বড় গরুর ব্যবসায়ীরা হতাশ রাজশাহীর পশুর হাটে

Share on Facebook

রাজশাহীর হাটে ছোট গরুর চাহিদা ও দাম দুই-ই বেশি। অপরদিকে, বড় গরুর দাম একে তো কম তারপরও হচ্ছে না বিক্রি। এতে হতাশা প্রকাশ করেছেন খামারি ও ব্যবসায়ীরা।

মঙ্গলবার (২০ জুলাই) সকাল থেকেই রাজশাহীতে সকাল থেকে শুরু হয় বৃষ্টি। তাই শেষ দিনে হাটে তেমন গরু ওঠেনি। তবে হাটে ছিল ক্রেতাদের ভিড়। বৃষ্টি, কাদা ও করোনা উপেক্ষা করেই ক্রেতারা ছুটেছেন হাটে।

উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় পশুর হাট সিটি হাট। এই হাটে অন্য দিনের মতো আজও দেখা গেছে, স্বাস্থ্যবিধি না মানার দৃশ্য। মাস্ক নেই অধিকাংশ ক্রেতা ও বিক্রেতার মুখে। হাটে ভিড়ের মধ্যে ঠেলাঠেলি করেই ক্রেতারা কিনছেন গরু।

সিটি হাটের ক্রেতা-বিক্রেতারা জানিয়েছেন, করোনায় অধিকাংশ মানুষের আর্থিক অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। তাই এবার ছোট গরুর চাহিদা বেশি থাকায় দামও বেশি। সেই তুলনায় বড় গরুর দাম অনেক কম। কম দাম বলার পরও মানুষ নিতে চাইছেন না বড় কোনো গরু। এতে চোখে মুখে চরম হতাশার ছাপ প্রকাশ পেয়েছে বড় গরুর খামারিদের।

রাজশাহীর সিটি হাটে শুধু সাধারণ মানুষই আসেননি। এসেছেন ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, সিলেটসহ দেশের নানা প্রান্তের ব্যবসায়ীরা। তাদেরও চাহিদা ছোট ও মাঝারি গরু। কয়েকদিন থেকেই ব্যবসায়ীরা ছোট ও মাঝারি গরু কিনে ট্রাক ভর্তি করে গন্তব্যে পাঠিয়েছেন। আর তাই বড় গরু নিয়ে হাটে বসে থেকে হা হুতাশ করতে দেখা গেছে ব্যবসায়ীদের।

রাজশাহী মহানগরের সাগরপাড়া এলাকার বাসিন্দা রুবেল হোসেন বলেন, ‘বাজারে একে তো বৃষ্টি, কাদার ছড়াছড়ি। তার ওপর আবার তেমন গরুও নেই। দু’চারটে থাকলেও ব্যবসায়ীরা দাম চাইছেন আকাশচুম্বী।’

তিনি বলেন, ‘নিয়ত করেছি কোরবানি দেবো। কিন্তু সাধ্যের বাইরে যদি দাম চায় তাহলে কীভাবে কী হবে বুঝতেছি না। খুবই বাজে অবস্থা।’ রাজশাহীর তানোর উপজেলার মুণ্ডুমালা থেকে দুটি মাঝারি আকারের গরু নিয়ে এসেছিলেন বাবর আলী। তিনি জানালেন, আড়াই থেকে তিন মন মাংস হবে তার প্রতিটি গরুর। প্রতিটির দাম চাচ্ছেন ৭৫ হাজার টাকা। ক্রেতারা ৬০ হাজারের বেশি দিতে চাচ্ছেন না। তাই তিনি গরুর রশি ধরে দাঁড়িয়ে আছেন।

পবার বড়গাছি থেকে তিনটি গরু বিক্রি করতে গিয়েছিলেন আনিসুর রহমান। তার গরুর আকার বেশ বড়। আনিসুর প্রতিটির দাম চাচ্ছেন এক লাখ ৮০ হাজার টাকা। কিন্তু ক্রেতারা এক লাখ ৩০ হাজারের বেশি দিতে চাচ্ছেন না। কিছুক্ষণ পর আনিসুরের কাছে গিয়ে দেখা যায়, তার একটি গরু বিক্রি হয়েছে। তিনি দাম পেয়েছেন এক লাখ ৩৫ হাজার টাকা। অন্য দুটি বিক্রি হয়নি।

জেলা প্রাণিসম্পদ দফতরের তথ্যানুযায়ী, রাজশাহীতে এ বছর কোরবানির জন্য ২ লাখ ৭০ হাজার পশুর দরকার হতে পারে। তবে জেলার ১৪ হাজার ১৯৯টি খামারে গবাদি পশু প্রস্তুত আছে ৩ লাখ ৮২ হাজার ১১৪টি। গত বছরে এই সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৬৯ হাজার। রাজশাহীর ৯টি উপজেলা মধ্যে মোহনপুরে সবচেয়ে বেশি গবাদিপশু পালিত হয়েছে। সংখ্যায় যা ৫৭ হাজার ১১১টি। এর পরের অবস্থানে রয়েছে জেলার পবা উপজেলা। সেখানে পালিত হয়েছে ৪৩ হাজার ৮৬০টি পশু।

সিটি হাটের ইজারাদারদের একজন ফারুক হোসেন ডাবলু। তিনি বলেন, ‘এবার মানুষের হাতের অবস্থা খুব খারাপ। তাই হাটে তেমন বেচাবিক্রি নেই। সিটি হাটে বেশির ভাগই ছোট ও মাঝারি সাইজের গরু খুঁজছেন ক্রেতারা। অন্যদিকে বড় সাইজের গরুগুলোর মালিকেরা দুশ্চিন্তায় সময় পার করছেন।’

তিনি বলেন, ‘পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে সরকারি কিছু নির্দেশনা আছে। সেগুলো আমরা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। আমাদের এবং কয়েকটি ব্যাংকের পক্ষ থেকে হাটে জাল টাকা শনাক্তকরণ মেশিনও বসানো হয়েছে।’

Leave a Reply