কক্সবাজার নামের উপাখ্যান ও পর্যটন হালচাল
Tweet
কক্সবাজার বাংলাদেশর পর্যটনের রাজধানী শহর হিসেবে বিশেষভাবে পরিচিত। প্রশাসনিক রাজধানী শহর ঢাকা থেকে সড়ক পথে কক্সবাজারের দূরত্ব প্রায় চারশত একুশ কিলোমিটার। শিল্প নগরী চট্টগ্রাম হতে দেড়শত কিলোমিটার দক্ষিণে কক্সবাজার অবস্থিত। কক্সবাজার বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত প্রচলিত এই ধারণা ভুলে ভ’রা। কক্সবাজার বিশ্বের দীর্ঘতম (১২০ কিঃ মিঃ) নিরবচ্ছিন্ন প্রাকৃতিক বালুকাময় সমুদ্র সৈকত।
কোনো কোনো উৎস থেকে জানা যায় যে, ব্রাজিলের Praia do Cassino Beach ২১২ থেকে ২৫৪ কিলোমিটার দীর্ঘ। টেক্সাসের Padre Island ১৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ। আবার অস্ট্রেলিয়ার Ninety mile beach ঠিকঠিক নব্বই মাইল অর্থ্যাত ১৪৪ কিলোমিটার দীর্ঘ। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই নব্বই মাইল সমুদ্র সৈকত পর্যটকদের পছন্দের তালিকায় নাই কারণ এই সৈকত সুইমিং বা সার্ফিং কোনো খেলার জন্যেই উপযোগী নয়। অল্প সংখ্যক কিছু পর্যটক এখানে আসে শুধুমাত্র ছবি তোলার জন্য।
আধুনিক কক্সবাজার নামের সাথে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একজন কর্মচারির নাম জড়িত। যার নাম হিরাম কক্স (Hiram Cox)। কক্সবাজারের পূর্বনাম প্যানোবা (Panowa) যার আক্ষরিক অনুবাদ হচ্ছে হলুদ ফুল (Yellow Flower)। প্যানোবা’র অন্যনাম ছিল পালোংকী (Palongkee)।
ওয়ারেন হেটিংস বাংলার গভর্নর হয়ে আসার পর আরাকান শরনার্থী ও স্থানীয় রাখাইনদের মধ্যে শতবর্ষব্যাপী বিরোধ মোকাবেলা করার ক্যাপ্টেন কক্সকে পালোংকী ফাঁড়ির সুপারেনটেনডেন্ট হিসেবে নিয়োগ করেন। ক্যাপ্টেন কক্স উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের জন্য একটি বিশাল কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেন এবং তিনি এই কাজে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তার কাজ সম্পূর্ণ করার আগেই ১৭৯৯ সালে অকালে মৃত্যু বরণ করেন। এই পুনর্বাসন কাজে ক্যাপ্টেন কক্সের অবদান স্মরণ করে রাখার জন্যে মৃত্যুর পরে সেখানে তাঁর নামে একটি বাজার গড়ে তোলা হয়। সেই বাজারের নামই কক্সবাজার।
আরো পিছনে গেলে কক্সবাজারের ইতিহাসের সাথে মোঘল আমল জড়িত। মোঘল প্রিন্স শাহ সুজা আরাকান যাওয়ার পথে এই পাহাড়ি ভূখণ্ডের মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য দেখে মুগ্ধ হয়ে সেখানে রাত্রি যাপনের জন্যে তার সাথে থাকা সৈনিকদেরকে তাবু খাটানোর নির্দেশ দেন। কথিত আছে তাঁর সংগে থাকা একহাজার পালকি সেখানে রাত্রিযাপন করে তারপর থেকে সেই জায়গার নাম হয় ডুলাহাজরা। ডুলাহাজরা মানে একহাজার পালকি।
বর্তমানে ট্যুরিষ্ট ডেস্টিনেশন হিসেবে দেশীয় বাজারে কক্সবাজার একনম্বর। যদিও আন্তর্জাতিকভাবে কক্সবাজার এখনো তেমন পরিচিত বা জনপ্রিয় ডেসটিনেশন নয়। যথাযথ প্রচার প্রচারণার অভাবে কক্সবাজার এখনো বিশ্ব পর্যটন বাজারে অচেনা একটি নাম।
বাংলাদেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে সড়কপথে, আকাশপথে, জলপথে বা রেলপথে খুব সহজেই কক্সবাজার আসা যায়। বর্তমানে কক্সবাজারে পর্যটকেদের জন্যে আবাসন সমস্যা নাই বললেই চলে। এখানে একই সময়ে একই সাথে একলক্ষ পর্যটক রাত্রি যাপন করতে পারে যা একটি পর্যটন শহরের আবাসন শক্তি হিসেবে যথেষ্টই বলা যায়।
আধুনিক কক্সবাজার জেলার বর্তমান আয়তন ২৪৯২ বর্গ কিলোমিটার যার উত্তরে চট্টগ্রাম জেলা আর পুর্বে বান্দরবান জেলা অবস্থিত আর দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকে বঙ্গোপসাগর। এই জেলার মোট থানা সংখ্যা ৮। যথা- চকরিয়া, কক্সবাজার সদর, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, রামু, টেকনাফ, উখিয়া ও পেকুয়া।