বলেশ্বর নদী ও এর মোহনা অঞ্চল ইলিশের নতুন প্রজনন এলাকা চিহ্নিত
Tweet
দেশের দক্ষিণাঞ্চলে বলেশ্বর নদী ও এর মোহনা অঞ্চলের প্রায় সাড়ে সাত হাজার বর্গকিলোমিটার জুড়ে ইলিশের নতুন প্রজনন এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে।
গত সোমবার রাজধানীতে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বাস্তবায়নাধীন ইলিশ গবেষণা জোরদারকরণ প্রকল্পের আওতায় ইলিশের প্রজনন ক্ষেত্র সংরক্ষণ বিষয়ক এক কর্মশালায় এ তথ্য তুলে ধরা হয়।
নতুন এই অঞ্চল বলেশ্বর নদীর প্রায় ৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকায় বিস্তৃত। এই অঞ্চলকে পঞ্চম প্রজনন ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করা প্রস্তাব করা হয়েছে।
স্বীকৃতি পেলে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণায় এটি হবে ইলিশ প্রজননের পঞ্চম ক্ষেত্র।
এর আগে আরও চারটি এলাকা মায়ানী-মীরসরাই, পশ্চিম সৈয়দ আওলিয়া পয়েন্ট-তজুমুদ্দিন, গন্ডামারা-বাঁশখালী এবং লতা চাপালি কলাপাড়ার মোহনা অঞ্চলে প্রজনন এলাকা চিহ্নিত হয়েছে।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ইলিশ গবেষণা জোরদারকরণ প্রকল্পের পরিচালক এম এ বাশার জানান, ইলিশ গবেষণা জোরদারকরণ প্রকল্পের আওতায় ২০১৮-২০২১ মেয়াদে বলেশ্বর নদীতে ইলিশ মাছের প্রজনন ক্ষেত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইনস্টিটিউটের ইলিশ বিজ্ঞানীরা গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
“গবেষণায় জাটকার প্রাচুর্য, পানির ভৌত-রাসায়নিক গুণাগুন, ‘প্লাংকটন’, ‘গাট কনন্টেট’, মাছের শ্রেণি, দৈর্ঘ্য, প্রতি ইউনিটে মাছ ধরার প্রচেষ্টা, প্রজননোত্তর ইলিশের হার পর্যবেক্ষণ করা হয়।”
বলেশ্বর নদী ও এর মোহনা অঞ্চলে পানির গুণাগুন ইলিশের প্রাকৃতিক প্রজননের জন্য অনুকূলে রয়েছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে বলে বাশার জানান।
কর্মশালায় বলা হয়, বলেশ্বর নদীর মোহনা অঞ্চল ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নদীটির মোহনা অঞ্চল ‘হাব’ (কেন্দ্রস্থল) আকারে বিস্তৃত। এই হাব দিয়ে বলেশ্বর ছাড়াও বিষখালী, পায়রা, আন্ধারমানিক ও লতাচাপালী নদীতে ইলিশসহ অন্যান্য মাছ বঙ্গোপসাগর থেকে নদীর উজানে প্রবেশ করে। এই নদীর পূর্ব অংশে সুন্দরবনের নদী ও খালসমূহ (ভোলা নদী, বেতমোরি গাঙ, সুপতি খাল, দুধমুখী খাল ও ছোট কটকা খাল) সংযুক্ত রয়েছে। বলেশ্বর নদী হয়ে ইলিশসহ অন্যান্য মাছ এসব খাল ও নদীতে প্রবেশ করে।
প্রস্তাবিত প্রজনন এলাকার মধ্যে বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার বগী বন্দর থেকে পক্ষীরচর সংলগ্ন পয়েন্ট পর্যন্ত এবং পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা থেকে পটুয়াখালীর (বরগুনা জেলার সীমানা সংলগ্ন) কলাপাড়া উপজেলার লতাচাপালী ইউনিয়নের লেবুর বাগান পয়েন্ট পর্যন্ত বিস্তৃত বলে কর্মশালায় জানানো হয়।
কর্মশালার তথ্যে আরও উঠে আসে, গবেষকরা তাদের তিন বছরের গবেষণালদ্ধ ফলাফল অনুযায়ী প্রস্তাবিত প্রজনন এলাকায় বছরওয়ারী ডিমওয়ালা মাছ যথাক্রমে ৬৫, ৬৯ এবং ৫১ শতাংশ, ডিম ছাড়ারত মাছ যথাক্রমে ৪৯, ৫৫ এবং ৪৩ শতাংশ এবং ডিম ছেড়ে দেওয়া মাছ যথাক্রমে ৪৫, ৫০ এবং ৪০ শতাংশ নির্ণয় করেন। এছাড়াও প্রজননোত্তর ইলিশ মাছের হার যথাক্রমে ৪৫, ৫০ এবং ৪০ শতাংশ শনাক্ত করা হয়। একইভাবে নিষিক্ত ডিম যথাক্রমে ৩ হাজার ৮২২, ৪ হাজার ৫০৮ এবং ২ হাজার ৬৬৬ কেজি নিরুপণ করা হয়।
প্রকল্প পরিচালক এম এ বাশার জানান, ইলিশসহ অন্যান্য মৎস্যসম্পদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে বলেশ্বর নদীতে প্রজনন ক্ষেত্র দ্রুত ঘোষণা করা প্রয়োজন। বলেশ্বর নদী ও মোহনা অঞ্চল প্রজনন ক্ষেত্র ঘোষণা ও সুরক্ষা করা হলে প্রতিবছর অতিরিক্ত প্রায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন অধিক ইলিশ উৎপাদিত হবে; যার বাজর মূল্য প্রায় ২৬৪ কোটি টাকা।
ইলিশের প্রজনন ক্ষেত্র সংরক্ষণ বিষয়ক এই কর্মশালায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, এই মন্ত্রণালয়ের সচিব মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী, মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খ. মাহবুবুল হক।
সভায় সভাপত্বিত করেন বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট মহাপরিচালক ইয়াহিয়া মাহমুদ।
কর্মশালার মূল প্রবন্ধ উপস্থান করেন ইলিশ গবেষক ড. মোহাম্মদ আশরাফুল আলম