সিলেট ভ্রমণের ডায়েরি

Share on Facebook

ফেসবুকের একটি গ্রুপ থেকে ২০১৭ সনের ২৭ জুন রাতে সিলেটের বিভিন্ন দর্শণীয় স্থান দেখার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছিলাম। এর আগে সিলেটের শাহজালাল, শাহপরান দরগা, ইত্যাদি দেখে এসেছিলাম। তাই এবারের উদ্দেশ্য পান্থুমাই ঝর্না, বিছানাকান্দি, জাফলং, রাতারগুল ইত্যাদি দর্শনীয় স্থানে ঘুরতে যাওয়া।

সারারাত ভ্রমণ করে খুব ভোরে সিলেটে পৌঁছে আগে থেকে বুকিং করা হোটেলে গিয়ে উঠি। ফ্রেশ হয়ে সকালের নাস্তা শেষ করে কিছুক্ষণ হোটেলে বিশ্রাম নেই। তারপর পূর্ব পরিকল্পনা মত প্রথমেই রওয়ানা দিলাম বড়হিল (পান্থুমাই ঝর্ণা) ঝর্ণা ও বিছানাকান্দি দেখার উদ্দেশ্যে।

হাদারপাড় বাজার থেকে বিছানাকান্দি ও পান্থুমাই ঝর্ণা যাওয়ার পথে

দুটো লেগুনা নিয়ে আমরা সবাই রওয়ানা দেই।
পান্থুমাই ঝর্ণা ও বিছানাকান্দি সিলেট শহর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে। হাদারপাড় বাজারে পৌঁছে হালকা খানাদানার পর ট্রলারে করে ঝর্ণা দেখার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম।

ট্রলারে চলার পথে নদীর দুইপাড়ের সৌন্দর্য্য দেখতে দেখতে পৌঁছে গেলাম বড়হিল (পান্থুমাই ঝর্ণা) ঝর্ণার কাছে। ঝর্ণাটি ভারতের অংশে তাই বেশি কাছে যাওয়া যায়নি। ভারতীয়রা একে বলে বড়হিল ঝর্ণা, বাংলাদেশীরা বলে পান্থুমাই ঝর্ণা।

মেঘালয়ের পাহাড় থেকে উৎপন্ন ঝর্ণাটির নৈসর্গিক সৌন্দর্য দেখার মতো। বাংলাদেশের সীমান্তের শেষ ফুটবল মাঠটিও দেখলাম।

অতপর, বিছানাকান্দির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম। ঘন্টাখানেক ট্রলারে চড়ে পৌঁছে গেলাম বিছানাকান্দি।

সকাল ৮.৩০ মিনিটে রওয়ানা দিয়ে ঝর্ণা দেখে বিছানাকান্দি পৌঁছলাম বিকেল ৩ টায়। পৌঁছেই সেখানের ভাসমান হোটেলে দুপুরের খাবার খেয়ে বিছানাকান্দির বরফশীতল পানিতে হাঁটাহাঁটি ও গোসল সেরে নিলাম। আমার কাছে মনে হয় বিছানাকান্দির সৌন্দর্য নিজের চোখে না দেখে থাকলে বর্ণনা দিয়ে বুঝানো মুশকিল।

বিছানাকান্দি

বড়ই সৌন্দর্য এই বিছানাকান্দি।

মজার ব্যাপার হলো, সেখানের ভাসমান বাজারে ভারতের পণ্য খুব কম দামে কিনতে পাওয়া যায়। মোটামোটি সবাই গোসল শেষে কেনাকাটা করে ট্রলারে উঠলাম। হোটেলে পৌঁছার আগে পানসি হোটেলে রাতের খাবার খেয়ে নিলাম।

পরদিন সকাল ৯ টায় নাশতা খেয়ে রাতারগুল, জাফলং, মায়া ঝর্ণা, চা বাগান ইত্যাদি দেখার জন্য বের হলাম।

প্রথমে সিলেট শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে রাতারগুল (সোয়াম্প ফরেস্ট) দেখার জন্য লেগুনা ভাড়া করে সেখানে পৌঁছলাম।

৪টি নৌকায় করে আমরা রাতারগুল ঘুরে ঘুরে দেখলাম। এ এক অসাধারন বন! পুরো বনটি পানির উপরে। আমরা নৌকা নিয়ে সেই বনের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করলাম।

রাতারগুল

সেখান থেকে বের হয়ে, সিলেট শহর থেকে প্রায় ৮৫ কিলোমিটার দূরে জাফলং এবং সেখানের মায়া ঝর্ণা দেখতে রওয়ানা হলাম। পথিমধ্যে চা বিরতি দিয়ে দুপুর ২ টার দিকে পৌঁছে গেলাম জাফলং।

জাফলং এর রাস্তা মোটামোটি ভাল। তবুও দীর্ঘ সময় লেগুনায় বসে থেকে থেকে আমার মত ব্যাক পেইনওয়ালাদের খবর হয়ে গিয়েছিলো।

তবে ঝর্ণা দেখে, জাফলং এর পিয়াইন নদীতে গোসল করে, দূর থেকে ভারতের ডাউকী (শিলং, মেঘালয় রাজ্যে) শহর, তামাবিল বন্দর, চা বাগানের অপরূপ সৌন্দর্য দেখে সব ক্লান্তি দূর হয়ে গেলো।

জাফলং এর নদীতে দল বেঁধে গোসল

অবশেষে রাতে সিলেট পৌছে “পাচঁভাই হোটেলে” রাতের খাবার খেয়ে ইউনিক পরিবহণে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করার মধ্যে দিয়ে শেষ হলো আমাদের স্মরণীয় সুন্দর সিলেট ট্যুর।

সারোয়ার হোসাইন ভূঁইয়া
পর্যটক।

Leave a Reply