বারবার মাথা ঘুরলে অবহেলা নয়, কী বলছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক?
Tweet
ঘন ঘন মাথা ঘুরলে অবহেলা নয়। সঠিক রোগটি খুঁজে বের করা জরুরি। সতর্ক করলেন এসএসকেএম হসপিটালের জেনারেল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. নীলাদ্রি সরকার। মাথা ঘোরা নিয়ে মাথা ব্যথা না করে, মাথা ঘোরার কারণ খুঁটিয়ে দেখা উচিত। এটি কোনও রোগ নয়, তবে ভিন্ন রোগের উপসর্গ।
মাথা নাড়লেই মাথা ঘোরে। কিছুক্ষণের জন্য একটু ঠিক, তারপর আবার হঠাৎ শুরু। যখন-তখন এমন হয়। যার মূলে থাকে কানের সমস্যা। এই রোগের নাম বিনাইন পারঅক্সিসমাল পজিশনাল ভার্টিগো। আমাদের কানের ভিতরে থাকা ওটোলিথ (Otolith) স্থান পরিবর্তন করলে এই রোগটি হয়। বিশেষ কিছু এক্সারসাইজ (epley maneuver) আছে, যা নিয়মিত করলে এই সমস্যা সেরে যায়।
মিনিয়ার ডিজিস
মাথা ঘোরা, সঙ্গে বমি ও শুনতে অসুবিধা হলে এক্ষেত্রেও দায়ী কান। এমন লক্ষণ থাকলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ইএনটির পরামর্শ নিন। সঠিক চিকিৎসা ও ওষুধের সাহায্যে রোগী ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন। এই সমস্যা মূলত অন্তঃকর্ণের সমস্যা।
ভারসাম্যহীন
অ্যাকিউট ভাইরাল সেরেবেলিটিস (acute viral ceraebellitis) হলেও বমি বমি ভাব ও মাথা ঘোরার মতো উপসর্গ লক্ষ করা যায়। আমাদের মস্তিষ্কে অবস্থিত সেরিবেলাম (cerebellum) শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করে। সেরিবেলামে ভাইরাল সংক্রমণ হলে রোগী মাথা ঘুরে বা ভারসাম্য হারিয়ে পড়েও যেতে পারেন। চিকিৎসকের পরামর্শ মতো অ্যান্টিবায়োটিক খেলে সমস্যা ঠিক হয়ে যায়।
স্পন্ডিলোসিস
স্পন্ডিলোসিস থেকে ঘাড়ে ব্যথার সমস্যায় এখন প্রায় সবাই আক্রান্ত। যার মূলে ঘাড় গুঁজে কাজ, এক্সারসাইজ না করা। এই রোগের উপসর্গ শুধু ব্যথা নয়, মাথা ঘোরাও একটি অন্যতম লক্ষণ। ঘাড়ে স্পন্ডিলোসিস হলে ঘাড়ের কাছ থেকে শিড়দাঁড়া ক্ষয়ে যায়। হাড়ের চাপ রক্তনালীতে পড়ে। ফলে মস্তিষ্কে রক্তের জোগান কমে যায়।যা থেকে মাথা ঘোরে। নিয়মিত যোগব্যায়াম বা নেক মাসেল এক্সারসাইজ করলে ধীরে ধীরে কমে যায়। তবে ছোটবেলা থেকে যোগার অভ্যাস করলে এই ধরনের রোগ প্রতিরোধ সম্ভব। যাঁরা অফিসে কম্পিউটারে কাজ করেন তাঁরা একভাবে টানা অনেকক্ষণ বসে কাজ করার অভ্যাস দ্রুত বদলান। কাজের ফাঁকে দু’তিন মিনিট একটু উঠে হাঁটাচলা করে তারপর আবার কাজে বসা উচিত।
অ্যাটাক
ট্র্যান্সিয়েনট ইসকেমিক অ্যাটাক (Transient ischemic attack) হলে মস্তিষ্কে বা মেরুদণ্ডে রক্তের জোগান কমে যায়। অনেক সময় স্ট্রোকের মতো উপসর্গ লক্ষ করা যায়, হঠাৎ মাথা ঘোরে। এর বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে যেমন ডায়াবেটিস, ধমনীতে কোলেস্টরল জমা এবং হাইপারটেনশন। ওজন, ডায়াবেটিস ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।
মানসিক চাপ
মাথা ঘোরার পিছনে অনেক সময় মানসিক কারণও থাকতে পারে। মানসিক চাপ সামলাতে না পেরে অনেকেরই এই সমস্যা হয়। সমাধান হল জীবনযাত্রাকে কঠোর অনুশাসনের মধ্যে রাখা।
ব্রেন টিউমার
অ্যাকস্টিক নিউরোমা (Acoustic Neuroma), ব্রেন টিউমার হলেও অনেক সময় বমি ও মাথা ঘোরার মতো উপসর্গ দেখা যায়, তবে সব সময় এটা হয় না। নির্ভর করে টিউমার কোথায় হয়েছে তার উপর।
ভয় পেলে
রক্ত দেখলে অনেকের মাথা ঘোরে ও অনেকে মূর্ছা যান। আচমকা ভয় থেকে ব্লাড প্রেশার কমে গিয়ে এমন সমস্যা হয়। এমন হলে আক্রান্তকে শুইয়ে দিয়ে পা দু’টি উপর দিকে তুলে দিলেই কিছুক্ষণের মধ্যেই সুস্থ হয়ে যাবে।