ডেঙ্গুজ্বর ও প্লাটিলেট নিয়ে আতঙ্ক
Tweet
গত কয়েক বছরে ডেঙ্গু নিয়ে দেশে অযথা আতঙ্ক ও দুশ্চিন্তা অনেকটাই কমেছে। চিকিৎসকদেরও অভিজ্ঞতা বেড়েছে এবং এ রোগে জটিলতা হওয়ার আশঙ্কা প্রায় নেই বললেই চলে। তবু রক্তের প্লাটিলেট কমে যাওয়া নিয়ে এখনো জনমনে নানা ভ্রান্তি দেখা যায়। ডেঙ্গুজ্বরের রোগীর স্বজনেরা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে প্রশ্ন করেন—প্লাটিলেট কত? প্লাটিলেট কি দিতে হবে?
প্রথমেই আসুন, জেনে নিই, প্লাটিলেট কী এবং এটি কমে গেলেই বা কী? প্লাটিলেট বা অণুচক্রিকা রক্তের একটি গুরুত্বপূর্ণ কণিকা, যা রক্ত জমাট বাঁধার জন্য জরুরি। রক্তে স্বাভাবিক প্লাটিলেটের সংখ্যা হলো প্রতি ঘন মিমি রক্তে দেড় লাখ থেকে সাড়ে চার লাখ। নানা কারণেই এর সংখ্যা কমে আসতে পারে, আর তখন রক্তক্ষরণের ঝুঁকি যায় বেড়ে। যেমন প্লাটিলেট এক লাখের কম হলে অস্ত্রোপচার না করারই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কেননা কাটা-ছেঁড়া হলে রক্তক্ষরণ বন্ধ করা কঠিন হয়। প্লাটিলেট ২০ হাজারের নিচে নেমে এলে কোনো আঘাত ছাড়াই রক্তক্ষরণ হতে পারে, যেমন নাক বা দাঁতের মাড়িতে রক্তপাত, মলের সঙ্গে রক্ত ইত্যাদি। প্লাটিলেট ১০ হাজারের নিচে চলে গেলে দেহের ভেতরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ যেমন অন্ত্র, মস্তিষ্ক, কিডনিতে রক্তক্ষরণ হতে পারে।
ডেঙ্গুজ্বরে এই প্লাটিলেট কমে যাওয়ার ব্যাপারটা কিন্তু খুবই সাময়িক। তিন দিনের মধ্যেই এই সংখ্যা আবার স্বাভাবিকে চলে আসে। এ ছাড়া পরীক্ষাগারে যন্ত্রের সাহায্যে যে প্লাটিলেট মাপা হয়, তা সঠিক সংখ্যার চেয়ে সাধারণত কম দেখায়। কেননা এই কণিকাগুলো গুচ্ছ আকারে রক্তে ভেসে বেড়ায় বলে যন্ত্র নিখুঁতভাবে সঠিক সংখ্যা গুনে বের করতে পারে না। ম্যানুয়ালি বা হাতেকলমে অণুবীক্ষণযন্ত্রের সাহায্যে গুনলেও গণনকারীভেদে তারতম্য হবেই। তাই ডেঙ্গুতে প্লাটিলেট ১০, ২০, ৩০ হাজার—যা-ই হোক, তা নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই। মনে রাখবেন, ১০ হাজারের নিচে খুব অল্পসংখ্যক রোগীরই যেতে পারে। আরেকটি কথা, প্লাটিলেট সংগ্রহ ও দেহে প্রবেশ করানোর গোটা পদ্ধতি যেমন জটিল, তেমনি ব্যয়সাপেক্ষ। কিন্তু এক ইউনিট প্লাটিলেট ভরলে বড়জোর ১০ হাজার বাড়তে পারে, চিকিৎসাক্ষেত্রে যাতে কোনো লাভ হয় না। তাই প্লাটিলেট নিয়ে অযথা দুশ্চিন্তা করে লাভ নেই। ডেঙ্গুজ্বরে যথাযথ বিশ্রাম, যথেষ্ট পরিমাণে পানি ও তরল খাবার গ্রহণই মূল চিকিৎসা।
প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন: খাবার গ্রহণের সময় জিব জ্বালা করলে এর কারণ কী হতে পারে?
উত্তর: বেশির ভাগ ক্ষেত্রে জিবে ঘা থাকলে খাবার গ্রহণের সময় জ্বালা করতে পারে। ছত্রাক সংক্রমণ, রক্ত ও ভিটামিনের স্বল্পতা, অনেক সময় প্রদাহজনিত কারণে জিবে ঘা হয় এবং খাবার সময় জ্বলে। এরÿসঠিক কারণ জেনে নিয়ে চিকিৎসা করানো উচিত।
ডা. আ ফ ম হেলালউদ্দিন
মেডিসিন বিভাগ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ