নিঃসঙ্গ জাহাজই পর্যটকদের মূল আকর্ষণ?

Share on Facebook

বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থানের তালিকায় কক্সবাজার বা পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত শীর্ষে অবস্থান করছে। তবে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের আনোয়ারার পারকি সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য কোনো অংশেই কম নয়।
ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা এই সৈকতের সবুজ ঝাউবন, লাল কাঁকড়া ও নীলাভ জলরাশি যেন সর্বদা ভ্রমণকারীদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত।

পারকি সমুদ্র সৈকতের দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫ কিলোমিটার এবং প্রস্থ স্থানভেদে ৩০০-৩৫০ ফুট। স্থানীয়দের কাছে উপকূলীয় পার্কি সমুদ্র সৈকত ‘পারকির চর’ নামে পরিচিত।

কর্ণফুলী নদীর মোহনার পশ্চিম তীরে পারকি সমুদ্র সৈকত চট্টগ্রামের একটি অন্যতম পর্যটন এলাকা। নগরী থেকে সড়কপথে এই স্থানটির দূরত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার। যেতে লাগে ঘণ্টাখানেক।
তার পাশেই আছে সিইউএফএল ও কাফকো সার কারখানা ও পাহাড় সংলগ্ন কোরিয়ান ইপিজেড। ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ পারকি সমুদ্র সৈকতে আছে মনোমুগ্ধকর ঝাউবন। দীর্ঘ এক যুগ ধরে পারকি সমুদ্র সৈকতের নাম জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

প্রতিবছর শীত আসলে ওই বিচে পর্যটকের আনাগোনা মুখরিত হয়ে ওঠে। সাগরের গর্জন আর ঢেউয়ের মিতালী সঙ্গে সাগরের নীল পানি ও তীরের ঝাউবনের সৌন্দর্য একসঙ্গে উপভোগ করতে পারবেন সেখানে।

একইসঙ্গে সৈকতের বালুচরে লাল কাঁকড়ার ঘুরে বেড়ানোর দৃশ্য কিংবা দূরে গভীর সমুদ্রে ঘুরে বেড়ানো ও নোঙর করা ছোট-বড় জাহাজের সারি দেখতে পাবেন।

সমুদ্র সৈকতের সাথেই ঝাউবনের ছায়াতলে গড়ে উঠেছে খাবারের দোকানসহ অনেক দোকানপাট। এর সঙ্গে জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

এছাড়াও আছে সমুদ্রে ঘুরে বেড়ানোর জন্য স্পিডবোট, সমুদ্র তীরেই ঘুরে বেড়ানোর জন্য সি-বাইক আর ঘোড়া। এজন্য অবশ্য আপনাকে নির্দিষ্ট ভাড়া গুনতে হবে প্রতি ঘণ্টায়।

পারকি সৈকতের একটি বড় আকর্ষণ হলো একটি নিঃসঙ্গ জাহাজ। সৈকতে বেড়াতে আসা পর্যটকদের মাঝে দানবাকারের জাহাজকে ঘিরে আগ্রহের কমতি নেই। এই জাহাজের নাম ক্রিস্টাল গোল্ড। বীচে আসা মানুষের আকর্ষণের মূল বিন্দু থাকে জাহাজটি।

এ জাহাজটি জাপান থেকে ১৯৮৫ সালে আমদানি করা হয়। যার পরিবহন ক্ষমতা ৯ হাজার ২০৮ টন। ২০১৭ সালের ২৮ মে গভীর সাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের ফলে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মোরা ভয়াবহ রূপ নেয়। এর ফলে চট্টগ্রামে ১০ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত ঘোষণা করে আবহাওয়া অধিদফতর।

৩০ মে সকালে ঘূর্ণিঝড় মোরা চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করে। ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে প্রচণ্ড বাতাসে নোঙর ছিড়ে পারকি সমুদ্র সৈকতে আটকে পড়ে বিশাল আকারের মালবাহী জাহাজ ক্রিস্টাল গোল্ড।

জাহাজের মালিক পক্ষ অনেক চেষ্টা করেও কোনোভাবেই জাহাজটিকে সাগরে ভাসাতে পারেনি। পারেনি অন্যত্র সরিয়ে নিতেও। পরবর্তীতে ফোরস্টার এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান ১১ কোটি টাকায় আটকে পড়া জাহাজটি কিনে নেয়।

জাহাজটি কেটে নেয়ার জন্য পরিবেশ অধিদফতরে আবেদন করে। তবে ছাড়পত্র ছাড়া জাহাজ কাটার খবর পেয়ে ওই প্রতিষ্ঠানকে দুই কোটি টাকা অর্থদণ্ড করে পরিবেশ অধিদফতর।

১৯৯৫ সালের বর্জ ব্যবস্থাপনা আইন মোতাবেক জাহাজ কাটার জন্য ওই প্রতিষ্ঠানের কোনো ব্যবস্থা নেই। তা ছাড়া নির্দিষ্ট ডক ছাড়া জাহাজ কাটার কোনো নিয়মও নেই। ফলে সেই যাত্রায় বেঁচে যায় জাহাজটি।

একা ও নিঃসঙ্গ জাহাজটি কর্ণফুলী নদী আর চট্টগ্রাম বন্দরের যতই ক্ষতির কারণ হোক না কেন, দিন দিন বাঁধা পরতে থাকে মানুষের ভালবাসায়। একা নিঃসঙ্গ জাহাজটিই এখন দর্শনার্থীদের আকর্ষণের মূল কেন্দ্র।

কীভাবে যাবেন?

পতেঙ্গা ১৫ নাম্বার জেটি থেকে সহজের কর্ণফুলী পার হয়ে রিকশা বা সিএনজি নিয়ে সহজেই চলে যেতে পারেন পারকি বিচে। এছাড়াও আরেকটি উপায় আছে তা হলো, শাহ আমানত সেতু হতে বটতলী গামি বাসে চড়ে বসা।

বাস ভাড়া পড়বে ২৫-৩০ টাকা। বাস থেকে নেমে পরবেন সেন্টার নামক স্থানে। সেখান থেকে রিকশা বা সিএনজিতে জন প্রতি ২৫ টাকা ভাড়ায় পৌছে যাবেন পারকি বিচে।

Leave a Reply