পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষের আজব আর অদ্ভুত কিছু খাদ্যাভ্যাস
Tweet
একজনের কাছে যা খাবার অন্যজনের কাছে সেটাই বিষ। প্রাচীন প্রবাদে এমনটাই বলে। আমরা সবাই একধরনের খাবার খাই না। যে খাবারগুলো আমাদের কাছে সবচেয়ে সুস্বাদু আর নিরাপদ বলে মনে হয়, শুধুমাত্র সেগুলোই আমারা খাই। ফলে ভিন দেশের মানুষরা অন্য যা কিছু খায় তা হয়তো আমাদের কাছে জঘন্য অথবা আজব খাবার বলে মনে হতে পারে। তবে নতুন ডিশ চেখে দেখতে যারা ভয় পান না, তারা ট্রাই করতে পারেন এই খাবারগুলো। তবে শর্ত একটাই ভয় পেলে চলবে না!!
• ফুগুঃ
মাছ দিয়ে তৈরি যে পদ আপনাকে মেরে ফেলতে পারে, তেমন পদ খাবার হিম্মত কি আপনার কিংবা আপনার পাকস্থলীর আছে?
জাপানে পাফার মাছ বা ফুগু মাছ দিয়ে তৈরি হয় সুস্বাদু একটি পদ। এই অদ্ভুত মাছে শরীরের কয়েকটি অংশ মারাত্মক বিষাক্ত। সেজন্য বিশেষভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত রাঁধুনি ছাড়া এই মাছ দিয়ে নিরাপদে খাওয়া যায় এরকম পদ রান্না করার ঝুঁকি নেন না কেউই। আর যদি কেউ নেন তবে দুর্ঘটনা ঘটবেই।
ব্যাঙের ঠ্যাংঃ
ফ্রান্সের কয়েকটা জায়গায় ব্যাঙের পা ভেজে পাউরুটির মধ্যে পুরে খাওয়ার চল আছে। বলা হয়, এর স্বাদ নাকি প্রায় মুরগির ডানার মাংসের মতো। শুধু ফ্রান্সে নয়, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের লুইসিয়ানা প্রদেশ এবং চিনেও এই খাবার বেশ জনপ্রিয়।
হ্যাগিসঃ
এটার জন্য প্রথমেই যেটা দরকার সেটা হলো একটা ভেড়া। সেটার কলিজা,ফুসফুস আর মেটে কুচি কুচি করে কেটে ওটমিল, পেঁয়াজ আর চর্বির সঙ্গে মেশানো হয়। তারপর সেই মিশ্রণটা ভেড়ার অন্ত্রের মধ্যে পুরে তিন ঘন্টা ধরে রান্না করা হয়। প্রতি বছর ২৫ জানুয়ারি স্কটল্যান্ডের অধিবাসীরা তাদের জাতীয় কবি রবার্ট বার্নস-এর সম্মানে ব্যাগপাইপ বাজায় আর তারপর হ্যাগিস থেকে খাবার বের করার আগে তাঁর লেখা কোনো কবিতা আবৃত্তি করে।
গিনিপিগঃ
পেরুসহ আন্দিজ পর্বতমালার বিভিন্ন অঞ্চলে ভীষণ জনপ্রিয় খাবার হলো ‘গিনিপিগ’।এই ছোট্ট লোমশ প্রাণীগুলোকে বাড়িতে পোষা হয়, আবার এগুলি বাজারে কিনতেও পাওয়া যায়। ভেজে বা ঝলসে খাওয়া হয় গিনিপিগের মাংস। এই মাংসে চর্বি খুব কম, কিন্তু পুষ্টি ভীষণ বেশি।
উইচেট্টি শূককীটঃ
জিভে জল আনা এই খাবার! এই বিশাল আকৃতির শূককীটগুলো কাঁচা কাঁচা অথবা গরম ছাইয়ের আঁচে পুড়িয়ে খাওয়া হয়। অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের মধ্যে এটা দারুণ জনপ্রিয় খাবার। বহুদিন ধরে এটা খাওয়ার প্রথা তাদের মধ্যে রয়েছে।
অন্যান্য ‘বুনো সুস্বাদু ‘পদের মধ্যে রেস্তোরাঁগুলোতে ভীষণ জনপ্রিয় হলো ক্যাঙারু, এমু পাখি আর গোয়ান্না ( টিকটিকি)জাতীয় প্রাণীর মাংস।
ইগুয়ানাঃ
ইগুয়ানা হলো বড়ো আকারের গিরগিটি বা টিকটিকি জাতীয় প্রাণী। এর ঝলসানো মাংস বা স্ট্যু খাওয়ার রেওয়াজ মধ্য আমেরিকার নানা অংশে দেখতে পাওয়া যায়।
• ভেড়ার চোখঃ
আরবি ভোজশালায় একটা গোটা ঝলসানো ভেড়া পরিবেশনের রেওয়াজ আছে।ঝলসানো ভেড়ার চোখের মণিদুটোও খাদ্যতালিকা থেকে বাদ যায় না।
অ্যালিগেটরঃ
আমেরিকার দক্ষিণ অঞ্চলের বিভিন্ন প্রদেশে এই বড়ো বড়ো আকারের সরীসৃপগুলো খাওয়ার চল আছে। এখন আর এগুলোকে বনে-জঙ্গলে বড়ো একটা দেখতে পাওয়া যায় না।এদের চামড়া আর মাংসের জন্য এদের খামারে প্রতিপালন করা হয়।
পঙ্গপালঃ
মরুভূমির পঙ্গপালরা বড়ো আকারের ঘাসফড়িং বই অন্য কিছু নয়। এগুলো ভেজে, ঝলসে, সেদ্ধ করে, এমনকি রোদে পুড়িয়ে খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে বেশ ভালো। এক কামড়েই এক একটা সাবাড় হয়ে যায়।
গাধার সালামিঃ
অধিকাংশ ইতালীয় সালামি তৈরি হয় শুয়োরের মাংস থেকে। তবে গাধা, ঘোড়া, ছাগলের মাংস দিয়ে সালামি তৈরির চলও আছে।
পাখির বাসার সুপঃ
ফিঙের মতো এক শ্রেণির পতঙ্গভুক পাখি হলো সুইফটলেট। তারা বোর্নিও-র গুহাসহ বিভিন্ন জায়গায় লালা দিয়ে তৈরি সুতোর সাহায্যে বাসা বানায় । সেই বাসা খাওয়া যায় এবং তা বেশ দামি খাবার।
ব্লাড স্যুপঃ
এক্সপেরিমেন্টাল ডিশ ট্রাই করার আদর্শ জায়গা হলো চিন। এখানে পাওয়া যায় রক্তের স্যুপ। তবে চিন্তা নেই এই স্যুপ মানুষের রক্ত দিয়ে বানানো হয় না। সাধারণত মুরগি,হাঁস বা শূকরের রক্ত ব্যবহার করা হয় এই স্যুপ তৈরিতে।
সেঞ্চুরি এগঃ
এবার অদ্ভুত কিছু না,এগুলো মুরগির ডিম। কি অবাক হলেন? ভাবছেন এতে আবার আজব কি হলো? অদ্ভুত তো কিছু আছেই,আর তা হলো এর রান্নার পদ্ধতিতে।এখানে ডিম রান্না করা হয় ছোটো বাচ্চার প্রস্রাবে।
এই ডিম কোথায় পাবেন তা কি জানেন? কোথায় আবার, চায়নাতে!
ব্যাপারটা হলো খাবার, পোশাক, ভাষা এসবই আমাদের সংস্কৃতি আর রীতিনীতির অংশ। ভাষার ক্ষেত্রে যেমন ‘এক দেশের বুলি, অন্য দেশের গালি’ কথাটা সত্য, ঠিক তেমনি খাবারের অদ্ভুত প্রকৃতিও সংস্কৃতির নিরিখে আপেক্ষিক। এমন তো হতেই পারে, যে খাবার যুগের পর যুগ ধরে সুস্বাদু আর লোভনীয় হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে আমাদের কাছে, তা অন্য কোনো দেশ বা সমাজের মানুষের কাছে অদ্ভুত! কাজেই, কোন খাবার, কোন সংস্কৃতি ঠিক কতটা অদ্ভুত বা আশ্চর্যজনক, এমন তর্ক-বিতর্কে বোধ হয় না যাওয়াই শ্রেয়।