সমুদ্র ছুঁয়ে নামবে প্লেন,রানওয়ের কাজ শেষ হলেই।
Tweet
দৃষ্টিনন্দন রূপে সাজছে কক্সবাজার বিমানবন্দর। আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিতে এরই মধ্যে নতুন টার্মিনাল ভবন, এয়ারফিল্ড গ্রাউন্ড লাইটিং সিস্টেম স্থাপনসহ কয়েকটি কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। শুরু হচ্ছে রানওয়ে সম্প্রসারণের কাজ। এটি শেষ হলে সমুদ্র ছুঁয়ে রানওয়েতে অবতরণ করবে প্লেন।
রোববার (২৯ আগস্ট) ভার্চুয়ালি রানওয়ে সম্প্রসারণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রানওয়ে সম্প্রসারণ হলে এ বিমানবন্দরে বোয়িং-৭৭৭ ও বোয়িং-৭৪৭ মডেলের প্লেনগুলো ওঠা-নামা করতে পারবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী শুক্রবার (২৭ আগস্ট) কক্সবাজার বিমানবন্দর পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের বলেন, কক্সবাজারকে আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষণা এর আগে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে কক্সবাজারে ছোট-বড় প্রায় ৭২টি উন্নয়ন প্রকল্প চলমান। এছাড়া রোহিঙ্গা ইস্যুটি আন্তর্জাতিক হওয়ায় এখানে দেশি-বিদেশি কর্মকর্তা ও পর্যটকও আসা-যাওয়া করেন।
‘দেশি-বিদেশি পর্যটকদের যাতায়াত সহজ ও আরামদায়ক করতে বিমানবন্দরটি আন্তর্জাতিক ও আধুনিকায়নের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছে বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। এখানে বিভিন্ন স্থাপনার কাজ শুরু হয়েছে। দ্রুততম সময়ে কাজ শেষ হলে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা সহজে কক্সবাজারে আসতে পারবেন। এতে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আরো গতিশীল হবে।’
বিমানবন্দর রানওয়ে সম্প্রসারণ প্রকল্পের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর মো. মাসুদুল হাসান জানান, গেলো ১১ আগস্ট রানওয়ে সম্প্রসারণের কাজ শুরু হয়েছে। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ৯ হাজার ফুট রানওয়ের সঙ্গে যোগ হবে আরো ১৭শ ফুট। এরই মধ্যে আড়াই শতাংশ কাজ শেষ করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘সিওয়াইডাব্লিউইবি’ ও ‘সিসিইসিসি’। এক হাজার ৫৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্ধারিত প্রকল্পটি শেষ করতে সময় লাগবে দুই বছর নয় মাস।
সূত্র জানায়, সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় আকাশপথে দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন করতে প্রধানমন্ত্রীর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এটি বাস্তবায়ন করছে বেবিচক।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সম্প্রসারিত হতে যাওয়া ১৭শ ফুট রানওয়ের মধ্যে ১৩শ ফুটই থাকবে সাগরের পানির মধ্যে। দেশে এই প্রথমবারের মতো সমুদ্রের ভেতরে ব্লক তৈরি করে রানওয়ে সম্প্রসারিত করা হবে। এ প্রক্রিয়ায় কাজ দেশে প্রথম। কক্সবাজার বিমানবন্দরের মহেশখালী চ্যানেলের দিকে ল্যান্ড রেক্লেমেশন প্রক্রিয়ায় সম্প্রসারিত হবে এ রানওয়ে।
কক্সবাজার বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক আল-মামুন ফারুক জানান, কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ করে এরই মধ্যে ৬ হাজার ৭৭৫ ফুট থেকে বাড়িয়ে ৯ হাজার ফুট দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ ১২০ ফুট থেকে ২০০ ফুটে উন্নীত করা হয়েছে। ২০১৭ সালে সম্প্রসারিত রানওয়েতে বোয়িং-৭৩৭ এ এসে উড়োজাহাজ উড্ডয়ন ও অবতরণের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে সময়ই এই বিমানবন্দরের রানওয়ে ৯ হাজার ফুট থেকে ১২ হাজার ফুটে উন্নীতকরণের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ‘কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ’ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।
জানা যায়, চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণে কাজ দেওয়া হয়েছে চীনা প্রতিষ্ঠানকে। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে কক্সবাজার বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পের চুক্তি সই হয়। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) সদর দফতরে বেবিচক কর্তৃপক্ষ ও চাংজিয়াং ইচাং ওয়াটারওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যুরো (সিওয়াইডব্লিউইবি)-চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন (সিসিইসিসি)-জেভির মধ্যে চুক্তি হয়। ৬ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় প্রকল্পটির অনুমোদন দেন। প্রকল্পের আওতায় রানওয়ে ছাড়াও ৫ হাজার ১শ ৭৯ কোটি টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার বিমানবন্দরে নতুন টার্মিনাল ভবন নির্মাণ ও এয়ারফিল্ড গ্রাউন্ড লাইটিং সিস্টেম স্থাপনের কাজ চলমান।
এদিকে পর্যটনশিল্পের সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্টরা জানান, বিমানবন্দরের কাজ শেষ হলে যোগাযোগ ব্যবস্থায় পর্যটকদের ভোগান্তি যেমন কমবে তেমনি কমে আসবে যাতায়াত খরচও।
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা বলেন, বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত ও রোহিঙ্গা ইস্যুর কারণে কক্সবাজার এখন সারা বিশ্বে পরিচিত। কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এখন খুবই জরুরি। বিমানবন্দর চালু হলে পর্যটনশিল্প আরো বিকশিত হবে। একই সঙ্গে কক্সবাজারে ইকনোমিক জোন বাস্তবায়ন হলে এখানে আসবেন ব্যবসায়ীরাও। এতে আমরা অর্থনৈতিক দিক থেকে আরো এগিয়ে যেতে পারবো।
তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইস পরিচালক আবদুল কাদের মিশু বলেন, বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকতের শহর কক্সবাজারকে বিশ্বমানের করে সাজাতে পারলে সমৃদ্ধ হবে পর্যটনশিল্প। এর একটি অন্যতম অনুষঙ্গ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এসব বাস্তবায়নে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের সহযোগিতাও নেওয়া যায়।