বন্ধ হয়ে যাচ্ছে চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি কোর্সটি

Share on Facebook

টেকসই পর্যটন উন্নয়নে এবং পর্যটন শিল্পে দক্ষ জনশক্তির অভাব পূরণের লক্ষ্যে ডিপ্লোমা পর্যায়ে বাংলাদেশের পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটগুলোতে  চালু করা হয়েছিল ডিপ্লোমা ইন ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি নামে এ কোর্সটি।

২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে বাংলাদেশ  শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন  বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ডিপ্লোমা ইন ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি কোর্সটি চালু হয়। বর্তমানে এটি ৫ টি সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট (বগুড়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, বরিশাল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, কক্সবাজার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, ঢাকা মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এবং সাতক্ষীরা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট) ও একটি বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে (ম্যানগ্রোভ ইনস্টিটিউট অফ সাইন্স এন্ড টেকনোলজি) চালু রয়েছে।

আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত গড়ে উঠছে ৪ / ৫ তারকা মানের হোটেল ও রিসোর্ট। বিনিয়োগ করছে  আন্তর্জাতিক চেইন হোটেল গ্রুপগুলো। এছাড়াও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর বাংলাদেশে প্রতিবছর ঘুরতে আসছে হাজার হাজার বিদেশি পর্যটক। সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন কর্মক্ষেত্র। প্রয়োজন হচ্ছে দক্ষ জনশক্তির। ২০১৯ সালের প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ট্র্যাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিলের প্রতিবেদন অনুসারে, বৈশ্বিক জিডিপিতে ভ্রমণ ও পর্যটনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অবদান ছিল ৮.৯ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার (যা ছিলো গ্লোবাল জিডিপির ১০.৩%)। পাশাপাশি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছিল ৩৩০ মিলিয়ন, যা কি-না ছিলো প্রত্যেক ১০টি নতুন কর্মসংস্থানের মধ্যে একটি। গবেষণায় উঠে এসেছে ২০২৯ সালের মধ্যে নতুন করে ২.১% হারে ১৫,৪০,৬০,০০০ নতুন কাজের সৃষ্টি করবে পর্যটন।

প্রতিবেদনটিতে বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা হয়েছে, দেশে এ মুহূর্তে ১১ লাখ ৩৮ হাজার ৫০০ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পর্যটন খাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ২০২৬ সালে বাংলাদেশে শুধু এ খাতে প্রত্যক্ষভাবেই ১২ লাখ ৫৭ হাজার লোক কাজ করবে। এ লক্ষ্যে পর্যটনশিল্পের অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৪ হাজার ৩২ কোটি  টাকা। ২০২৫ সালের মধ্যে পর্যটনশিল্পের সর্বোচ্চ বিকাশে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। যার অংশ হিসেবে পুরো দেশকে আটটি পর্যটন জোনে ভাগ করে প্রতিটি স্তরে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে।

পর্যটনের মতো বিশাল সম্ভাবনাময় এই ক্ষেত্রটিকে আরো একধাপ এগিয়ে নিতে সরকারের নিজ উদ্যোগে চালু কারা হয়েছিল এই শিক্ষাক্রমটি। ৪বছর মেয়াদি এই কোর্সটিতে শিক্ষার্থীদের হাতে কলমে শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে উপযুক্ত ভাবে গড়ে তোলা হয়। সদ্য ২০১৬-১৭ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা সাফল্যের সাথে এই কোর্সটি  সম্পন্ন করার গৌরব অর্জন করেছেন এবং কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করেছেন। বর্তমান মোট চারটি ব্যাচ এই কোর্সটিতে অধ্যায়নরত রয়েছে। কিন্তু অত্যান্ত দুঃখের বিষয় গত ০১/০১/২০২২ তারিখে শিক্ষামন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের ওয়ার্কশপে কোর্সটি বন্ধের মৌখিক ঘোষণা হয়। এবং ০৪/০১/২০২২ তারিখে বাংলাদেশ কারিগরি বোর্ড কতৃক প্রকাশিত ২০২১ ভর্তি নীতিমালায় ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি কোর্সটিকে বাদ দিয়ে ২০২১ ভর্তিনীতিমালা প্রকাশ করা হয়।

একটি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় “যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে না পারায় এই কোর্সটি বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে”। যা এই কোর্সটিতে অধ্যয়নরত সহস্রাধিক শিক্ষার্থীদের মনে চরম হতাশার জন্ম দিয়েছে। এ ব্যাপারে কক্সবাজার পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি বিভাগের ৬ষ্ট পর্বের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষার্থী জানিয়েছেন “ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি একটি অত্যান্ত সম্ভাবনা সাব্জেক্ট। দেশে অভ্যন্তরে এবং দেশের বাইরে এই সাব্জেক্টির প্রচুর চাহিদা রয়েছে। এই সেক্টর বাংলাদেশে প্রতিবছর নতুন নতুন কর্মক্ষম সৃষ্টি হচ্ছে। এমতাবস্থায় বোর্ড কর্তৃক এমন বিরূপ সিদ্ধান্ত গ্রহণ আমাদের ব্যপকভাবে হতাশাগ্রস্ত করেছে”।

বগুড়া পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি বিভাগে ৬ষ্ঠ পর্বে অধ্যায়নরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষার্থী জানিয়েছেন- “কোর্সটি চালু হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন ভাবে বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছিল অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীরা। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রশিক্ষিত শিক্ষকের অভাব গোড়া থেকেই ছিল,সেই সাথে ব্যবহারিক সক্ষমতার দিকটি বিভিন্নভাবে শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন শিক্ষা কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

বিভিন্ন সময়ে এই বিষয়গুলো বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড,কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন জায়গাতে উত্থাপিত হলেও সুস্পষ্ট কোনো সমাধান পায়নি শিক্ষার্থীরা।সেই সাথে কোন নীতিমালা ভুক্ত না হওয়ায় অনেকটা অস্পষ্টতায় ভুগছিল শিক্ষার্থীরা।

সদ্য কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কোর্সে জনবল নিয়োগের বিষয়টি সকলের দৃষ্টিগোচরে এলে দেখা যায় বাদ পড়েছে ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি কোর্স। জনবল নিয়োগ তো দূরের কথা অস্তিত্ব নিয়ে সংকটে পরেছে কোর্সটি। জনবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি গুলোতে প্রথমদিকে ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি শিক্ষাক্রমের শিক্ষার্থীদের সুযোগ থাকলেও সংশোধিত বিজ্ঞপ্তিতে বাদ দেওয়া হয়,যা নজীরবিহীন বৈষম্যের শামিল। আমাদের দেশের প্রায় ৯টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের বিষয়ের উপর উচ্চশিক্ষার সুযোগ রয়েছে। এদের মধ্যে কি একটিতেও আমাদের সুযোগ দেওয়া যেত না? যেখানে বাংলাদেশ ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটিতে গ্রাজুয়েশন,পোস্ট গ্রাজুয়েশন,পিএইচডি করার সুযোগ রয়েছে,সেখানে উচ্চ শিক্ষার বিষয়ে নিরুৎসাহিত করার বিষয়টি আসলেই হতাশাজনক।

 

জয়দেব রায়,

৬ষ্ঠ পর্ব,

বগুড়া পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট

Leave a Reply