স্বামীর অপরাধে শিল্পার জীবন বিষাদময়
Tweet
বর্তমানে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো শকুনের মতো দৃষ্টি রেখেছে কুন্দ্রা পরিবারের ওপর। কারণ এই পরিবারেরই যে সবচেয়ে আলোচিত ব্যক্তিটি এখন জেলের ঘানি টানছেন। ২০০৯ সালের আগে এই ব্যক্তিটিকে ভারতের হাতে গোনা দুই একজন চিনলেও শিল্পা শেঠিকে বিয়ের পর তিনি সবার কাছে পরিচিত মুখ।
বলা হচ্ছে রাজ কুন্দ্রার কথা। পর্ন সিনেমা নির্মাণ ও প্রচারের সাথে জড়িত থাকার অপরাধে তাকে গ্রেফতার করে কারাগারে রাখা হয়েছে।
মূলত শিল্পাকে বিয়ের পর অখ্যাত যুবক রাজ হয়ে ওঠেন বি-টাউনের তারকা স্বামী। ভারতীয় গণমাধ্যমে শিল্পার নিউজের সাথে সাথে তার স্বামীর নিউজও থাকতো সমানে সমান। বলতে গেলে অভিনেত্রীকে বিয়ে করে সিনেমার হিরোর মতো তিনিও নায়ক বনে চলে যান।
শিল্পার সংসারে অর্থ, সূখ, শান্তির কোনো কমতি ছিলো না। বলতে গেলে বিয়ের পর রাজের সাথে তার জীবনের সেরা সময় উপভোগ করেছেন তিনি। বিয়ের পর একরকম অভিনয় ছেড়ে দিয়ে পুরোদস্তুর সংসারী এক নারী হয়ে ওঠেন। বলিউডের রঙিন পর্দা ছেড়ে স্বামীর মতো ব্যবসায়ী হওয়ার স্বপ্ন দেখেন এবং বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানও খুলতে শুরু করেন।
শিল্পার পরিচিতি আর রাজের টাকায় অল্পদিনেই তাদের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। আস্তে আস্তে তারাও হয়ে ওঠেন বলিউডের জনপ্রিয় তারকা পরিবার।
তবে শিল্পা শেঠি অভিনেত্রী থেকে ব্যবসায়ী হলেও রাজ কুন্দ্রা যে একজন জাত ব্যবসায়ী তার প্রমাণ তিনি দিয়েছেন ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ আইপিএলে। বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় এই ফ্রাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে শিল্পার একটি টিম ছিলো যার নাম রাজস্থান রয়েলস। যারা ২০০৮ সালে আইপিএলের ইতিহাসের প্রথম চ্যাম্পিয়ন। কিন্তু এই দলটিকেই ২০১৬ এবং ২০১৭ সালে নির্বাসিত করা হয় টুর্নামেন্ট থেকে। যার কারণ ছিলেন এই রাজ কুন্দ্রা।
তিনি আইপিএল বেটিং কেলেঙ্কারির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। জানা যায় বেটিং করতে রাজিও হয়েছিলেন তিনি। সেসময় আইপিএল স্পট-ফিক্সিং কেলেঙ্কারি নিয়ে দিল্লি পুলিশের তদন্ত চলাকালীন রাজ কুন্দ্রা স্বীকার করেছিলেন জুয়াড়ি ও তার ব্যবসায়িক পার্টনার বন্ধু উমেশ গোয়েঙ্কার মাধ্যমে বেটিংয়ের কথা, কিন্তু ফিক্সিং করেননি।
এরপর ২০১৫ সালে রাজ কুন্দ্রাকে আজীবন আইপিএল থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। তখন ফলে রাজের থেকে বেশি সমালোচনা হয় শিল্পা শেঠিকে নিয়ে। এমন কলংকিত ঘটনার জন্য ক্রিকেট দুনিয়ায় তাকে নিয়ে ও তার স্বামীকে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। তবে শিল্পা সবসময় অন্যায়কে অন্যায়ের চোখেই দেখেছেন। তাইতো রাজের ঐ আইপিএল কেলেংকারী নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে দোষীর শাস্তি দাবি করেন।
শিল্পা অভিনয় থেকে দূরে থাকলেও ছোট পর্দায় তার উপস্থিত ছিলো নিয়মিত। বিজ্ঞানের পাশাপাশি টেলিভিশনের জনপ্রিয় নাচের রিয়ালিটি শোগুলোতে তাকে বিচারকের আসনে নিয়মিত দেখা যেতো। যার ফলে অভিনয় থেকে দূরে থাকলেও তার জনপ্রিয়তায় কোনো ঘাটতি ছিল না। নিজের গ্ল্যামার, স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং মানবিক ব্যবহারের জন্য সবসময় তিনি ছিলেন ভক্তদের হৃদয়ে। টেলিভিশনের পর্দায় তার হাসি দেখলে যে কেউ তার জীবনের সুখ ও শান্তির পরিমাণ মেপে ফেলতে পারবে। কিন্তু মূহুর্তেই শিল্পার জীবনের সকল সূখ শান্তি যেনো চিরতরে হাড়িয়ে গেছে। যার কারণ তার সেই ব্যবসায়ী স্বামী রাজ কুন্দ্রা।
গত ১৯ জুলাই পর্ন ভিডিও তৈরি ও আপের মাধ্যমে তা ছড়িয়ে দেয়ার জন্য মুম্বাই পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। এরপর থেকেই শিল্পার জীবনে অন্ধকার নেমে আসে। সামজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্বামীর এমন কর্মের জন্য তাকে পড়তে হয় সমালোচনায়। সবাই প্রশ্ন তোলে স্বামীর এই ব্যবসায় শিল্পার সম্মতি নিয়ে। আর্থিকভাবেও কোটি কোটি টাকা ক্ষতির মুখে পড়েন শিল্পা। বাদ পড়েন অনেক প্রজেক্টের চুক্তি থেকে।
স্বামীর কর্মের জন্য সবাই তাকে পরিত্যক্ত করছে এখন। স্বামীর জন্য পুলিশ স্টেশন থেকে শুরু করে সবার কাছে প্রশ্নের সম্মুখীন তিনি। এসব বিষয় যেনো শিল্পার জীবনকে বিষাদময় করে তুলেছে।
যার প্রমাণ মিলেছে স্বামীর সাথে তার ঝগড়ায়। রাজ কুন্দ্রাকে গ্রেফতারের পর শিল্পার বাসায় তল্লাশি চালায় পুলিশ। সেখানেই রাজের সাথে বাকবিতন্ডে জড়িয়ে যান ‘ধড়কন’খ্যাত এই অভিনেত্রী। সবার সামনে রাজকে তিনি বলেন কি দরকার ছিলো এইসব সিনেমা নির্মাণের? তার কান্না ভেজা কণ্ঠে করা এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি রাজ।
শিল্পা ও রাজের পরিবারে এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। ছেলের নাম ভিয়ান রাজ কুন্দ্র আর মেয়ের নাম সমিশা শেঠি কুন্দ্র। নিজের সন্তানদের প্রতি শিল্পা সবসময় যত্নবান। বাবার কর্মকাণ্ডের কোনো প্রভাব যেন সন্তানদের উপর না আসে তার জন্য হাইকোর্টের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন শিল্পা। হাইকোর্টও শিল্পার এই আবেদনকে সম্মান জানিয়েছেন।
এদিকে রাজের কারণে শিল্পার জীবন যে তছনছ হয়ে গেছে তার প্রমাণ পাওয়া যায় বলিউড অভিনেত্রীর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গেলেই। শিল্পা ভক্তদের সামাজিক মাধ্যমে সবসময় যুক্ত থাকতে পছন্দ করতেন। নিজের ইউগা ভিডিওসহ সকল কাজের খবরাখবর প্রতিনিয়ত দিতেন। কিন্ত গত ২৩ জুলাইয়ের পর তাকে তার ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও টুইটার হ্যান্ডেলে আর কোনো পোস্ট দিতে দেখা যায়নি। বলতে গেলে শিল্পা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কোথাও কোনো পোস্ট দেননি। গত ২ আগস্ট এক স্ট্যাটাস দিয়ে ফিরে এসেছেন তিনি। সে স্ট্যাটাসে লিখেছেন তার স্বামীর কাণ্ড নিয়ে।
শিল্পার এমন পরিস্থিতির জন্য সবাই রাজকেই দায়ী করছেন। অনেকে শিল্পার পাশেও দাঁড়াচ্ছেন। তাদের মতে, স্বামীর অপরাধের শাস্তি শিল্পা কেন ভুগবেন?