পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করল ইংল্যান্ড
Tweet
ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসে দলকে টানলেন বাবর আজম। দুই মেজাজের দুই ফিফটিতে অধিনায়ককে সঙ্গ দিলেন ইমাম-উল-হক ও মোহাম্মদ রিজওয়ান। ইংল্যান্ডকে রেকর্ড গড়ার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিল পাকিস্তান। জেমস ভিন্সের প্রথম আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরি ও লুইস গ্রেগরির ফিফটিতে সেই চ্যালেঞ্জে জিতে সফরকারীদের হোয়াইটওয়াশ করে ছাড়ল ইংল্যান্ড।
বার্মিংহ্যামে মঙ্গলবার তৃতীয় ও ওয়ানডেতে ৩ উইকেটে জিতেছে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। ৩৩২ রানের লক্ষ্য ১২ বল বাকি থাকতে ছুঁয়ে ফেলেছে ইংল্যান্ড। এজবাস্টনে এই প্রথম তিনশ ছাড়ানো লক্ষ্য তাড়া করে জিতল কোনো দল। ১৯৯৩ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার ২৭৮ রানের লক্ষ্য তাড়া ছিল আগের রেকর্ড।
দ্বিতীয় সারির দল নিয়েও তিন ম্যাচের সিরিজ ৩-০ ব্যবধানে জিতল ইংল্যান্ড। সঙ্গে আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ সুপার লিগে পেল মূল্যবান ৩০ পয়েন্ট।
১৫৮ রানের চমৎকার ইনিংসে পাকিস্তানকে পথ দেখান বাবর। ৭৪ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন রিজওয়ান। তাদের ছাপিয়ে ইংল্যান্ডের জয়ের নায়ক ভিন্স ও গ্রেগরি। ১০২ রানের ঝকঝকে ইনিংস খেলেন ভিন্স, গ্রেগরি করেন ৭৭।
ম্যাচের প্রথম ওভারে সাকিব মাহমুদকে বাউন্ডারিতে শুরু করেন ইমাম। তিন বল পর মারেন আরেকটি। ইংল্যান্ড রিভিউ নিলে ওভারের শেষ হলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরতে হতো তরুণ এই ওপেনারকে।
পঞ্চম ওভারে ফখর জামানকে ফিরিয়ে পাকিস্তানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন মাহমুদ। আগের দুই ম্যাচে দ্রুত আউট হওয়ার বাবর ছিলেন সাবধানী, রানের খাতা খোলেন ১৫তম বলে। পাওয়ার প্লেতে সফরকারীরা তুলতে পারে কেবল ৩৫ রান।
নিজের মতো করেই খেলে যান ইমাম। মন্থর শুরুর পর ধীরে ধীরে রানের গতি বাড়ান বাবর। তাদের ব্যাটে ২৪ ওভারে একশ স্পর্শ পাকিস্তানের রান।
ফিফটি স্পর্শ করার পর বেশিক্ষণ টিকেননি ইমাম। ম্যাট পারকিনসনের বলে বোল্ড হয়ে থামেন এই ওপেনার। ভাঙে ১২৭ বল স্থায়ী ৯২ রানের জুটি। ৭ চারে ৭৩ বলে ৫৬ রান করেন ইমাম।
মোহাম্মদ রিজওয়ান ক্রিজে যাওয়ার পর বাড়ে পাকিস্তানের রানের গতি। বাবরের সঙ্গে ১২০ বলে গড়েন ১৭৯ রানের বিস্ফোরক জুটি। ওয়ানডেতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে যে কোনো উইকেটেই এটি পাকিস্তানের সর্বোচ্চ রানের জুটি।
৭২ বলে পঞ্চাশ স্পর্শ করা বাবর সেঞ্চুরিতে যান ১০৪ বলে। পরের পঞ্চাশ আসে আরও দ্রুত। আগের সেরা ১২৫ ছাড়িয়ে ১৩৪ বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো স্পর্শ করেন দেড়শ রান।
এই ইনিংস খেলার পথে বেশ কয়েকটি রেকর্ড গড়েন বাবর। পাকিস্তানের প্রথম অধিনায়ক হিসেবে খেলেন দেড়শ ছোঁয়া ইনিংস। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অধিনায়ক তো বটেই পাকিস্তানের যে কোনো ব্যাটসম্যানেরই এটা সর্বোচ্চ।
দক্ষিণ আফ্রিকার হাশিম আমলাকে (৮৪) ছাড়িয়ে সবচেয়ে কম ইনিংসে ১৪ সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েন বাবর (৮১)। শেষ ওভারে আউট হয়ে যাওয়া এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান কেবল ১৫ রানের জন্য আমলার সবচেয়ে কম ইনিংসে চার হাজার রানের ভাঙতে পারেননি।
৪৬তম ওভারে রিজওয়ানকে কট বিহাইন্ড করে জুটি ভাঙেন ব্রাইডন কার্স। পাকিস্তানের কিপার-ব্যাটসম্যানের ৫৮ বলে খেলা ৭৪ রানের ইনিংস গড়া ৮ চারে। এরপর তেমন কোনো জুটি পায়নি পাকিস্তান। দ্রুত রান তোলার চেষ্টায় উইকেট হারায় নিয়মিত।
ছক্কায় চেষ্টায় শেষ ওভারে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন বাবর। ১৩৯ বলে খেলা তার ১৫৮ রানের ইনিংসে চার ছক্কার পাশে আছে ১৪টি চার।
তৃতীয় ওয়ানডেতেই পাঁচ উইকেটের দেখা পেলেন কার্স। ৬১ রানে তিনি নেন ৫ উইকেট। মাহমুদ ৩ উইকেট নেন ৬০ রানে।
রান তাড়ায় শুরুতেই দাভিদ মালানকে কট বিহাইন্ড করেন হাসান আলি। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে শূন্য রানে ফিরলেন ইংলিশ ওপেনার। অন্য প্রান্তে ফিল সল্টের ব্যাট ছিল উত্তাল। সপ্তম ওভারে বোলিংয়ে এসে তাকে বিদায় করেন হারিস রউফ। ৭ চারে ২২ বলে ৩৭ রান করেন সল্ট।
রউফ পরে থামান ৭ চারে ৩৯ রান করা জ্যাক ক্রলিকেও। ৭ রানে হাসানের হাতে জীবন পাওয়া বেন স্টোকস ডানা মেলতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু শাদাব খানকে ছক্কায় ওড়িয়ে পরের বলে কিপারকে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন ইংলিশ অধিনায়ক। এরপর জন সিম্পসন দ্রুত ফিরলে চাপে পড়ে ইংল্যান্ড।
পরিস্থিতি হতে পারতো আরও খারাপ। কিন্তু ১০ রানে গ্রেগরির ক্যাচ হাতে জমাতে পারেননি ইমাম। পাকিস্তানকে দিতে হয় এর মাশুল। ষষ্ঠ উইকেটে ভিন্সের সঙ্গে গ্রেগরির ১২৯ জুটিতে এগিয়ে যায় ইংল্যান্ড।
সেঞ্চুরি ছুঁয়ে বেশিদূর যেতে পারেননি ভিন্স। ৯৫ বলে ১১ চারে ১০২ রান করে রউফের বলে ধরা পড়েন বাবরের হাতে। তিন ছক্কা ও ছয় চারে ৭৭ রান করে রউফের পরের ওভারে বিদায় নেন গ্রেগরি।
বাকিটা সহজেই সারেন ক্রেইগ ওভারটন ও কার্স। হোয়াইটওয়াশড হয়ে মাঠ ছাড়ে পাকিস্তান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
পাকিস্তান: ৫০ ওভারে ৩৩১/৯ (ইমাম ৫৬, ফখর ৬, বাবর ১৫৮, রিজওয়ান ৭৪, মাকসুদ ৮, হাসান ৪, ফাহিম ১০, শাদাব ০, শাকিল ৩*, আফ্রিদি ০, রউফ ০*; সাকিব ১০-২-৬০-৩, গ্রেগরি ৭-০-৪২-০, ওভারটন ১০-০-৬৪-০, কার্স ১০-০-৬১-৫, স্টোকস ৪-০-৩১-০, পারকিনসন ৯-০-৭০-১)।
ইংল্যান্ড: ৪৮ ওভারে ৩৩২/৭ (সল্ট ৩৭, মালান ০, ক্রলি ৩৯, ভিন্স ১০২, স্টোকস ৩২, সিম্পসন ৩, গ্রেগরি ৭৭, ওভারটন ১৮*, কার্স ১২*; আফ্রিদি ১০-০-৭৮-০, হাসান ৯-০-৬৯-১, রউফ ৯-০-৬৫-৪, ফাহিম ৬-০-৩৪-০, শাদাব ৯-০-৬১-২, সাকিল ৪-০-২০-০)।
ফল: ইংল্যান্ড ৩ উইকেটে জয়ী
সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজে ৩-০তে জয়ী ইংল্যান্ড
ম্যান অব দা ম্যাচ: জেমস ভিন্স
ম্যান অব দ সিরিজ: সাকিব মাহমুদ