অরোরা বা মেরুপ্রভা নিয়ে যতো কথা

Share on Facebook

অরোরা বা মেরুজ্যোতির নাম আমরা সবাই শুনেছি, কিন্তু তা সৃষ্টি হওয়ার রহস্য হয়তো আমাদের মাঝে অনেকেরই জানা নেই।
অরোরা হলো মেরু অঞ্চলের আকাশে দৃশ্যমান অত্যন্ত মনোরম এবং বাহারী আলোকছটা যাকে এক সময় অতিপ্রাকৃতিক বলে বিবেচনা করা হলেও বর্তমানে তা নিতান্তই প্রাকৃতিক ঘটনা বলে প্রমাণিত।
সাধারণ ভাবে বলতে গেলে, বায়ুমন্ডলের থার্মোস্ফিয়ারে থাকা অক্সিজেন ও নাইট্রোজেন পরমাণুর সাথে ম্যাগনেটোস্ফিয়ার থেকে আসা চার্জিত কণিকাসমূহের (প্রধা্নত ইলেক্ট্রন, কিছু ক্ষেত্রে প্রোটন) সংঘর্ষের ফলেই অরোরা তৈরী হয়। সংঘর্ষের কারণে পরমাণু বা অণুসমূহ কিছু শক্তি লাভ করে চার্জিত কণিকাসমূহের কাছ থেকে যা অভ্যন্তরীণ শক্তি হিসেবে সঞ্চিত হয়। এসব অভ্যন্তরীণ শক্তি যখন আলোকশক্তি হিসেবে বিকরিত হয়, তখনই মেরুজ্যোতি দেখা যায়।
এসব ইলেক্ট্রন সাধারণত পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র বরাবর পরিভ্রমন করায় শুধুমাত্র মেরু অঞ্চলেই অরোরা দৃশ্যমান হয়।
উত্তর অক্ষাংশে অরোরা  সুমেরুজ্যোতি বা সুমেরুপ্রভা (Aurora Burealis/The Northern Light)  নামে পরিচিত,  এবং দক্ষিণ অক্ষাংশে একে বলা হয় Aurora Australis (or The Southern Light).
উল্লেখ্য যে বিভিন্ন রঙের অরোরা সৃষ্টি হতে পারে। মেরুজ্যোতির রঙ নির্ভর করে কোন গ্যাসীয় পরমাণু ইলেক্ট্রন দ্বারা উদ্দীপ্ত হচ্ছে, এবং এই প্রক্রিয়ায় কত শক্তি বিনিময় হচ্ছে তার উপর।

অরোরার সবচেয়ে পরিচিত রঙ যা অধিকাংশ সময় দেখা যায় তা হলো সবুজাভ-হলুদ, তার জন্য দায়ী অক্সিজেন পরমাণু। অক্সিজেন থেকে অনেকক্ষেত্রে লাল রঙ এর অরোরাও তৈরী হয়। নাইট্রোজেন সাধারণত একটি নীল রঙের আলো দেয়। এছাড়াও অক্সিজেন এবং নাইট্রজেন পরমাণু অতি-বেগুনী রশ্মি নির্গত করে, যা শুধুমাত্র স্যাটালাইটের বিশেষ ক্যামেরা দ্বারা শনাক্ত করা যায়, খালি চোখে দেখা যায় না।

কেউ যদি অরোরা দেখতে চান, তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, অরোরা দর্শনের সবচেয়ে ভালো স্থান হলো আলাস্কা, কানাডা, এবং স্ক্যান্ডিনেভিয়ার কিছু অঞ্চল। এসব স্থানে প্রায় নিয়মিতই মেরুজ্যোতি চোখে পড়ে। তবে মেরূপ্রভা সূর্যালোক থেকে অনেক ম্লান হওয়ায়, তা পৃথিবী থেকে দিনের বেলায় দেখা যায় না।

এছাড়াও কানাডিয়ান সীমান্তের কাছাকাছি  যুক্তরাষ্ট্রের উত্তরসীমায়  সাধারণত বছরে কয়েক বার অরোরা দেখা যায়।
কিছু দুর্লভ মুহূর্তে, হয়তো প্রতি দশকে একবার, ফ্লোরিডাতে কিংবা সুদূর দক্ষিণে জাপানেও অরোরা দৃশ্যমান হয়।

Leave a Reply