ইলেক্ট্রোলাইট পানীয়র উপকারিতা

Share on Facebook

ঘরেই তৈরি করতে পারেন ইলেক্ট্রোলাইট পানীয়ঃ

শরীরের তাপমাত্রা ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, মেজাজ ভালো করা, স্মৃতিশক্তি বাড়ানো ইত্যাদি নানাবিষয়ের মূলে আছে শরীরের আর্দ্রতা বজায় রাখা, অর্থাৎ পর্যাপ্ত পানি পান করা।

তবে সেই পানিতে ‘ইলেক্ট্রোলাইট’ যোগ করলে উপকারিতা কী বাড়ে?

স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে জানানো হল এই বিষয়ে বিস্তারিত।

ইলেক্ট্রোলাইট কী?

এটি খনিজ উপাদানের সমষ্টি। যা পানিতে দ্রবীভূত হয়ে বৈদ্যুতিক শক্তি বহন করে।

দৈনিক যে খাবার ও পানীয় আমরা গ্রহণ করি সেখানে থেকেই শরীর ‘ইলেক্ট্রোলাইট’য়ের যোগান পায়।

যে খনিজগুলো থেকে এই উপাদান পাওয়া যায় সেগুলো হলো পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম।

শরীরের বিভিন্ন দৈনন্দিন কাজ সম্পন্ন করতে ব্যবহার হয় এই ‘ইলেক্ট্রোলাইট’। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল শরীরে পানি ও অম্ল-ক্ষারের ভারসাম্য বজার রাখা, বিভিন্ন কোষের মধ্যে পুষ্টি উপাদান পৌঁছে দেওয়া এবং সেখান থেকে বর্জ্য অপসারণে সহায়তা করা, স্নায়ু, পেশি, হৃদযন্ত্র ও মস্তিষ্কের কার্যক্রম অক্ষুণ্ন রাখা এবং ক্ষতিগ্রস্ত কোষের ক্ষয়পূরণ করা।

শরীরচর্চার শক্তি যোগাতে ‘ইলেক্ট্রোলাইট’ যুক্ত পানীয় বেশ জনপ্রিয়। কারণ শারীরিক পরিশ্রম এবং ঘামের কারণে দেহ থেকে এই উপাদান বেরিয়ে যায়। আর শরীরকে কর্মক্ষম রাখতে হলে একটি নির্দিষ্ট মাত্রার ‘ইলেক্ট্রোলাইট’ থাকতেই হবে।

হাঁটা, শ্বাস-প্রশ্বাস, হাসি এমনকি চিন্তা করার জন্যও ‘ইলেক্টোলাইট’ প্রয়োজন।

যেভাবে পানিতে মেশানো হয়
পানিতে বিদ্যুতায়িত সোডিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়াম মিশিয়ে তৈরি হয় ‘ইলেক্ট্রোলাইট ওয়াটার’। ‘মিনারেল ওয়াটার’ ও ‘অ্যালকালাইন ওয়াটার’ নামেও এটি পরিচিত।

উপকারিতা

শক্তি যোগায়: শরীরচর্চার সময় ঘামের সঙ্গে যে পানি বেরিয়ে যায় তা পূরণ করতে বাড়তি তরল গ্রহণ করতে হয়। শরীরের স্বাভাবিক পানির মাত্রা থেকে এক বা দুই শতাংশ কমে গেলেই শক্তি কমতে থাকে। ঘামের সঙ্গে সোডিয়াম, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ‘ইলেক্ট্রোলাইট’ও বেরিয়ে যায়।

তাই শরীরচর্চার সময় ‘ইলেক্ট্রোলাইট’ মিশ্রিত পানি পান করলে শরীর অবসাদগ্রস্ত হবে না। হৃদযন্ত্র, মস্তিষ্ক, পেশি ও শরীরের অন্যান্য কার্যক্রম সক্রিয় থাকবে।

‘হিট স্ট্রোক’য়ের ঝুঁকি কমায়: গ্রীষ্মের প্রচণ্ড গরমে বাইরে চলাফেরার সময় রোদে ত্বক পুড়ে যাওয়া থেকে ‘হিট স্ট্রোক’ পর্যন্ত সব ঝুঁকিই থাকে। ত্বকের লোপকূপ আর ঘামের মাধ্যমে শরীর তাপমাত্রার ভারসাম্য বজায় রাখে। তবে অতিরিক্ত গরমের কাছে শরীরের এই জৈবিক প্রক্রিয়া হার মানতে পারে। আর তখনই নানান ঝুঁকির সৃষ্টি হয়। এ সময় প্রচুর পানি পানের মাধ্যমে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, সঙ্গে ‘ইলেক্ট্রোলাইট’ থাকলে আরও ভালো।

তবে চা, কফি ইত্যাদি ‘ক্যাফেইন’যুক্ত পানীয় এক্ষেত্রে সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়।

রোগ নিরাময়ে সহায়ক: ডায়রিয়া, বমি ইত্যাদি সমস্যায় শরীর প্রচুর পানি ও ‘ইলেক্ট্রোলাইট’ হারায়। তাই এসময় প্রচুর পানি ও তরল খাবার গ্রহণের মাধ্যমে ক্ষয়পূরণ করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।

অন্যান্য পানীয় ও তরল খাবারের পাশাপাশি এসময় ‘ইলেক্ট্রোলাইট’ সমৃদ্ধ পানি পান করাও হবে বেশ উপকারী। তবে মনে রাখতে হবে শুধু ‘ইলেক্ট্রোলাইট’ মিশ্রিত পানি কিংবা পানীয় এসময় যথেষ্ট নয়।

স্নায়বিক কার্যক্রমে ভূমিকা: শরীরের আর্দ্রতা সামান্য কমলেই মস্তিষ্কের জ্ঞানীয় ক্ষমতা, মনযোগ, সতর্কতা ইত্যাদি দুর্বল হতে থাকে। সোডিয়াম স্নায়ুকোষে বৈদ্যুতিক শক্তি সৃষ্টি করে যা বিভিন্ন স্নায়ুর মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য প্রথম ধাপ।

পটাসিয়ামের কাজ হল স্নায়ুকোষকে ‘নিউট্রালাইজ’ করা বা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যাতে সেখানে পুনরায় বৈদ্যুতিক শক্তি সৃষ্টি হতে পারে।

ম্যাগনেসিয়ামের কাজ হল এই বৈদ্যুতিক শক্তির সঞ্চালন নিরবিচ্ছিন্ন রাখা।

ঘরেই যেভাবে ‘ইলেক্ট্রোলাইট’ সমৃদ্ধ পানি তৈরি করা যায়

একটি বড় গ্লাসে এক চা-চামচের এক চতুর্থাংশ পরিমাণ লবণ, একই পরিমাণ লেবুর রস, দেড় কাপ নারিকেল পানি আর দুই কাপ সাধারণ পানি একসঙ্গে মিশিয়ে নিলেই তৈরি হয়ে গেল ‘ইলেক্ট্রোলাইট’ সমৃদ্ধ পানীয়।

স্বাদ বাড়াতে তাতে যোগ করতে পারেন মধু।

Leave a Reply