নিউইয়র্ক টু ফ্লোরিডা ভ্রমণ প্রথম পর্ব
Tweet
ফ্লোরিডা বেড়াতে যাবার ইচ্ছা কিছুদিন ধরে মাথার মধ্যে কিলবিল করছিলো। ইচ্ছা আবার কিভাবে কিলবিল করে আমি জানিনা, সবাই এভাবে বলে তাই আমিও বললাম।
কৌতূহল বশতঃ অনলাইনে বিমানের টিকিটের দাম চেক করা শুরু করলাম। দেখলাম, লাগুয়ারডিয়া এয়ারপোর্ট থেকে মায়ামি এয়ারপোর্ট পর্যন্ত রাউন্ড ট্রিপ জনপ্রতি ৫৬০ ডলার পর্যন্তও আছে। এয়ারলাইন্সভেদে এবং ভ্রমনের দিন, তারিখ ও সময়ের উপর নির্ভর করে দাম উঠানামা করে। হঠাৎ চোখ পড়লো Spirit Airlines এর উপর। নিজের চোখকে বিশ্বাস হচ্ছে না, ওয়ান ওয়ে মাত্র ২২ ডলার, আর মেম্বার হলে আরো কম, ১৭ ডলার।
আমি কি ভুল দেখছি! কিন্তু ভ্রমণের তারিখটা একটু এদিক-ওদিক করলে ধুম করে দাম বেড়ে দেড়শো-দু’শো ডলার হয়ে যাচ্ছে, হিসাবটা ঠিকমত বুঝতে পারছি না। আবার রাউন্ড ট্রিপ হলে ফেরার সময় ১৫০ ডলার দেখায়। কমদামে যাবো কিন্তু বেশী দামে আসবো মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। ভাবলাম বুদ্ধি বের করতে হবে, আমেরিকান বুদ্ধিতে কাজ হবে না, বাঙালী বুদ্ধি কাজে লাগাতে হবে।
দেখলাম ঐ ২২ ডলারেই আমার কাঙ্খিত তারিখের একদিন পরে মায়ামী টু নিউইয়র্ক ফ্লাইট আছে। গুল্লি মারি রাউন্ড ট্রিপ, যাওয়া এবং আসা উভয় দিকেই ২২ ডলার করে ওয়ান ওয়ে কেটে ফেললাম। অনলাইনে ক্রেডিটকার্ডে পে করার পরে ভাবছি সত্যি সত্যি ২২ ডলারে বিমানে চড়তে দেবে তো! নাকি ভিতরে ঢোকার পরে বলবে যে ২২ ডলার ছিলো শুধু বিমানের ভিতরটা দেখার জন্য, ফ্লাই করতে হলে আলাদা টাকা লাগবে।
আমার বাসা থেকে লাগুয়ারডিয়া এয়ারপোর্ট মাত্র ২ মাইল পথ। উবার কল করে ২ মাইল পথ যেতে লাগলো ২০ ডলার, সেই সাথে ৫ ডলার টিপস দিয়ে হলো ২৫ ডলার খরচ। উবার কার থেকে নামতে নামতে ভাবছি বাসা থেকে এয়ারপোর্ট ২ মাইলের পথ আসতে লাগলো ২৫ ডলার, অথচ ১ হাজার তিনশ মাইল পথ যাবো মাত্র ২২ ডলারে ! আল্লাহ্ জানে কী দিয়ে কী করলাম!
এয়ারপোর্টে ঢোকার আগেই অনলাইনে চেকইন করে রেখেছি কাজেই বেশী ঝামেলা ছাড়াই চলে গেলাম সিকিউরিটি চেক পয়েন্টে। চেকিং কারে বলে! আফগানিস্থান থেকে আসার সময়ও মনে হয় কোথাও এতো কড়া চেকিং হয় না। জামা-জুতো খুলে স্ক্যানিং মেশিনের মধ্যে দুইহাত উঁচু করে দাড়িয়ে ভাবছি স্ক্যানিং মনিটরে কি ছবি উঠছে আমি তার কি জানি!
স্ক্যানিং পার হয়ে গেটে গিয়ে বসলাম। পাশে কয়েকটা ফাস্টফুডের দোকান রয়েছে। একবার ভাবলাম কিছু খাবার কিনে নিয়ে উঠি, চিবুতে চিবুতে যাওয়া যাবে। আবার মনে হলো বিমানের ভিতর তো খাবার দিবেই খামাখা দরকার কি! বোর্ডিংয়ের সময় হয়ে গেলো। বিমানের গেটে সুন্দরী দু’জন বিমানবালা মিষ্টি হেসে অভ্যর্থনা জানালো, সবকিছুই তো ঠিক আছে, মনে মনে খুশিই লাগছে।
বিমানের ভিতরটা দেখছি বেশ বড়, অনেক যাত্রী, আজকের সব যাত্রীই কি আমার মতো ২২ ডলারের মাল ! ধুর! এতো কিছু ভেবে কি হবে, বসে পড়লাম আমার সিটে। কোনো সিটের পিছনেই এ্যামিরাত- কাতার এয়ারলাইন্সের মতো টিভি স্ক্রিন নাই, গান শোনার ব্যবস্থাও তো দেখলাম না, এই টাকায় বসার জায়গা দিয়েছে এটাইতো অনেক।
আমার সামনের সিটে এসে বসলেন একজন স্প্যানিশ মহিলা। তার সাথে আছে আরো দুজন কিশোর। মহিলা এমন ফুংফাং ভাব করছেন, বকবক করছেন, দেখে মনে হলো উনি হয়তো এই বিমান কোম্পানির মালিক। গাঁ থেকে ভেড়ার লোমের মত জ্যাকেটটা খুলে সিটের পিছনে ঝুলিয়ে দিলেন অর্থাৎ আমার নাকের ডগায়। জ্যাকেটটা আমার নাকের সামনে থেকে সরানোর জন্য উনাকে বলবো নাকি কোনো একজন ক্রুকে বলবো দ্বিধায় পড়ে গেলাম। শেষমেশ সাহস করে বলেই ফেললাম জ্যাকেট সরানোর কথা। মহিলা কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আস্তে করে সেটা সরিয়ে নিলেন।
যদিও বাসা থেকে খেয়ে বেরিয়েছি কিন্তু বিমানে চড়লেই আমার ক্ষুধা লাগে। দেখি কিছুক্ষণের মধ্যেই খাবার ট্রলি নিয়ে বিশাল দেহী দুইজন কৃষ্ণাঙ্গ ভাই এগিয়ে আসছে। ভেবেছিলাম আজকে খেয়েই ভাড়ার ২২ ডলার উসুল করে নেবো, মায়ামী যাবো ফ্রি। কিন্তু সেই আশায় গুড়ে বালি। সবকিছুই পকেটের পয়সায় কিনে খেতে হবে। বাংলায় একটা প্রবাদ আছে “ফেলো কড়ি-মাখো তেল”। সোডা ক্যান, পানি, কফি এসব সাড়ে তিন ডলার করে। স্ন্যাকস, চকলেট, বিস্কুট সবই আছে ভিন্ন ভিন্ন অফার। স্ন্যাকস প্যাকেজ ডিলও আছে। ৭ ডলারে ১ বোতল পানি আর ছোট একটা চিপস নিলাম। বিমান ছাড়লো, বাকি অভিজ্ঞতা বলার কিছু নাই, আপনাদের সবারই জানা আছে। মায়ামী পৌছাতে লাগলো তিন ঘন্টা দশ মিনিট। এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়েই দেখি বাইরে গরম, মনে হলো যেনো বাংলাদেশে চলে এসেছি। সে অভিজ্ঞতা পরের পর্বে বলবো। (চলবে)
মো. তরিকুল ইসলাম মিঠু
নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র