আমি এই মর্ত্যের পৃথিবীতে, এই ধরাধামে পরীমনি নামের কাউকে দেখিনিঃ মাসরুর আরেফিন
Tweet
‘আমি এই মর্ত্যের পৃথিবীতে, এই ধরাধামে পরীমনি নামের কাউকে দেখিনি। অতএব তার নম্বর আমার কাছে থাকার প্রশ্নই আসে না। এমনকী ‘বোট ক্লাব’ ঘটনার আগ পর্যন্ত পরীমনি নামটাও শুনিনি। আমার তখন মানুষকে জিজ্ঞাসা করতে হয়েছিল যে, কে এই পরীমনি?’
সম্প্রতি প্রকাশিত একটি সংবাদ নিয়ে নিজের ফেসবুক পেজে এমন দাবি করেছেন সিটি ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সাহিত্যিক মাসরুর আরেফিন। একই সঙ্গে এ সংবাদকে মিথ্যাচার বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেনছেন, ‘তাহলে ঘটনা কী? আমি সত্যি জানি না, ঘটনা কী। বুঝি যে, আমাকে নিয়ে (অর্থাৎ এক অর্থে সিটি ব্যাংক নিয়ে) একটা ‘সস্তা’ ষড়যন্ত্র চলছে।’
যুক্তরাষ্ট্রে বিএসইসি আয়োজিত বিনিয়োগ রোডশো শেষে এখন ঢাকায় ফিরেছেন মাসরুর আরেফিন। এরই মধ্যে পরীমনিকে গাড়ি উপহার দিয়েছেন তিনি এমন খবরের সরগরম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। পক্ষে-বিপক্ষে চলছে নানা আলোচনা। এই ইস্যুতে রোববার (৮ আগস্ট) রাতে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একটি পোস্ট করেন তিনি।
সেখানে তিনি বলেন, ‘আমেরিকায় বিএসইসি আয়োজিত বিনিয়োগ রোড শো-তে অংশ নিয়ে আমি এখন ঢাকার পথে। এর মধ্যেই শিকার হলাম এক প্রবল মিথ্যাচারের।’
তার বিরুদ্ধে প্রকাশিত খবর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি এই মর্ত্যের পৃথিবীতে, এই ধরাধামে পরীমনি নামের কাউকে দেখিনি। অতএব তার নম্বর আমার কাছে থাকার প্রশ্নই আসে না। এমনকি ‘বোট ক্লাব‘ ঘটনার আগে পর্যন্ত পরীমনি নামটাও শুনিনি। আমার তখন মানুষকে জিজ্ঞাসা করতে হয়েছিল যে, কে এই পরীমনি?’
মাসরুর আরেফিন বলেন, ‘আমার কাজ সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ব্যাংকিং আর তারপর সাহিত্য নিয়ে পড়ে থাকা। ঢাকার কেউ (যারা ক্লাবে যান তাদের কেউ) বলতে পারবেন না তারা আমাকে কোনোদিন কোনো ক্লাব বা পার্টিতে দেখেছেন (এখানে আমি ক্লাব বা পার্টিতে যাওয়ার নিন্দা করছি না, সেটা যারা যাবার তারা যেতেই পারেন; আমি শুধু বোঝাচ্ছি যে মানুষ হিসেবে আমার টাইপটা কী)। এতটাই অফিস ও ঘরমুখী এক মানুষ আমি।’
‘অতএব বলছি, পরীমনিকে গাড়ি দেয়ার কথাটা আমার কানে লাগছে মঙ্গল গ্রহের ভাষায় বলা কিছু কথার মতো। আমার নিজের একটাও গাড়ি নেই। ব্যাংক আমাকে চলার জন্য গাড়ি বরাদ্দ দিয়েছে, তাতেই চড়ি। ব্যাংকের চাকরির শেষে নিশ্চয় কোনো ব্যাংক থেকে কারলোন নিয়ে একটা গাড়ি কিনে তাতে চড়ব।’
তিনি বলেন, ‘কোনো অভিযোগের মধ্যে মিনিমাম, মিনিমাম এক সুতো সত্য থাকতে হয়। কিন্তু এ এক ভয়ঙ্কর বিষয় যে, আমি যাকে চিনি না, জীবনে যার বা যাদের সঙ্গে হ্যালো বলা দূরে থাক, যাদের নামটা পর্যন্ত আমি প্রথম জানলাম এই কদিন আগে, সেই নায়িকা বা মডেলকে আমি গাড়ি দিয়ে ফেললাম? কোথায় যোগাযোগ হলো আমাদের? ফোন কল? তার নম্বর কী? কল রেকর্ড আনা হোক।’
নিজের সাহিত্যিক জীবনের কথা উল্লেখ করে মাসরুর আরেফিন বলেন, ‘তারা বুঝলেন না যে, ‘আগস্ট আবছায়া‘ (বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ওপরে চার বছরের গবেষণার শেষে লেখা আমাদের অন্যতম এক প্রধান উপন্যাস), ‘আলথুসার‘ বা ‘আন্ডারগ্রাউন্ড’ নামের উপন্যাসের লেখকের, বাংলায় ‘ফ্রানৎস কাফকা গল্পসমগ্র’ কিংবা ‘হোমারের ইলিয়াড’-এর এই অনুবাদকের এক পয়সা দুর্নীতির টাকাও থাকতে পারে না যা দিয়ে তিনি নিজের জন্য ব্যাংক লোন নেয়া ব্যতিরেকে একটা বিলাসী বা ভালো গাড়ি কিনতে পারেন। অন্যকে কিনে দেবার কথা বাদই দিন।’
‘এবার লেখক সত্তার জায়গা থেকে একটা কথা বলি। আইনি বিষয় ও সামাজিক বোঝাপড়ার বিষয়গুলো বেশ তো গুলিয়ে যাচ্ছে! আমার কাউকে কোনো গাড়ি দেবার সামর্থ্য নেই। কিন্তু দেখা যাচ্ছে আমার কাউকে ধরুন ভালো লাগল (যার সম্ভাবনা বাস্তবে কম, কারণ আমার দুই মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে এক সুন্দর সংসার আছে), তখন তাকে যদি আমি আমার সামর্থের মধ্যে দুই বক্স চকলেটও কিনে দিই, সেটা নিয়ে আইন ছাপিয়ে, সংবিধানের মৌলিক অধিকার ছাপিয়ে ‘সমাজের বিচার’ নামের যে-এক ড্রাগন আছে, সে এই সোস্যাল মিডিয়ার যুগে হাউ-হাউ করে উঠবে।’
স্ট্যাটাসে তিনি আরও বলেন, ‘শেষ কথা একটাই, আমি আমার মানবজীবনে এই নায়িকা বা মডেলদেরকে দেখিনি। তাদের সঙ্গে না-দেখা জগতের ফোনের যে-হ্যালো, সেটাও কোনোদিন বলিনি। তারা কারা তাও আমি জানতাম না ‘বোট ক্লাব’ কাণ্ডের আগে। এখন তাহলে এক ব্যক্তির ওপরে, এক সাধারণ মানুষের ওপরে, এক লেখক ও কবির ওপরে, এক ‘কেউ-না এমন এক মানুষের ওপরে’ অবিচারের মাত্রাটা বুঝুন। বাকি বিচার এই সমাজের, সমাজই যেহেতু আছে বিচারকের ভূমিকায়।’