নিশিপদ্ম কাহন
Tweet
ফেরদৌস রহমান পলাশঃ আম্মুর নাইট কুইন গাছে দীর্ঘ ১২ বছর পর আজ প্রথম ফুল ফুটেছে।
আমার মা বীর ‘মুক্তিযোদ্ধা সেলিনা রহমান’ একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারী ব্যাংক কর্মকর্তা। আপাদমস্তক একজন সংগ্রামী নারীর উৎকৃষ্ট উদাহরণ আমার ‘মা’। একজন সফল নারী আমার ‘মা’। একজন মমতাময়ী নারী আমার ‘মা’। প্রাণী এবং গাছের প্রতি আম্মুর অঘাত ভালোবাসা এবং মমতা কাজ করে। অবসরে নানা ধরণের গাছ লাগানো, গাছের পরিচর্যা করা আম্মুর অন্যতম শখ। আম্মুর দীর্ঘ ১২ বছরের মমতার ফসল আজকের এই ‘নাইট কুইন’। ফুটন্ত ‘নাইক কুইন’ নিয়ে আম্মুর চোখে মুখে যে আনন্দের ছটা আজ আমি দেখছি তা আসলে ভাষায় প্রকাশ করার সাধ্য আমার নেই। আম্মুর দীর্ঘায়ু কামনা করছি। এই অঘাত ভালোবাসা আর মমতার ছায়াতলে আরও হাজার বছর আমি কাটিয়ে দিতে চাই।
নাইট কুইন ( নিশি পদ্ম) কেমন ফুল-
‘নাইট কুইন’, ‘রাত কী রানি’ কিংবা ‘নিশিপদ্ম’ নামেই বোঝা যায়, এ ফুলের সঙ্গে রাতের যোগাযোগ আছে। এ ফুল শুধু রাতে ফোটে। ছাদে বা বারান্দায় এই গাছ একটা থাকলে, তাতে ফুল ধরলে দারুণ দেখায়। আর এ ফুলের গন্ধও ভারি মিঠে, উগ্র নয়। একটা গাছে একসঙ্গে অনেক নিশিপদ্মও ফোটে। রাতের অন্ধকারে গাছ আলো করে থাকে এই ফুল।
তবে এ ফুল ফোটার নির্দিষ্ট সময় আছে। সারা দিন কিন্তু প্রস্ফুটিত ফুলের দেখা পাবেন না। সন্ধে হওয়ার পর থেকেই একটু একটু করে পাপড়ি মেলতে শুরু করে নিশিপদ্ম। যত রাত বাড়ে, তত পাপড়ি খোলে। এ ফুল ফোটা দেখার জন্য সবচেয়ে ভাল সময় রাত বারোটা থেকে দুটো। ফুল পুরো ফুটতে ফুটতে প্রায় মাঝরাত। ভোররাত পর্যন্তও থাকে এই প্রস্ফুটিত নিশিপদ্ম। কিন্তু সকাল হলেই একেবারে কুঁকড়ে বুজে যায়। তবে গাছটি লাগালেই ফুল পাবেন না। তার জন্য কিন্তু বেশ অপেক্ষা করতে হবে।
পাথরকুচি পাতা থেকে যেমন গাছ বেরোয়, এ গাছও সে ভাবেই বাড়ে। এ গাছের পাতা মাটিতে পুঁতে দিতে হয়। দিনকয়েক অপেক্ষা করলে দেখা যায় শিকড় বেরোতে শুরু করেছে। তখন সেই শিকড় সহ ছোট চারা নিয়ে বড় টবে ভাল করে মাটি দিয়ে পুঁতে দিতে হয়। গাছও বাড়তে থাকে। অনেকে ব্রহ্মকমল আর নিশিপদ্ম একই ফুল বা গাছ ভেবে ভুল করেন। দুটো কিন্তু আলাদা গাছ।
• এ গাছ লাগানোর সঙ্গে সঙ্গে ফুল পাওয়া যায় না। গাছ বাড়লেও প্রথম বছরেই এ গাছে ফুল ধরে না। তার জন্য ধৈর্য ধরতে হয়। গাছ বড় হয়ে তাতে ফুল আসতে মোটামুটি বছর তিনেক সময় লাগে। কখনও চার বছর পরেও গাছে ফুল ধরতে পারে আবার আরও অনেক বছর সময় নিতে পারে। তাই ফুল না ধরলেও প্রথম তিন বছর গাছের যত্নআত্তি করে যেতে হয়।
• এই গাছ কড়া রোদে না রেখে একটু ছায়ায় রাখলেই ভাল। কড়া রোদে গাছের ডাল হলুদ হয়ে যায়। তখন দেখতে ভাল লাগে না।
• সন্ধের পরে গাছ ঘরে নিয়ে আসতে পারলে সারা রাত ধরে গাছে ফুল ফোটা দেখতে পাওয়া যায়। ভোর চারটের পর থেকে ফুল গুটিয়ে যায়। তাই সকাল বেলা দেখবেন পুরো ফুলটাই গুটিয়ে কুঁড়ি হয়ে গিয়েছে। নিশিপদ্মের শোভা দু’চোখ ভরে দেখতে গেলে দু’চোখের পাতা রাতে এক করা যাবে না। এই অভূতপূর্ব দৃশ্য ক্যামেরায় ভিডিও করে তুলে রাখতে পারেন। এ ফুল ফুটতে শুরু করলে ধীরেধীরে এর মিঠে গন্ধও ছড়িয়ে পড়ে সারা ঘরে। সাদা রঙের এই ফুল লম্বা এবং একটু চ্যাপ্টা ডালেই হয়ে থাকে।
• এ ফুলের বাহার গাছেই। ফুল তুলে ঘরে ফ্লাওয়ার ভাসে রাখলেও খুব একটা লাভ নেই। দিনের বেলায় তা কুঁড়িই যায়।