বাংলাদেশ ব্যাংকের বিবেচনায় সেরা ১০ ব্যাংক
Tweet
প্রথমবারের মতো দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সাসটেইনেবল রেটিং প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই তালিকায় বেসরকারি খাতের সেরা ১০ ব্যাংককে টেকসই ব্যাংকের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ইসলামি ধারার ব্যাংক রয়েছে তিনটি। বাকি সাতটি কনভেনশনাল ব্যাংক। সেরা টেকসই মর্যাদা পেয়েছে পাঁচটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানও।
মূলত চারটি সূচকের ওপর ভিত্তি করে এই মান যাচাই করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। টেকসই অর্থায়ন নির্দেশক (সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স ইন্ডিকেটর), সবুজ পুনঃঅর্থায়ন (গ্রিন রিফাইন্যান্স), সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম (সিএসআর) ও মূল ব্যাংকিং কার্যক্রমের টেকসই সক্ষমতা (কোর ব্যাংকিং সাসটেইনেবিলিটি)।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘ব্যাংকগুলোকে সুশাসন, শুদ্ধাচার ও সামাজিক দায়বদ্ধতা পালনে অনুপ্রাণিত করতে শীর্ষ ১০ ব্যাংকের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘সিএসআর ব্যয়, গ্রিন ফাইন্যান্স, কোর ব্যাংকিং কার্যক্রম, খেলাপি ঋণের হারসহ বেশকিছু সূচকের ভিত্তিতে সাসটেইনেবিলিটি রেটিং তৈরি করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, টেকসই কোর ব্যাংকিং সূচকের মধ্যে ব্যাংকগুলোর ঋণের মান, মূলধন পরিস্থিতি, এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রমকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সবুজ অর্থায়ন, ঋণগ্রহীতার সংখ্যা, গ্রামীণ অর্থায়ন, নারী ঋণগ্রহীতার সংখ্যা, কৃষিতে টেকসই অর্থায়ন, সবুজ অর্থায়নের ক্যাটাগরি ও প্রকল্পের পরিমাণ, ক্ষুদ্র ও অতিক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের অর্থায়ন, টেকসই অর্থায়নের ক্ষেত্রে খেলাপি ঋণ ইত্যাদি বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এর বাইরে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ সবুজ ব্যাংকিংয়ের চর্চাকেও এ মানদণ্ডের অন্যতম নির্ধারক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স বিভাগ গত সপ্তাহে টেকসই ব্যাংকের নাম প্রকাশ করেছে। সেখানে ক্রমতালিকা সাজানো হয়েছে আদ্যক্ষরের ভিত্তিতে। ফলে মানের দিক থেকে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় হয়েছে কোন তিনটি ব্যাংক তা জানা যায়নি।
টেকসই ১০-এর তালিকায় নাম থাকা ব্যাংকগুলো হচ্ছে—আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, ব্র্যাক ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, দি সিটি ব্যাংক ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক।
এ প্রসঙ্গে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘সেরা টেকসই ব্যাংকের তালিকায় মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক রয়েছে। এটা খুবই আনন্দের ব্যাপার।’ তিনি বলেন, ‘আমরা পরিবেশবান্ধব প্রকল্প, সৌরবিদ্যুৎসহ জলবায়ুর ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয় না—এমন প্রকল্পে অর্থায়ন করেছি।’ তার ব্যাংককে এই স্বীকৃতির জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ধন্যবাদ জানান তিনি।
এদিকে সেরা টেকসই মর্যাদা পাওয়া পাঁচটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান হলো হজ ফাইন্যান্স, আইডিএলসি ফাইন্যান্স, আইপিডিসি ফাইন্যান্স, সৌদি-বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচার ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড এবং ইউনাইটেড ফাইন্যান্স লিমিটেড।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স বিভাগের মহাব্যবস্থাপক খোন্দকার মোরশেদ মিল্লাত বলেন, ‘২০২০ সালের প্রতিষ্ঠানগুলোর পাঠানো তথ্য এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮টি বিভাগের তথ্যের যাচাই-বাছাই করে এই মান নির্ধারণ করা হয়েছে।’
জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ, অফ-সাইট সুপারভিশন বিভাগ, ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগের সহযোগিতায় সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স বিভাগ রেটিংটি তৈরি করেছে।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স বিভাগ থেকে দেশের সব তফসিলি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীদের প্রতি একটি সার্কুলার জারি করা হয়। এতে সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স পলিসির নির্দেশনা ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল) ভিত্তিতে সাসটেইনেবিলিটি রেটিং প্রণয়নের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়।
জানা গেছে, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মূল ব্যাংকিং কার্যক্রমের টেকসই সক্ষমতা নির্ধারণ করা হয়েছে মোট খেলাপি ঋণের হার, ঝুঁকিভারিত সম্পদের বিপরীতে মূলধনের অনুপাত, লিকুইডিটি কাভারেজ রেশিও, নেট স্টেবল ফান্ডিং রেশিও, কোর রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট, সম্পদের বিপরীতে আয়, ইকুইটির বিপরীতে আয়, নিট ইন্টারেস্ট মার্জিন ও এফিসিয়েন্সি রেশিওর মতো বিষয়গুলোর ভিত্তিতে।
এদিকে সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রমের ক্ষেত্রে শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য ও জলবায়ু ঝুঁকি তহবিলের অনুদানের অর্থ ব্যয়ের মতো বিষয়গুলোও বিবেচনায় এসেছে। পাশাপাশি সবুজ পুনঃঅর্থায়নের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর পারফরম্যান্স বিবেচনা করা হয়েছে বার্ষিক পুনঃঅর্থায়নের হার, খাত ও পণ্যভিত্তিক পুনঃঅর্থায়নের পাশাপাশি গ্রিন ট্রান্সফরমেশন ফান্ডের ডলার ও ইউরো কম্পোনেন্টের ভিত্তিতে।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সবুজ অর্থায়ন কার্যক্রম নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, গত বছরের ডিসেম্বর প্রান্তিক শেষে দেশের ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৬০৪ কোটি টাকা সবুজ অর্থায়ন করেছে অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড। তালিকায় এর পরের অবস্থানে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ (৫৯৫ কোটি টাকা), এক্সিম ব্যাংক (৫০২ কোটি), ব্র্যাক ব্যাংক (৪২১ কোটি), আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক (১৪২ কোটি), ব্যাংক এশিয়া (১২২ কোটি), আইএফআইসি ব্যাংক (১০৭ কোটি), এনআরবি ব্যাংক (৬৫ কোটি), মার্কেন্টাইল ব্যাংক (১৮ কোটি) ও বেসিক ব্যাংক (১৩ কোটি টাকা)।
এই ব্যাংকগুলো তাদের মোট বিতরণকৃত ফান্ডেড মেয়াদি ঋণের ১০ শতাংশের বেশি অর্থ সবুজ অর্থায়ন করেছে। আর আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে একমাত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ ইনফ্রাস্ট্রাকচারাল ফাইন্যান্স ফান্ড লিমিটেড (বিআইএফএফএল) বিতরণকৃত মোট ফান্ডেড মেয়াদি ঋণের ৫ শতাংশের বেশি অর্থ সবুজ অর্থায়ন করেছে।