কার্বোহাইড্রেইট গ্রহণ করেও ওজন নিয়ন্ত্রণ করা যায়
Tweet
পিৎজা কিংবা পাস্তা সবই খাওয়া যাবে যদি সঙ্গে থাকে শষ্য-জাতীয় খাবার।
মনে রাখতে হবে কার্বোহাইড্রেইট বা শর্করা শত্রু নয়। তবে গ্রহণ করতে হবে জটিল যৌগের কার্বোহাইড্রেইট। কারণ পরিশোধিত শর্করা যেমন ক্ষুধা বাড়ায় তেমনি শরীরের জন্যও ভালো নয়।
স্বাস্থ্যকর কার্বোহাইড্রেট গ্রহণের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় মনে রাখা জরুরি সে সম্পর্কে জানানো হল ইটদিস ডটকমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে।
বেরি: গবেষকদের মতে, বেরি শ্বেতসার হজম ও শোষণ ধীর করে।
‘দ্যা জার্নাল অব নিউট্রিশন’য়ে প্রকাশিত গবেষণা থেকে জানা যায় ৫০ গ্রাম সাদা রুটির সঙ্গে ১৫০ গ্রাম স্ট্রবেরি খাওয়া ৩৮ শতাংশ ইনসুলিনের মাত্রা কমায়। বেরিতে রয়েছে উপকারী উপাদান পলিফেনল। গবেষকদের মতে, পরিমিত ‘জিআই কার্বোহাইড্রেইট’ ওজন কমাতে সহায়তা করে।
গ্রিন টি পান: ‘পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি’র বিজ্ঞানীদের মতে, উচ্চ কার্বোহাইড্রেইট সমৃদ্ধ খাবার ধুয়ে ফেলতে গ্রিন টি উপকারী।
‘মলিকিউর নিউট্রিশন অ্যান্ড ফুড রিসার্চ’য়ের গবেষণা অনুযায়ী গ্রিন টির অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এলিগ্যালেক্টোসিন-৩- গ্যালেট কার্বোহাইড্রেটের সঙ্গে মিশে ক্ষুধার হরমোন নিয়ন্ত্রণ করে এবং বিপাক বাড়িয়ে রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ করে।
সামান্য চর্বি যোগ করা: ‘নেচার’ জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা থেকে জানা যায়, রুটির সঙ্গে জলপাইয়ের তেল (মনোস্যাচুরেইটেড চর্বি) বা মাখন (স্যাচুরেটেড চর্বি) খাওয়া পেট ভরা রাখে।
‘নিয়ট্রিশন জার্নাল’য়ে প্রকাশিত আরেকটি গবেষণা থেকে জানা যায় হৃদপিণ্ডের জন্য স্বাস্থ্যকর চর্বি একই রকম প্রভাব ফেলে। যে সকল অংশগ্রহণকারীরা দুপুরে অর্ধেকটা তাজা অ্যাভাকাডো খেয়েছিলেন তাদের পরে খাওয়ার ইচ্ছা ৪০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছিল।
পান না করে চিবিয়ে খান: একটা আপেলে ৩৪ গ্রাম কার্বোহাইড্রিইট থাকে যা দুটি সাদা রুটির সমান। আপেল রস করে খেলে তা ক্ষুধা নিবারণকারী আঁশকে সরিয়ে দেয় এবং উপকারের তুলনায় ক্ষতিই বেশি করে থাকে।
‘হার্ভার্ড স্কুল অব পাবলিক হেল্থ’য়ের গবেষকদের মতে যারা দৈনিক ফলের জুস পান করে তাদের টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ২১ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।
‘নেচার জার্নাল’য়ে প্রকাশিত গবেষণা থেকে জানা যায়, কঠিন শর্করার তুলনায় তরল শর্করা ১৭ শতাংশ কম পেট ভরায়। তাই বলা হয়, ফল পান না করে খাওয়া ভালো।
রাতের খাবার পর্যন্ত অপেক্ষা করা: ওজন কমাতে রাতে কার্বোহাইড্রেইট খাওয়া ক্ষতিকারক। তবে গবেষকদের মতে, ওজন কমাতে চাইলে রাতে জটিল কার্বোহাইড্রেইট গ্রহণ করা যেতে পারে।
‘ওবেসিটি’ জার্নালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দুই দল মানুষের ওজন কমানোর সমীক্ষা সম্পর্কে জানা যায়।
এখানে একদল দিনে কার্বোহাইড্রেইট গ্রহণ করেন এবং অন্য দল বিকালের পরে কার্বোহাইড্রেইট গ্রহণ করেন।
সন্ধ্যা বা রাতে কার্বোহাইড্রেইট গ্রহণকারীদের ২৭ শতাংশ চর্বি হ্রাস পেয়েছিল এবং ১৩.৭ শতাংশ পেট ভরা অনুভূত হয়। এছাড়াও, এদের মাঝে প্রদাহ ২৭.৮ শতাংশ হ্রাস পায় যা সাধারণের ক্ষেত্রে ৫.৮ শতাংশ।
বিপরীতভাবে, সাম্প্রতিক গবেষণা অনুযায়ী ওজন কমাতে কম কার্বোহাইড্রেইট, উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ সকালের নাস্তা কার্যকর এবং রাতের খাবারে আলু যোগ করা উপকারী।
রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ নির্বাচন করা: শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি যে, রান্না করা পাস্তা বা নুডুলস রেফিজারেইটরে রেখে ঠাণ্ডা করে খেলে তা কম ওজন বাড়ায়।
কারণ ঠাণ্ডা তাপমাত্রা এর প্রকৃতিগত কিছু পরিবর্তন আনে যা ‘রেজিস্টেন্স স্টার্চ’ বা প্রতিরোধী শ্বেতসার নামে পরিচিত।
এই শ্বেতসারের গঠন অনেকটা ডাল, মটর, বিন এবং ওটমিলের মতোই। যা অল্প পরিমাণে খেলেও দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে।
সমীক্ষায় দেখা গেছে, সন্ধ্যায় ‘প্রতিরোধী শ্বেতসার’ খাওয়া সাধারণ কার্বোহাইড্রেইটের তুলনায় ৫১ শতাংশ তৃপ্তির হরমোন বাড়ায় এবং ক্ষুধার হরমোন ১৫ শতাংশ দমন করে।
সকালে উঠেই শরীরচর্চা করা: বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, সকালে নাস্তার আগে শরীরচর্চা করা স্বাভাবিকের তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি চর্বি খরচ করতে সহায়তা করে।
কারণ ক্যালরি গ্রহণের পরপরই ইন্সুলিনের মাত্রা বেড়ে যায় এবং গবেষকদের মতে, তা ২২ শতাংশ পর্যন্ত চর্বি বিপাক করতে পারে।
নাস্তার পরে শরীরচর্চা করা নাস্তার গ্লাইকোজেন খরচ করে কিন্তু নাস্তার আগে শরীরচর্চা করলে তা দেহের চর্বি কমাতে ভূমিকা রাখে।