ্বলুনি কমে যায়। শুধু তা–ই নয়, এই অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদানের জন্য বিভিন্ন চর্মরোগ, যেমন সোরিয়াসিস, ডার্মাটাইটিস, রোজেশিয়ার জন্য যে জ্বালাপোড়া বা চুলকানি হয়, তা প্রশমিত করতে পারে। এ জন্য সবুজ চা টপিক্যালি, অর্থাৎ সরাসরি রেমিডি হিসেবে ত্বকে ব্যবহার করতে হবে।
ব্রণ প্রতিরোধে
সবুজ চায়ের অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদানগুলো ব্রণ ও অতিরিক্ত তৈলাক্ত ত্বকের সমাধান হিসেবে কাজ করতে পারে। বেশ কিছু গবেষণায় এসেছে, এর পলিফেলন ত্বকের সিবাম নিঃসরণ কমাতে সক্ষম। অতিরিক্ত সিবাম ক্ষরণের জন্য ব্রণ হয়ে থাকে।
এ ছাড়া পলিফেলন ব্যাকটেরিয়া মেমব্রেনগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে বিভিন্ন সংক্রমণ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রাখে। অর্থাৎ যে ব্যাকটেরিয়াগুলোর জন্য ব্রণ হতে পারে, তাদের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করতে সবুজ চা একটি উত্তম রেমেডি।
আর্দ্রতা বাড়াতে
এতে আছে ভিটামিন ই। ভিটামিন ই ত্বকে পুষ্টি জোগায়, আর্দ্র করে ও রুক্ষতা দূর করে।
স্কিন ক্যানসার প্রতিরোধে
সবুজ চায়ে আছে শক্তিশালী পলিফেনলস ও ছয়টি ক্যাটাকিন। এদের ভেতর সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ এপিগ্যালোক্যাটাকিন গ্যালেট এবং এপিক্যাটাকিন গ্যালেট। এই অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট যৌগগুলো ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিক্যালের বিরুদ্ধে লড়াই করে। শরীরের অতিরিক্ত ফ্রি র্যাডিক্যাল ক্যানসার ডেকে আনে।
২০১০ সালে করা একটি গবেষণাপত্রে এসেছে, এপিগ্যালোক্যাটাকিন গ্যালেট বা ইসিজিসি সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির ফলে ডিএনএতে যে ক্ষতি হয়, তা মেরামত করে ত্বককে নন–মেলানোমা ক্যানসার থেকে রক্ষা করে।
সবুজ চায়ের মাস্ক
বাজারে অনেক ধরনের শিট মাস্ক পাওয়া যায়। তবে ঘরে খুব সহজেই বানাতে পারেন সবুজ চায়ের মাস্ক। তা–ও মাত্র কয়েকটি উপাদান দিয়ে। এগুলো সব সময় আমাদের বাসায় থাকে। এ জন্য লাগবে এক টেবিল চামচ সবুজ চা–পাতার গুঁড়া, এক টেবিল চামচ বেকিং সোডা, এক টেবিল চামচ মধু ও সামান্য পানি। সব কটি উপাদান একসঙ্গে মিশিয়ে ঘন মিশ্রণ তৈরি করে মুখ ও ঘাড়ে লাগান। ১০ থেকে ১৫ মিনিট রেখে হালকা কুসুমগরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
চুলের জন্য
সবুজ চা চুল পড়া কমায়। আর পুষ্টি জুগিয়ে নতুন চুল গজাতে ও এর বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এর পেছনেও কলকবজা নাড়ে সবুজ চায়ের এপিগ্যালোক্যাটাকিন গ্যালেট নামের অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট। সবুজ চায়ের পানি বা গুঁড়া তিন টেবিল চামচ নারকেল তেলের সঙ্গে মিশিয়ে সপ্তাহে অন্তত দুবার মাথায় লাগালে চুলের গোড়া হবে মজবুত এবং চুলে দেখাবে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল।
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো।